পরিচিতিঃ Botanical Name: Poland emblic Linn. Common Name: Amla, Amloki English Name: Emblic Myrobalan, Indian Gooseberry Family: Euphorbiaceae
আমলকি আমাদের অত্যন্ত সুপরিচিত ত্রিফলার অন্যতম ফল। আমলকি মাঝারি ধরনের বৃক্ষ। ২০ থেকে ২৫ ফুট এবং কাঠ শক্ত লাল বর্ণের। ছাল পুরু, নরম, মসৃন ও ফিকে ধূসর বর্ণের। শাখা-প্রশাখা স্বল্প এবং গাটযুক্ত। পত্রদন্ড লম্বা এবং পাতাগুলো লোমযুক্ত ও ছোট আকৃতির এবং শীতকালে ঝড়ে পড়ে। ফুল ছোট পীতাভ সবুজ বর্ণের। ফল গোলাকার, গায়ে খাচ কাটা মাংসল,রসাল ও আশঁযুক্ত। ফলের মধ্যে ৩ টি বীজকোষে ৬ টি বীজ থাকে। এপ্রিল-মে মাসে ফুল এবং ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে ফল হয়। আমলকির ছাল, মূল ও ফল ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়। ভারত, বাংলাদেশ বা ভিয়েতনাম আমলকির আদি বাসস্থান।
প্রাপ্তিস্থানঃ বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম ও চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমলকি জন্মে ।
চাষাবাদঃ সমতল ভূমির আর্দ্র-গরম ও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় এবং যেখানে শীত ও বৃষ্টিপাত বেশী সেখানে উন্নতমানের আমলকি জন্মায়, বিশেষতঃ খোলামেলা স্থানে আমলকি গাছ বেশী দেখা যায়। মার্চ-এপ্রিল বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। বপনের পূর্বে বীজ ৫-৬ ঘন্টা হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরবর্তীতে বপন করতে হবে। বীজের অঙ্কুরোদগম হতে কমপক্ষে ২-৩ সপ্তাহ সময়ের প্রয়োজন। দেড় থেকে দুই বৎসরের চারা রোপণ করার জন্য উত্তম। বংশ বিস্তারের জন্য এই গাছের ডালের কাটিং এবং গুটি কলমও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ছোট অবস্থায় চারা গাছ খুব নরম থাকে বিধায় একটি সোজা কাঠির সাথে বেঁধে দিতে হবে।
লাগানোর দূরত্বঃ পরস্পর দুটি গাছের দূরত্ব থাকবে ১৫ থেকে ২০ ফুট।
বীজ সংগ্রহের সময়ঃ ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ফল পাকতে শুরু করে তখন ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হয়।
উপযোগী মাটিঃ সব ধরনের মাটিতে আমলকি গাছ হয়ে থাকে, তবে বেলে দোআঁশ মাটিতে অধিক পরিমাণে আমলকি গাছ জন্মে।
পরিপক্ক হওয়ার সময়কালঃ সাধারণত ৪-৫ বছরে পরিপক্ক হয়।
বীজ আহরণঃ ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে পরিপক্ক ফল সংগ্রহ করে তা ৬-৭ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ফলের রসালো অংশ পচে যায়। এর পর হাত দিয়ে চটকিয়ে পচা অংশ ফেলে রৌদ্রে শুকিয়ে আঁটি থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হয়।
প্রতি কেজিতে বীজের পরিমাণঃ ৪৫০০০-৫০০০০ টি।
বাজ প্রক্রিয়াজাতকরণ / সংরক্ষণঃ সাধারণত ফল পাকতে শুরু করলে ঈষৎ হলদে রং ধারণ করে, তখনই একে সংগ্রহ করতে হয়। ফল যাতে মাটিতে পড়ে থেঁতো না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অতঃপর ভাল ভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে রৌদ্রে শুকিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। শুকানোর সময় যেন কোন ধুলাবালি না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাছাড়া মৃদুতাপে পানিতে সামান্য জ্বাল দিয়ে নিয়ে পরবর্তীতে রৌদ্রে শুকিয়েও সংরক্ষণ করা যায়। বেশীরভাগ সময় দ্বিতীয় পদ্ধতিতে আমলকি সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। সংরক্ষণের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কোন রকম ছত্রাক ও কীটপতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত না হয়।
