ঢাকাঃ যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অ্যালায়েন্সে (ন্যাটো) কবে নাগাদ যুক্ত হতে পারে ইউক্রেন— সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
তিনি আরও বলেছেন, ইউক্রেনের সদস্যপদ প্রাপ্তির ব্যাপারটি অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলিয়ে রেখে কার্যত রাশিয়ার সঙ্গে ‘দর কষাকষি করার সুযোগ’ হারাচ্ছে ন্যাটো।
জেলেনস্কি বলেন, ‘অনিশ্চয়তার আরেক নাম দুর্বলতা এবং এই সম্মেলনে আমি সরাসরি বলতে চাই— ইউক্রেনকে এই জোটে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর প্রস্তুতির অভাবে আমরা হতাশ।’
‘যদি ইউক্রেনকে সদস্যপদ দেওয়া হতো, সেক্ষেত্রে এই যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি দর কষাকষি করতে পারত ন্যাটো এবং রাশিয়াও যুদ্ধ গোটাতে বাধ্য হতো…আমরা মনে করছি— ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ প্রদান নিয়ে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সিদ্ধান্তহীনতা আসলে রাশিয়াকে আরও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে উৎসাহ দেবে।’
ইউরোপের বাল্টিক অঞ্চলের দেশ লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলিনাসে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে ন্যাটোর সম্মেলন। এই জোটের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য গত প্রায় ৮ বছর ধরে চেষ্টা করতে থাকা ইউক্রেন প্রত্যাশা করেছিল, এবারের সম্মেলনেই সদস্য করে নেওয়া হবে দেশটিকে।
কিন্তু সেই আশার গুড়ে আরও একবার বালি পড়েছে। জোটের কয়েকটি রাষ্ট্র ন্যাটোকে সদস্যপদ প্রদানের সুপারিশ করলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশিরভাগ প্রভাবশালী রাষ্ট্র ইউক্রেনকে সদস্যপদ প্রদানের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেনি।
এমনকি কবে নাগাদ সদস্যপদ দেওয়া হতে পারে ইউক্রেনকে— সে সম্পর্কিত কোনো সময়সীমা ঘোষণা করতেও রাজি হননি জোটের নেতৃস্থানীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
অবশ্য তারা বলেছেন, যতদিন এই যুদ্ধ চলবে— ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে ন্যাটো। জোটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ বলেছেন, যুদ্ধে যদি ইউক্রেন জয়ী হয়— সেক্ষেত্রে দেশটির অবকাঠামোগত এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠনেও সহায়তা দেবে ন্যাটো এবং ইইউ।
এক বিবৃতিতে ন্যাটো জানিয়েছে, এই সামরিক জোটে ইউক্রেনের দ্রুত যোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তারা স্বীকার করেছে তবে এখনই কোনও সময়সীমা দেওয়া যাচ্ছে না। এর আগে জেলেনস্কি হতাশা প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে আমন্ত্রণ জানানো বা সদস্য করার কোনও প্রস্তুতি আছে বলে তার মনে হচ্ছে না। বর্তমানে ভিলনিয়াসে অবস্থান করছেন তিনি।
গত রোববার সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এমনটা হবে না। তিনি বলেন, ইউক্রেনকে এখন ন্যাটোতে অন্তর্ভূক্ত করা মানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটোর যুদ্ধ শুরু হওয়া। বাইডেন বলেন, অনুচ্ছেদ ৫-এর অধীনে আক্রমণের শিকার যে কোনও সদস্য দেশকে রক্ষা করতে ন্যাটো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, যাই হোক না কেন এটি একটি প্রতিশ্রুতি যা আমরা সবাই মিলে তৈরি করেছি। যদি যুদ্ধ চলমান থাকে তার অর্থ আমরা সবাই যুদ্ধে আছি। এখন ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়া মানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ করা।
এদিকে কিয়েভও স্বীকার করেছে যে, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালীন সময় তারা যে ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না সেটা তারা জানে। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তারা এই সামরিক জোটে যোগ দিতে চায়। কিন্তু জেলেনস্কি এর আগে এক টুইট বার্তায় বলেছিলেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভূক্ত করার বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা না দেওয়া মানে তার দেশের চূড়ান্ত সদস্যপদ একটি দর কষাকষিতে পরিণত হতে পারে।
তার মতে, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার সময় দরকষাকষির ক্ষেত্রে হয়তো ইউক্রেনকে ন্যাটোতে নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়টি সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো হতে পারে। তিনি বলেন, অনিশ্চয়তা হচ্ছে একটি দুর্বলতা। ইউক্রেন কখন এবং কীভাবে সামরিক জোটে যোগ দিতে পারে তা হয়তো ন্যাটো জানায়নি। কিন্তু কূটনীতিকরা জোর দিয়েছিলেন যে, তারা ইউক্রেনের সদস্য হওয়ার জন্য একটি পরিষ্কার পথ নির্ধারণ করেছেন এবং এই প্রক্রিয়া সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
সামরিক জোট স্বীকৃতি দিয়েছে যে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে ন্যাটো বাহিনীর সঙ্গে আরও একীভূত হয়েছে এবং এটি ইউক্রেনের গণতন্ত্র ও নিরাপত্তাখাতে সংস্কারের বিষয়ে সমর্থন দিয়ে যাবে। কূটনীতিকরা একটি নতুন ন্যাটো-ইউক্রেন কাউন্সিল গঠনের কথাও তুলে ধরেছেন। এর মাধ্যমে কিয়েভকে পুরো জোটের বৈঠক ডাকার অধিকার দেওয়া হবে। কিন্তু ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে স্পষ্ট কোনও ধারণা না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ইউক্রেনের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
বুইউ