মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে যেকোনো ধরনের সংঘাত বা যুদ্ধ এড়াতে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সংলাপ চাচ্ছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে চলমান তীব্র উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) এক ভাষণে তিনি বলেন, সংঘাত এড়াতে প্রতিনিয়তই কাজ করে যাচ্ছে তেহরান। এই প্রচেষ্টাকে আরো ফলপ্রসূ করতে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সংলাপ জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
যেকোনো পরিস্থিতিতে এমন সংলাপ সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন রুহানি। সেই লক্ষ্যেই চলমান উত্তেজনার মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার ভারত সফর করছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন জারিফ। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে কথা হয়।
দুই নেতাই আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিশেষ করে জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং চাবাহর বন্দর নিয়ে মতবিনিময় করেছেন। এর আগে ভারতের এনডিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি পারস্য উপসাগরে উত্তেজনা কমাতে ভূমিকা রাখতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানান।
ইরানের সঙ্গে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে তেহরানঘনিষ্ঠ ভারতকে পাশে চায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে আমেরিকা-ইরানের সঙ্গে যতটা সম্ভব ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে চায় ভারত। ভারতের কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে এমনটা জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো।
আনন্দবাজার পত্রিকা বলেছে, মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলেইমানির নিহত হওয়ার পর ভারত সাবধানী বিবৃতিটি দিয়েছিল। বিবৃতিতে কোথাও ঘটনার নিন্দা ছিল না। সোলেইমানি সম্পর্কেও কোনো নেতিবাচক উল্লেখ ছিল না।
এরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প দিল্লিতে এক জঙ্গি হামলার সঙ্গে কাসেম সোলাইমানির যুগকে তুলে ধরে টুইট করেন। ভারত কিন্তু তাতে টুঁ শব্দও করেনি। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাদের ইরাননীতি নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেও কথা বলেন ভারতের নতুন পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে। গতকাল রাতেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেন পম্পেও।
ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ফোনালাপের পর পম্পেও এক টুইটবার্তায় বলেন, এস জয়শঙ্কর এবং আমি এখনই কথা বললাম ইরানের পক্ষ থেকে দেয়া ক্রমাগত উসকানি ও হুমকি নিয়ে। আমেরিকার নাগরিক এবং আমাদের বন্ধুদের জীবন বাঁচাতে ও নিরাপদ রাখতে ট্রাম্প প্রশাসন কোনো দ্বিধা করবে না।
কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, পম্পেওর সঙ্গে টেলিফোন সংলাপের পর জয়শঙ্কর যে টুইটটি করেন সেখানে ইরানের নামোল্লেখ পর্যন্ত নেই।
তার বক্তব্য, ‘উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়া নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব পম্পেওর সঙ্গে ফোনে কথা হলো। ভারতের উদ্বেগ ও স্বার্থের দিকটিকে তুলে ধরা হয়েছে।’
এরপরই প্রশ্ন উঠেছে, দুই নেতার একই বিষয়ে দুই পৃথক বক্তব্য নিয়ে। কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে খবরে বলা হয়, ‘আমেরিকার প্রতি বিশ্বস্ত থেকেও ইরানকে চটাতে চাইছে না ভারত।
চাবাহার বন্দরে বিপুল বিনিয়োগ, ইরানের সহায়তায় পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তানসহ পশ্চিম এশিয়ার বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়ানো, পরে ফের তেল আমদানির রাস্তা খুলে রাখার মতো বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভারতের কাছে।
উল্টোদিকে আমেরিকা এর প্রতিটি খুঁটিনাটি সম্পর্কেই অবহিত। ইরান ও ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথাও তাদের অজ্ঞাত নয়। তাই ইরানকে বিশ্বে একঘরে করে দেয়ার যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন, তাতে নয়াদিল্লিকে তেহরানের থেকে দূরে এবং বিচ্ছিন্ন রাখাটা জরুরি হোয়াইট হাউসের কাছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ঠিক এই কারণেই দীর্ঘদিন ধরে কার্যত ভারতের পেছনে লেগে ইরান থেকে তাদের তেল আমদানি শূন্যে নিয়ে যেতে বাধ্য করেছে ওয়াশিংটন। সেই প্রয়াস অদূর ভবিষ্যতেও চালানো হবে। এই টানাপড়েনের কূটনীতিতে ভারত কতটা জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে এই ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে এখন সেটাই দেখার।’
আগামী নিউজ/এসএম/এনএনআর