ব্যবহার্য অংশঃ ফল (ঔষুধ হিসেবে), কাঠ, ছাল ও পাতা ।
উপকারিতা / লোকজ ব্যবহারঃ আমলকী হৃদপিন্ড, পাকস্থলী ও যকৃত, পেশা ও স্নায়ুমণ্ডলের শক্তিবর্ধক। রক্ত পরিষ্কারক, চর্মের লাবণ্যতা ফিরিয়ে আনে এবং যৌনশক্তি, স্মরনশক্তি ও ক্ষুধা বৃদ্ধি করে পা নিবারণ করে। আমলকির তেল ব্যবহারে চুল কালো হয়, চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং তা ঘুন। আমলকির রস এবং গুড়া বাদাম তেলে মিশিয়ে চিনিসহ খালি পেটে ২৫ গ্রাম পরিমাণ খেলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং সবরকম চোখের রোগে উপকারি। সুরমা আকারে ব্যবহারেও উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অর্শরোগে উপকারি। ১ কেজি কমলার রসে যে পরিমাণ ভিটামিন সি আছে ৫০ গ্রাম আমলকীতে তারচেয়ে বেশী ভিটামিন সি আছে।
কোন্ অংশ কিভাবে ব্যবহৃত হয়ঃ
● পাকা আমলকির বীজগুড়া, অল্প মিছরিসহ বারবার চেটে খেলে শ্বেত প্রদর রোগে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
● আমলকির কাঁচা ফল প্রতিদিন একটি করে খেলে মেহ রোগে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
● লজ্জা স্থানে ব্যাথাঃ আমলকির রস ৩০ গ্রাম, হিঞ্চে বা গাঁদা পাতার রস ২০ গ্রাম, মিছরি দুই তোলা একত্রে মিশিয়ে খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
● চোখ উঠলেঃ কাঁচা আমলকি পিষে রস ছেঁকে মাঝে মাঝে দুই ফোঁটা করে চোখে দিলে জ্বালা যন্ত্রণা কমে যায়।
● চুল উঠে গেলে, চুলের গোড়া শক্ত করতে, অকালে চুল পাকলেঃ আমলকি পিষে তার রস মাথায় মেখে তিন ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে একমাস মাথায় লাগালে চুল পড়া বন্ধ হয়, চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং অকালে চুল পাকে না।
● প্রস্রাব / মূত্র বন্ধ হলেঃ মাটি বা পিতলের পানির কলসী যেখানে বসান, সেই স্থানের কিছু মাটি নিয়ে আমলকিসহ ভালভাবে পিষে নাভির চারিদিকে ভালভাবে প্রলেপ দিলে প্রস্রাব হয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে শুধুমাত্র মূত্রাশয়ের গোলযোগের ফলে যদি মূত্রস্বল্পতা দেখা দেয় তবে আমলকি প্রয়োগে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়। কিন্তু মূত্রনালীর সমস্যার কারণে যদি প্রস্রাব না হয় তাহলে এভাবে দেয়া যাবে না।
● প্রস্রাবে জ্বালা-যন্ত্রণা হলে বা মূত্রপথে ক্ষত সৃষ্টি হলেঃ ৪০ গ্রাম আমলকির রস, ১২৫ গ্রাম গরুর খাঁটি কাচা দুধ ও কিছু মিছরিসহ সরবত তৈরী করে প্রতিদিন সকাল বেলা ঐ সরবত এক সপ্তাহ পান। করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
● মাথা ধরায়ঃ আমলকি, গোলাপ জল, শ্বেতচন্দনসহ ভালভাবে পিষে মাথায় প্রলেপ দিলে মাথা ব্যথা ভাল হয়।
অন্যান্য ব্যবহারঃ আমলকির কাঠ দিয়ে গরুর গাড়ীর চাকা, নৌকা, নৌকার দাঁড় ইত্যাদি বানানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। ছালের সাহায্যে ভালো চামড়া ট্যান করলে তা নরম ও টেকসই হয়। অর্জুনের পাতার মতই আমলকির পাতা তসর জাতীয় রেশম পোকার খাদ্য।
আয়ঃ একটি প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ৬০ হতে ৮০ কেজি ফল পাওয়া যায় যার বাজার মূল্য তিন থেকে চার হাজার টাকার বেশী।
এসএস