ঢাকাঃ ইরানে প্রাণঘাতী জোড়া বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে দেশটি। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের সাবেক প্রধান কাশেম সোলাইমানির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এই জোড়া বিস্ফোরণে প্রায় একশো মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
একইসঙ্গে এই বিস্ফোরণকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলেও অভিহিত করেছে পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটি। বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে বুধবার দুটি বোমা হামলায় ৯৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে তেহরান। গাজায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ এবং মঙ্গলবার লেবাননে হামাসের একজন সিনিয়র নেতার হত্যাকাণ্ডে মধ্যপ্রাচ্যের উচ্চ উত্তেজনার মধ্যেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে এবং এটিকে রাষ্ট্রীয় মিডিয়া এবং আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
প্রাণঘাতী এই হামলার দায় এখনও কেউ স্বীকার করেনি। তবে এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলে আরও বিস্তৃত সংঘাতের আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। একইসঙ্গে এই হামলা বিশ্ববাজারেও জোরালো ঝাঁকুনি দিয়েছে যেখানে তেলের দাম তিন শতাংশের বেশি বেড়েছে এবং হামলার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দার সৃষ্টি হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির রাজনৈতিক ডেপুটি মোহাম্মদ জামশিদি বলেছেন, ‘ওয়াশিংটন বলেছে- ইরানের কেরমানে সন্ত্রাসী হামলায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কোনও ভূমিকা ছিল না। সত্যিই? শেয়াল প্রথমে নিজের কোলের গন্ধ পায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনও ভুল করবেন না। এই অপরাধের দায়ভার যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদিবাদী শাসকদের (ইসরায়েল)। সন্ত্রাসবাদ শুধুমাত্র তাদের একটি হাতিয়ার।’
যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এর আগে এই ধরনের যে কোনও গুঞ্জন প্রত্যাখ্যান করেছে যে, তারা বা তাদের মিত্র ইসরায়েল এই ঘটনায় জড়িত। আর ইসরায়েল এই হামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই এই ঘটনায় জড়িত নয়... আমাদের বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই যে, এই বিস্ফোরণে ইসরায়েল জড়িত রয়েছে।’
বিস্ফোরণের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন: ‘আমরা হামাসের সাথে লড়াইয়ের দিকে মনোনিবেশ করছি।’
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হামলার জন্য দেশের ‘অশুভ ও অপরাধী শত্রুদের’ দায়ী করেছেন এবং একইসঙ্গে ‘কঠোর জবাব’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বৃহস্পতিবার তার তুরস্ক সফর বাতিল করেছেন এবং ‘জঘন্য’ অপরাধের নিন্দা করে ইরানে বৃহস্পতিবার জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেছেন।
এর আগে, বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টার দিকে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের সাবেক প্রধান কাশেম সোলাইমানির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দেশটির দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় কেরমান শহরে কাশেম সোলাইমানির সমাধিস্থল থেকে কয়েকশ মিটার দূরের এই বিস্ফোরণে প্রায় একশো জন নিহত ও দুই শতাধিক আহত হন।
ইরানের সরকারি বার্তাসংস্থা ইরনা প্রাথমিকভাবে ১০৩ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছিল এবং রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলেছে, হামলায় আরও ২১১ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পরে ইরানি স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাহরাম আইনোল্লাহি নিহতের সংখ্যা সংশোধন করে বলেন, ‘সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সঠিক সংখ্যা ৯৫ জন’। তিনি বলেন, আগের সংখ্যা ১০৩ হওয়ার কারণ ছিল কিছু নাম ‘ভুল করে দুবার নিবন্ধিত হয়েছিল’।
ইরানের রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, প্রথম বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে ছুটে আসা তিনজন প্যারামেডিকও নিহতদের মধ্যে রয়েছেন।
এমআইসি/