ঢাকাঃ ইরানের সিস্তান-বালোচিস্তান প্রদেশে হামলার পর তেহরানকে সতর্কবার্তা দিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই বার্তায় বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবারের হামলার জবাবে ইরান যদি ফের পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আক্রমণ করে, তাহলে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক চরম উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে পাকিস্তান ইরানের সিস্তান-বালোচিস্তান প্রদেশে খুবই সুসংগঠিত এবং সুনির্দিষ্টভাবে সামরিক হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তান সবসময় তার ভৌগলিক নিরাপত্তা, জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এবং এসব ইস্যুতে কখনও আপস করে না। আজকের হামলার মূল কারণও এটাই।’
ইরানকে ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ দেশ উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আর ও বলা হয়, ‘ইরান আমাদের প্রতিবেশী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ। ইরানের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও শ্রদ্ধা পাকিস্তানের রয়েছে। কিন্তু বহু বছর ধরে আমরা বলে আসছি যে পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা, যারা নিজেদের ‘সারমাচার’ বলে দাবি করে— ইরানে তাদের নিরাপদ স্বর্গ তৈরি করেছে। দেশটির এমন সব জায়গায় তারা সামরিক স্থাপনা ও আস্তানা তৈরি করেছে, যেসব এলাকায় ইরানের কেন্দ্রীয় শাসন দুর্বল; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য—এই সন্ত্রাসীদের দমনে তেহরানের কোনো পদক্ষেপ আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয়নি।’
‘আমরা ইরানকে অনুরোধ জানাচ্ছি, আজকের হামলার জবাবে তারা যেন পাকিস্তানের অভ্যন্তরে পাল্টা কোনো হামলা আর না চালায়। ইরান যদি এ অনুরোধ না রাখে, তাহলে তার ফলাফল খুব খারাপ হবে এবং দুই ভাতৃপ্রতিম প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক চরম উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাবে।’
প্রসঙ্গত গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরানের সামরিক বাহিনীর অভিজাত শাখা ইরান রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। সেই হামলায় বেলুচিস্তানে দুই শিশু নিহতও হয়। পরে এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, বেলুচিস্তানে ইরানের সরকারবিরোধী ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ আল আদেলের ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে।
বুধবার সেই হামলার কঠোর নিন্দা জানায় ইসলামাবাদ। এই হামলার কঠোর পরিণতি ইরানকে ভুগতে হবে বলে সতর্কবার্তাও দেয় ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারপর বৃহস্পতিবার সকালে ইরানের সিস্তান-বালোচিস্তানে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।
হামলায় এ পর্যন্ত সিস্তান-বালোচিস্তানে ৩ শিশু, ৪ নারীসহ মোট ৯ জন নিহতের সংবাদ পাওয়া গেছে।
ভৌগোলিক বিচারে পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বেলুচিস্তানের সঙ্গে ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তান এবং আফগানিস্তানের নিমরুজ, হেলমান্দ ও কান্দাহার প্রদেশের সীমান্ত রয়েছে। জইশ আল আদেল মূলত সিস্তান-বালুচিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী। রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, বিগত সময়ে কয়েকবার পাকিস্তানের বেলুচিস্তান থেকে ইরানের সামরিক বাহিনী ও আইআরজিসিকে লক্ষ্য করে হামলার রেকর্ড রয়েছে এই গোষ্ঠীটির। ২০১২ সালে গঠিত এই জঙ্গিগোষ্ঠীকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ইরান।
বেলুচিস্তানের ইরান-পাকিস্তান সীমান্তকে দুই দেশের অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানকারীদের কাছে সবচেয়ে ‘নিরাপদ’ রুট হিসেবে পরিচিত। এছাড়া মাঝে মাঝে এই সীমান্তে অস্থিরতাও দেখা দেয়।
কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরে কখনও দেশ হিসেবে ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যায়নি।
সূত্র : এনডিটিভি
এমআইসি/