Dr. Neem on Daraz
Victory Day

পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পেলেন তিন দেশের তিন বিজ্ঞানী


আগামী নিউজ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২১, ০৫:৫৩ পিএম
পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পেলেন তিন দেশের তিন বিজ্ঞানী

ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকাঃ রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স পদার্থবিজ্ঞানে ২০২১ সালের নোবেল পুরস্কারের জন্য জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালির তিনজন বিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করেছে। পুরস্কারের অর্ধেক অর্থ পাবেন সাইউকুরো মানাবে এবং ক্লস হ্যাসেলম্যান নামের দুজন বিজ্ঞানী। আর বাকী অর্ধেক পাবেন জর্জিও প্যারিসি নামের আরেকজন বিজ্ঞানী। ‘জটিল ভৌত সিস্টেম সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদানের জন্য’ তাদেরকে এবারের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।

সাইউকুরো মানাবে এবং ক্লস হ্যাসেলম্যানকে ‘পৃথিবীর জলবায়ুর পরিস্থিতির ভৌত মডেলিং, পরিবর্তনশীলতা পরিমাপ এবং নির্ভরযোগ্যভাবে বিশ্ব উষ্ণায়নের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করা’, আর জর্জিও প্যারিসিকে ‘পারমাণবিক ও গ্রহগত পরিসরে ফিজিক্যাল সিস্টেম বা ভৌত ব্যবস্থায় বিশৃঙখলা ও ফ্লাকচুয়েশন বা ওঠানামা পরষ্পরের ওপর কী প্রভাব ফেলে তা আবিষ্কারের জন্য’ এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।

সাইউকুরো মানাবে এবং ক্লস হ্যাসেলম্যান পৃথিবীর জলবায়ু এবং মানুষ কীভাবে একে প্রভাবিত করে সে সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি স্থাপন করেন। জর্জিও প্যারিসিকে বিশৃঙ্খল উপকরণ এবং এলোমেলো প্রক্রিয়াগুলির তত্ত্বে বিপ্লবী অবদানের জন্য পুরস্কৃত করা হয়।

জটিল সিস্টেমগুলি এলোমেলো এবং বিশৃঙ্খল হয়ে থাকে এবং সেগুলি বোঝা খুব কঠিন। এই তিন বিজ্ঞানী সেসবের বর্ণনা করেন এবং তাদের দীর্ঘমেয়াদী আচরণের পূর্বাভাস দেওয়ার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।

মানবজাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জটিল ব্যবস্থা হল পৃথিবীর জলবায়ু। সাইউকুরো মানাবে দেখিয়েছেন, কীভাবে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বাড়লে পৃথিবীতে তাপমাত্রা বাড়ে। ১৯৬০-এর দশকে তিনি পৃথিবীর জলবায়ুর ভৌত মডেলগুলোর উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি বিকিরণ ভারসাম্য এবং বায়ুবাহিনীর উল্লম্ব পরিবহনের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া উদ্ঘাটন করেছিলেন। তাঁর কাজ বর্তমান জলবায়ু মডেলগুলোর বিকাশের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

এর প্রায় দশ বছর পরে, ক্লস হ্যাসেলম্যান এমন একটি মডেল তৈরি করেছিলেন যাতে আবহাওয়া এবং জলবায়ুকে সংযুক্ত করা হয়। আবহাওয়া পরিবর্তনশীল এবং বিশৃঙ্খল হওয়া সত্ত্বেও জলবায়ুর মডেলগুলি নির্ভরযোগ্য হতে পারে কেন এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয় এর মাধ্যমে। নির্দিষ্ট সংকেত, আঙুলের ছাপ শনাক্ত করার পদ্ধতিও তৈরি করেছিলেন তিনি, প্রাকৃতিক ঘটনা এবং মানুষের কার্যকলাপ উভয়ই জলবায়ুতে যে ছাপ রাখে। বায়ুমণ্ডলে বর্ধিত তাপমাত্রা যে মানুষের কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমণের কারণেই ঘটেছে তা প্রমাণ করতে তার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।

জর্জিও প্যারিসি ১৯৮০ সালের দিকে বিশৃঙ্খল জটিল উপাদানগুলোতে লুকানো নিদর্শন আবিষ্কার করেছিলেন। তার আবিষ্কারগুলো জটিল সিস্টেমের তত্ত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানগুলির মধ্যে একটি। তারা কেবল পদার্থবিজ্ঞানে নয়, গণিত, জীববিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান এবং মেশিন লার্নিংয়ের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রেও দৃশ্যত সম্পূর্ণ এলোমেলো উপকরণ এবং ঘটনাগুলো বোঝা ও বর্ণনা করা সম্ভব করে তোলে।

পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল কমিটির সভাপতি থর্স হ্যান্স হ্যানসন বলেছেন, ‘এই আবিষ্কারগুলোর ফলে জলবায়ু সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান পর্যবেক্ষণের শক্তিশালী বিশ্লেষণের ভিত্তিতে একটি খাঁটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর স্থাপিত হয়। এই বছরের বিজয়ীরা আমাদের জটিল ফিজিক্যাল সিস্টেম বা ভৌত ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য এবং বিবর্তনের ব্যাপারে গভীর অন্তর্দৃষ্টি অর্জনে অবদান রেখেছেন’।

সাইকুরো মানাবে ১৯৩১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জাপানে, ক্লাউস হাসেলম্যান ১৯৩১ সালের ২৫ অক্টোবর জার্মানির হামবুর্গে ও জর্জিও প্যারিস ১৯৪৮ সালের ৪ আগস্ট ইতালি রোমে জন্ম নেন।

গত বছরও পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছিলেন ৩ জন। এরা হলেন যুক্তরাজ্যের রজার পেনরোস, জার্মানির রাইনহার্ড গেনজেল এবং যক্তরাষ্ট্রের আন্দ্রেয়া ঘেজ।

করোনা মহামারির কারণে গত বছরের মতো চলতি বছরও সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ছোট আকারের অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে; গতবারের মতো সেই অনুষ্ঠানে আয়োজক কমিটির বাইরে অন্য কোনও অতিথি উপস্থিত ছিলেন না।

উনবিংশ শতাব্দিতে সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল আবিষ্কার করেছিলেন ডিনামাইট নামের ব্যাপক বিধ্বংসী বিস্ফোরক; যা তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পত্তির মালিক করে তোলে। মৃত্যুর আগে তিনি উইল করে যান— প্রতি বছর ৬টি বিষয়ে যারা বিশেষ আবদান রাখবেন; তাদের যেন এই অর্থ থেকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯০১ সাল থেকে শুরু হয় নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। চলতি বছরে সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান শেষ হবে আগামী ১১ অক্টোবর।

গত সোমবার (৪ অক্টোবর) চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছর এই খাতে নোবেল পেয়েছেন লেবানিজ বংশোদ্ভূত মার্কিন বিজ্ঞানী আর্ডেম পাতাপুতিয়ান ও মার্কিন বিজ্ঞানী ডেভিড জুলিয়াস। নোবেল পুরস্কারের ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার ভাগাভাগি করে নেবেন এ দুই বিজ্ঞানী।

আগামীকাল বুধবার রসায়নে, বৃহস্পতিবার সাহিত্যে চলতি বছরের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এরপর শুক্রবার শান্তি এবং আগামী সোমবার (১১ অক্টোবর) অর্থনীতি বিজ্ঞানে এবারের নোবেল পুরস্কার জয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

আগামীনিউজ/শরিফ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে