ঢাকাঃ টানা প্রায় পাঁচ মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। মস্কোর এই আগ্রাসনের মুখে কার্যত বিপর্যস্ত ইউক্রেন। পশ্চিমা অস্ত্র হাতে নেওয়ার পরও কোনো কৌশলেই যেন মস্কোর অগ্রযাত্রা থামাতে পারছে না কিয়েভ।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে ইউক্রেনের প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। একইসঙ্গে রাষ্ট্রের শীর্ষ প্রসিকিউটর জেনারেলকেও বরখাস্ত করেছেন তিনি। সোমবার (১৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রোববার (১৭ জুলাই) এ আদেশ দেওয়া হয়। বরখাস্ত হওয়া দুই কর্মকর্তা হলেন ইভান বাকানোভ, যিনি জেলেনস্কির ছোটবেলার বন্ধু ও ইরাইনা ভেনেদিক্তোভা।
তাদের বরখাস্ত করার বিষয়টি প্রেসিডেন্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টর অভিযোগ, এই দু’টি সংস্থার ৬০ জনেরও বেশি সাবেক কর্মচারী এখন রাশিয়ান-অধিকৃত এলাকায় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে সহযোগিতা ও বিশ্বাসঘাতকতার মোট ৬৫১টি অভিযোগ উন্মুক্ত করা হয়েছে।
অবশ্য বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা ইভান বাকানভ এবং ইরিনা ভেনেডিক্টোভা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
অন্য একটি টেলিগ্রাম পোস্টের মাধ্যমে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, সংস্থার সদস্যরা রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করার অনেক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে বলে তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে।
রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার ভিত্তির বিরুদ্ধে এমন অপরাধের কারণে সংশ্লিষ্ট প্রধানদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। এর প্রতিটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
জেলেনস্কি ভেনেদিক্তোভার পরিবর্তে তার ডেপুটি ওলেক্সি সিমোনেনকোকে নতুন প্রসিকিউটর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত করেছেন।
এদিকে রোববার ইউক্রেন বলেছে রাশিয়ার বেশ কয়েকটি যুদ্ধ জাহাজ ক্রিমিয়ার কৃষ্ণ সাগর থেকে আরও পূর্বে নভোরোসিয়স্ক বন্দরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে ইউক্রেন আরও বেশি দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পাওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া।
এছাড়া ক্রিমিয়ায় হামলা চালানোর বিষয়ে ইউক্রেনকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া কেড়ে নেয় রাশিয়া। সেখানে হামলা চালানো হলে ইউক্রেনকে ‘চূড়ান্ত দিনের’ মুখোমুখি হতে হবে বলে সতর্ক করেন বর্তমানে রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের বর্তমান উপপ্রধান মেদভেদেভ।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
মস্কো অবশ্য ইউক্রেনে তাদের এই আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করছে। এছাড়া যুদ্ধের শুরুতে পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড আক্রান্ত হলেও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল মনোযোগ এখন দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়।
বিবিসি বলছে, রাশিয়া মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প এলাকা ডনবাস দখল করতে চাইছে। এই ভূখণ্ডটি লুহানস্ক এবং দোনেতস্ক নামে দু’টি অঞ্চল নিয়ে গঠিত। সেখানে রুশপন্থি দু’টি বিদ্রোহী স্ব-ঘোষিত রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেনে আক্রমণের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
যুদ্ধ শুরুর পর প্রায় পাঁচ মাসে ইউক্রেনে হাজারও মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। লাখ লাখ মানুষ ঘর-বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন। এছাড়া রুশ আগ্রাসনে ইউক্রেনের সামরিক-বেসামরিক অবকাঠামোরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এমবুইউ