ঢাকাঃ ফের জুমার সময় বোমা হামলা হয়েছে আফগানিস্তানের একটি মসজিদে। শুক্রবার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতের গুজারগাহ মসজিদে হওয়া সেই হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ২১ জন।
নিহদের মধ্যে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান বাহিনীর শীর্ষ ‘বুদ্ধিজীবী’ হিসেবে পরিচিত মুজিব রহমান আনসারিও রয়েছেন। এছাড়া আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় নিহতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
হেরাত পুলিশের মুখপাত্র মাহমুদ রাসুলি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে জানান, শুক্রবারের বোমা হামলাটি আত্মঘাতী বোমা হামলা ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। তিনি আরও জানান, গুজারগাহ মসজিদের প্রধান ইমাম ছিলেন মুজিব রহমান আনসারি এবং মূলত তাকে হত্যার উদ্দেশেই চালানো হয়েছে এই হামলা।
‘শুক্রবার জোহরের আজানের পর নিজের বাসভবন থেকে মসজিদের উদ্দেশে রওনা হন আনসারি। তার ব্যক্তিগত রক্ষীরা এসময় তাকে ঘিরে ছিল। মসজিদে তিনি প্রবেশ করার পর সাধারণ মুসল্লির বেশধারী এক ব্যক্তি তার হস্ত চুম্বনের জন্য এগিয়ে আসেন। আনসারিও হাত বাড়িয়ে দেন।’
‘ওই ব্যক্তি আনসারির হস্ত চুম্বনের জন্য নিচু হওয়া মাত্রই তার শরীরে বেঁধে রাখা বোমাটি বিস্ফোরিত হয় এবং আনসারি, তার দেহরক্ষীরা, কয়েকজন সাধরণ বেসামরিক মুসল্লি ও ওই হামলাকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন,’ আলজাজিরাকে বলেন রাসুলি।
হামলায় হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি রাসুলি। স্থানীয় হাসপাতাল সূত্র থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করেছে আল জাজিরা।
এখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তারা নিশ্চিত যে, আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্ক ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আফগানিস্তান শাখা আইএস-খোরাসান (আইএস-কে) এই হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
২০ বছরব্যাপী যুদ্ধের অবসান ঘোষণা করে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগের পর গত বছর ১৫ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান গোষ্ঠী। তারপর গত এক বছরে দেশটির বিভিন্ন শহরে বেশ কয়েকটি প্রাণঘাতী বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে।
সব কয়েকটি বিস্ফোরণই ঘটিয়েছে আইএস-কে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে দেশটির সংখ্যালঘু শিয়া মুসলিমদের গোত্র হাজারা সম্প্রদায়কে। তবে সম্প্রতি সুন্নি মুসলমানরাও হামলার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন।
তালেবান ও আইএস-কে— উভয়ই কট্টরপন্থী সুন্নি ইসলামি গোষ্ঠী। তবে এ দুই গোষ্ঠীর পরস্পরের মধ্যে চরম বৈরীতা রয়েছে। এই বৈরীতার প্রধান কারণ দুই সংগঠনের মতাদর্শিক ভিন্নতা।
তালেবান গোষ্ঠী আফগানিস্তানকে বিদেশি প্রভাবমুক্ত একটি কট্টর ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে ইচ্ছুক। অন্যদিকে আইএস-কে চায়, তুরস্ক থেকে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তান ও উপমহাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হোক।
এসএস