ঢাকাঃ ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা সাড়ে তিন মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। তবে এরপরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে আটক থাকা বেশিরভাগ বন্দিকেই উদ্ধার করতে পারেনি ইসরায়েল।
এমন অবস্থায় বন্দিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইসরায়েলের সরকারের ওপর বাড়ছে চাপ, জোরালো হচ্ছে যুদ্ধবিরতির আহ্বানও। তবে এক ইসরায়েলি মন্ত্রী বলেছেন, সকল বন্দিকে জীবিত দেশে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেবেন না তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দিদের সবাইকে জীবিত ফিরিয়ে আনতে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে পারেন না বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের চরমপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ। গাজায় বন্দি থাকা ব্যক্তিদের পরিবারকে তিনি একথা বলেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
ইসরায়েল হেয়োম পত্রিকা জানিয়েছে, বেজালেল স্মোট্রিচ গত সোমবার বন্দিদের পরিবারের সঙ্গে এক বৈঠকে সকল বন্দিকে জীবিত ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতি না দেওয়ার বিষয়ে এই মন্তব্য করেন।
পত্রিকাটি জানিয়েছে, সেদিনের সেই বৈঠকে ‘গাজায় চলমান অপারেশনাল কার্যকলাপ এবং বন্দিদের মুক্তিকে ঘিরে থাকা নানা সংশয় নিয়ে’ আলোচনা হয়। সংবাদপত্রে প্রকাশিত বৈঠকের ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ে বন্দিদের পরিবারগুলোর উদ্দেশে স্মোট্রিচকে বলতে শোনা যায়: ‘আমি সমস্ত বন্দিকে জীবিত বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদেরকে সেই প্রতিশ্রুতি দিতে পারি না। আমি এটা যেমনই বলছি - আমি প্রতিশ্রুতি দিতে পারি না। আমি কারও দিকে তাকাচ্ছি না এবং তাকে সেটা বলছি না যে- ‘আমি আপনার ছেলেকে জীবিত ফিরিয়ে আনব’।’
ইসরায়েলের চরমপন্থী এই অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি বলতে পারি যে, তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমি সবকিছুই করব। আমি আমার বিচার-বিবেচনা ও বিবেক দিয়ে এমনভাবে সর্বোত্তম চেষ্টা করব যা বন্দিদের ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনাকে সর্বোত্তমভাবে কাজ করবে, কিন্তু আমি প্রধানত ইসরায়েল এবং ইহুদি জনগণ, আমাদের নিরাপত্তা এবং অস্তিত্ব আরও বহু বছর টিকিয়ে রাখার মতো ভালো কিছুর দিকেই তাকিয়ে থাকব।’
ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন অতি-ডানপন্থি জোটের অংশ কট্টর-জাতীয়তাবাদী রিলিজিয়াস জায়োনিজম পার্টির প্রধান বেজালেল স্মোট্রিচ গাজায় ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূলের আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি গাজায় তিনি অবৈধ ইহুদিবাদী বসতি চান এবং বরাবরই যুদ্ধবিরতি বা শান্তি আলোচনার বিরোধিতা করে থাকেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের সাথে গাজায় বন্দি বিনিময় এবং যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য বিক্ষোভের মাধ্যমে অতি-ডানপন্থি সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গত সোমবার বলেছেন, গাজার ফিলিস্তিনি উপদলের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ইসরায়েলের একটি প্রস্তাব রয়েছে। তবে সেই প্রস্তাবের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেননি তিনি।
ইসরায়েলি সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কাতার এবং মিসরের মাধ্যমে (বন্দি মুক্তির) আলোচনা চলছে। তবে হামাস আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলি প্রস্তাবের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
প্রসঙ্গত, মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে একটি অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।
হামাসের এই হামলায় নিহত হন কমপক্ষে ১২০০ ইসরায়েলি। নিহতদের প্রায় ৩০০ জন সেনাসদস্যও ছিলেন। এছাড়া সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকসহ আরও দুই শতাধিক মানুষকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
হামাসের হাতে আটক বিপুল এসব বন্দির মুক্তি দাবি করেছে ইসরায়েল। আর এ লক্ষ্যে গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
তবে টানা তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে আগ্রাসন চালানোর পরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে আটক থাকা বেশিরভাগ বন্দিকেই উদ্ধার করতে পারেনি ইসরায়েল।
চলতি মাসের শুরুতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, এখনও ১৩৬ ইসরায়েলি হামাসের হাতে গাজায় আটক রয়েছে।
এমআইসি/