ঢাকাঃ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা ও অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫০০ জনে। যার অর্ধেকের বেশি আবার নারী ও শিশু। এদিকে গাজায় হাজার হাজার গর্ভবর্তী নারী অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। গাজার ফিলিস্তিনি নারীরা ইসরায়েলি উত্তেজনার মধ্যে অকাল প্রসব ও গর্ভপাতের সম্মুখীন হচ্ছে।
শনিবার গাজা প্রশাসনের জনসংযোগ অফিস এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন। আনাদুলু এজেন্সির খবরে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
গাজা প্রশাসনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সালাম মারুফ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, অক্টোবরের ৭ তারিখ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজা উপত্যকায় অন্তত সাড়ে ৯ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩ হাজার ৯০০ জনই শিশু এবং ২ হাজার ৫০৯ জন নারী।
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরে সালামা মারুফ বলেন, ‘ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজায় ৫৫টি মসজিদ,৩টি বিশ্ববিদ্যালয়, তিনটি গির্জা ধ্বংস হয়েছে।’
তিনি আরও জানান গাজা প্রশাসনের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনের পাঁচটি ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৬টি হাসপাতাল, ৩২টি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র এবং ২৭টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়েছে। চিকিৎসা খাত সংক্রান্ত ১০৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গাজার জনসংযোগ বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইসরায়েলি হামলায় ৮ হাজার ৫০০ ঘর, ৪০ হাজার আবাসন ইউনিট পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ২ লাখ ২০ হাজার ইউনিট কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৮৮টি সরকারি প্রধান কার্যালয়, ২২০টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব স্কুলের মধ্যে ৬০টি মেরামত অযোগ্য।
আনাদুলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, গর্ভবতী ফিলিস্তিনি নারীরা গাজা উপত্যকায় গর্ভপাত এবং অকাল প্রসবের সম্মুখীন হচ্ছেন। গাজা শহরের আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্স আল-হিলু ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে প্রসূতি পরিষেবা বিভাগ এসব তথ্য জানিয়েছে।
হাসপাতালটি এখন হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের আশ্রয়স্থল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলের যে যুদ্ধ চলছে তার কারণে গর্ভবতী মহিলারা বিছানা, ডাক্তার এবং প্রসব-পূর্ব এবং পরবর্তী ভাল চিকিৎসা পরিষেবার অভাবের মধ্যে ভুগছেন।
বেইত হানুন শহরের ইসলাম হামদান আনাদোলুকে তার বোন সম্পর্কে বলেছিলেন, যিনি গাজা শহরের আল-হিলু আন্তর্জাতিক হাসপাতালে সন্তান জন্ম দিতে চলেছেন। তিনি বলেন, 'কোথাও নিরাপদ নয়, হাসপাতাল নেই, স্কুল নেই, কোথাও নেই'।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ নিয়ে কথা বলতে গত শনিবার জর্ডানের রাজধানী আম্মানে সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। সেখানে আরব বিশ্বের পাঁচ দেশ সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে করেন। বৈঠকে আরব নেতাদের চাপের মুখে পড়েন ব্লিংকেন। তারা গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির দাবি জানান এবং হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে অবস্থান নিয়েছে এতে তারা সমর্থন জানাননি।
ব্লিংকেন বলেন, গাজায় এই অভিযান অব্যাহত রাখার মাধ্যমে হামাসকে দমন করা সম্ভব হবে। এতে হামাস ইসরায়েলে দ্বিতীয়বারের মতো আর হামলা চালাতে পারবে না।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে বলেন, যখন তিনি দেখতে পান ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে গাজার শিশুদের টেনে তোলা হয়; তখন সে দৃশ্য তার মনে নিজের সন্তানদের মুখচ্ছবি জাগিয়ে তোলে। তিনি জানান, তাদের সবাইকে একে অপরের প্রতি মানবিক হতে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো গাজায় কোনো যুদ্ধবিরতি চায় না বলে জানিয়েছেন ব্লিংকেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধবিরতি করলে হামাস আবার সংঘটিত হবে এবং ৭ অক্টোবরের মতো হামলা চালাবে।
এমআইসি