ঢাকাঃ টালমাটাল অর্থনীতি, ধরপাকড় ও ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি তথা জাতীয় পরিষদের এ নির্বাচনে প্রায় ১৩ কোটি পাকিস্তানি ভোটার নতুন সরকার গঠনে তাদের রায় দেবেন।
পাকিস্তানের এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন, বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপিসহ ছোট-বড় প্রায় ১৪টি রাজনৈতিক দল। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইমরান খানকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানজুড়ে রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর হতে চলেছে।
প্রায় ২৫ কোটি জনসংখ্যার দেশ পাকিস্তানে এবার ১২ কোটি ৮০ লাখের মতো ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে বিরতি ছাড়াই ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে ভোটগ্রহণের সময় বাড়াতে পারবেন স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তারা।
জাতীয় পরিষদের (এনএ) পাশাপাশি চারটি প্রাদেশিক পরিষদেও বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ হবে। ভোটাররা জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং প্রাদেশিক পরিষদের জন্য মোট দুটি ভোট প্রয়োগ করতে পারবেন। দেশটিতে জাতীয় পরিষদের ভোটে মোট ৫ হাজার ১২১ জন প্রার্থী এবং প্রাদেশিক পরিষদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১২ হাজার ৬৯৫ জন প্রার্থী। এবারের নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)।
জাতীয় পরিষদের ৩৩৬টি আসনের মধ্যে ২৬৬ জন সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। বাকি ৭০টি সংরক্ষিত আসন। তার মধ্যে ৬০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। আর ১০টি অমুসলিমদের জন্য।
জনগণের সরাসরি ভোটে বিজয়ী প্রার্থীরা জাতীয় পরিষদের সদস্য হন। নির্বাচনের পর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেকোনো দলে যোগ দেয়ার সুযোগ রয়েছে। সংসদ সদস্যদের ভোটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে হলে কমপক্ষে ১৬৯ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন।
মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনের সব ধরনের প্রচারণা শেষ হয়েছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, রেঞ্জারর্স এবং পুলিশ ফ্লাগ মার্চ করছে। দেশজুড়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রচারণার শেষ দিন মঙ্গলবার লারকানায় নির্বাচনী প্রচারণার ইতি টেনেছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারপারসন বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। এটি হলো ভুট্টো পরিবারের রাজনৈতিক ঘাঁটি।
অন্যদিকে প্রচারণার শেষ স্থান হিসেবে কাসুরকে বেছে নেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। এটি তার ছোটভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সংসদীয় আসন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে নওয়াজ শরীফের জয়ের সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে। পিটিআই ক্ষমতায় ফিরলে পাকিস্তানের রাজনীতি ও অর্থনীতি সেই চাপ নিতে পারবে না বলে দাবি করছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ।
এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বিপাকে রয়েছে ইমরানের খানের পিটিআই। দুই বছর আগে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এখন একের পর এক মামলায় সাজা পেয়ে এখন রয়েছেন কারাগারে। মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ায় নিজে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। দলের শীর্ষ অনেক নেতাও কারাবন্দি। দলীয় প্রতীক বরাদ্দও পাননি। ফলে দলের ব্যানার থেকে বাকিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না, অংশ নিতে হচ্ছে স্বতন্ত্র হিসেবে।
পাকিস্তানের আসন্ন নির্বাচন শুধু দলগুলো বা তাদের নেতাদের জনপ্রিয়তা মাপার জন্যই গুরুত্বপূর্ন নয়। অর্থনৈতিক সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ইস্যুগুলোতেও এই নির্বাচনের প্রভাব থাকবে।
এমআইসি/