ঢাকাঃ প্রতিবেশী দুই দেশের মাঝে সৃষ্ট নজিরবিহীন এক উত্তেজনায় পরস্পরের ভূখণ্ডে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান এবং ইরান। পাল্টাপাল্টি এই হামলার ঘটনায় বিশ্বের বহু দেশ তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আসরে নেমেছে জাতিসংঘও।
আবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও এই বিষয়ে বেশ গভীর নজর রাখছে। তবে পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তানের সঙ্গে ইরানের সংঘাতে জড়ানো নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি মিডিয়া।
পাকিস্তানের মতো পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো যথেষ্ট শক্তি, সক্ষমতা ও সেনাবাহিনীও দৃশ্যত ইরানের নেই বলেও জানিয়েছে ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মিডিয়া পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির ওপর গভীর নজর রাখছে এবং তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকারকে সামনে রেখে নানা বিশ্লেষণ ও মন্তব্য করছে তারা।
পাকিস্তান ইরানি আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার পর সারা বিশ্বের মিডিয়া এই খবরটিকে তাদের শিরোনামে এনে এবং অসাধারণ গুরুত্ব দিয়ে কভার করেছে। এছাড়া বেশিরভাগ মিডিয়াই পাকিস্তানের অবস্থানকে সঠিক বলে মেনে নিয়েছে।
যদিও পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে অতীত উত্তেজনার কোনও ইতিহাস নেই। তারপরও কোনও ধরনের উস্কানি ছাড়াই ইরানের পক্ষ থেকে প্রথম হামলা করার পর দুই দেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো এ ধরনের উত্তেজনা দেখা দেয়।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো পাকিস্তান ও ইরানের এই সংঘাতের বিষয়টির প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছে। ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় সম্প্রচার সংস্থা জেরুজালেম পোস্ট তাদের প্রতিবেদনে বিস্ময় প্রকাশ করেছে- কেন ইরান এখন পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের সাথে উত্তেজনা বাড়ানোর পথে হাঁটল।
ইসরায়েলি এই সম্প্রচার সংস্থাটি তার মন্তব্যে লিখেছে, পাকিস্তানের মতো পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো পর্যাপ্ত শক্তি, সক্ষমতা ও সেনাবাহিনী দৃশ্যত ইরানের নেই, কিন্তু তারপরও পাকিস্তানের সঙ্গে কেন ইরান উত্তেজনা বাড়ানোটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবল তা বোঝার বাইরে।
মন্তব্যে আরও বলা হয়েছে, ইরান কেবল পাকিস্তানের সাথেই নয়, অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথেও উত্তেজনা বাড়ানোর পথে হাঁটছে এবং গত কয়েক বছরের দিকে তাকালে দেখা যায়- নিজের জন্য নতুন নতুন যুদ্ধক্ষেত্র খুলেছে তেহরান।
সম্প্রচার সংস্থাটির মতে, ইরান তার প্রতিবেশী দেশ ইরাকের কুর্দি সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলেও একই কাজ করছে। এছাড়া ইরান আফগানিস্তানের সাথেও বিরোধ বাড়িয়েছে এবং এখন দেশটি কেন পাকিস্তানের মতো পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন দেশের সাথে উত্তেজনা বাড়ানোকে গুরুত্ব দিলো তা বোঝার বাইরে।
ইসরায়েলি ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের মতে, ইরান ও পাকিস্তান উভয়ই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে এবং দুই দেশই এই ইস্যুতে একত্রিত হয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। কিন্তু ইরান সংঘাত ও উত্তেজনাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই হামলায় বেলুচিস্তানে দুই শিশু নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হন বলে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জানায়।
ইরান দাবি করে, তারা ‘পাকিস্তানি ভূখণ্ডে কেবল ইরানি সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে’ এবং কোনও পাকিস্তানি নাগরিককে লক্ষ্যবস্তু বানায়নি। কিন্তু ইরানের হামলায় পাকিস্তানে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরমাণু শক্তিধর এই দেশটি এই হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আঘাত’ বলে অভিহিত করে।
এছাড়া হামলার পর ইরানকে ‘গুরুতর পরিণতির’ হুঁশিয়ারিও দেয় পাকিস্তান। এরই জের ধরে ইরানের হামলার দুদিন পর ইরানি ভূখণ্ডে পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তান। এটাকে সিস্তান-বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কয়েকটি আস্তানায় ‘অত্যন্ত সমন্বিত এবং নির্ভুল নিশানায় নিখুঁত সামরিক সিরিজ হামলা’ বলে অভিহিত করে দেশটি।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সিস্তান-বেলুচিস্তানে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হামলায় কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়েছেন। তবে ইরানি কর্তৃপক্ষ জানায়, সিরিজ বিস্ফোরণে অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন; যাদের মধ্যে তিনজন নারী ও চারজন শিশু।
এর আগে ইরানের হামলার জেরে পাকিস্তান ইরান থেকে তার রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং তেহরানের সাথে উচ্চ পর্যায়ের সফরও স্থগিত করে। এছাড়া হামলার সেই ঘটনার পর ইসলামাবাদে নিযুক্ত তেহরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারও করে পাকিস্তান।
এমআইসি/