পরিচিতিঃ Botanical Name: Saraca indica Linn.. Common Name: Ashok English Name: Ashoka Family: Leguminosae.
অশোক মাঝারী আকৃতির চিরসবুজ, বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট ছায়াতরু বৃক্ষ। কান্ড মসৃন, ধূসর ও উন্নত। বর্তমানে বিভিন্ন বাগানের শোভাবর্ধনের জন্য অশোক গাছ লাগানো হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন রাস্তার ধারে রোপন করতে দেখা যায়। পূর্ণ বয়স্ক গাছ ২৫ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। পাতা বিরাট আকৃতির ৫ থেকে ৯ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। ডাটায় সাধারণত ৫-৬ জোড়া পাতা হয়। কচি পাতার বর্ণ কালচে ও জামাটে হয়। ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসে লালচে কমলা রঙের ফুল হয়।
প্রাপ্তিস্থানঃ অশোক ভারত, মায়ানমার ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বাগানে কিংবা পথের ধারে লাগানো হয়। এছাড়াও চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে এই গাছ বেশী দেখা যায়। এইসব অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবেই এই গাছ জন্মে থাকে।
চাষাবাদঃ বীজের মাধ্যমে এটির বংশ বিস্তার ভাল হয়। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে এই গাছের ফল পেকে যায়। ফল থেকে বীজ সংগ্রহের পর তা রৌদ্রে শুকিয়ে বীজতলায় বা ব্যাগ/পটে লাগানো উত্তম। কারণ এর বীজ বেশী দিন সংরক্ষণ করা যায় না। বীজ বপনের পূর্বে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে বীজের অঙ্কুরোদগম হয় এবং অঙ্কুরোদগমের হার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ (অঞ্চল ভেদে তারতম্য হতে পারে)। সাধারণতঃ একটি বীজ থেকে ২-৩টি চারা বের হয়ে থাকে। চারার বয়স ১-২ বৎসর হলে তা রোপনের উত্তম। বর্ষাকাল চারা রোপণের উৎকৃষ্ট সময়। লাগানোর দূরত্ব ৪ ১৫ থেকে ২০ ফুট।
উপযোগী মাটিঃ সাধারণত দো-আঁশ মাটিতে এ গাছটি ভালো হয়ে থাকে, পাহাড়ী অঞ্চলের মাটিতে জন্মাতে দেখা যায়।
প্রতি কেজিতে বীজের পরিমাণ : ৫৫০-৬৫০ টি।
বীজ আহরণ ও সংগ্রহের সময়ঃ বীজের মাধ্যমে এটির বংশ বৃদ্ধি ভালো হয়। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে এই গাছের ফল পেকে যায়। ফল থেকে বীজ সংগ্রহের পর তা রৌদ্রে শুকিয়ে বীজতলায় বা ব্যাগে লাগানো উত্তম। এর বীজ বেশীদিন সংরক্ষণ করা যায় না।
প্রক্রিয়াজাতকরণ সংরক্ষণ ও বৃক্ষ বড় হয়ে পরিপূর্ণ ছাল হওয়ার পরে ছাল ধারালো ছুরি দিয়ে এমনভাবে সংগ্রহ। করতে হবে যেনো বৃক্ষের ভিতরের অংশের কোন ক্ষতি না হয়। ছাল পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর কাটা ছাল রৌদ্রে শুকিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে প্যাকেট করে বাজারজাত করতে হবে। এক্ষেত্রে শতকরা ২ ভাগ আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে। প্যাকেটের গায়ে সংগ্রহের তারিখ, উৎসস্থল, সনাক্তকরণ এবং ব্যবহারের শেষ সময় অবশ্যই উল্লেখ রাখতে হবে।
ছাল সংরক্ষণের সময়ঃ ৪ শরৎকাল অর্থাৎ ভদ্র ও আশ্বিন মাস।
ব্যবহার্য অংশঃ সাধারণত অশোক গাছের ছাল ব্যবহৃত হয়। তবে ফুল এবং বীজও ব্যবহার করা।
উপকারিতা / লোকজ ব্যবহারঃ রোগের বিভিন্ন যন্ত্রণা উপশমে এই গাছ বিশেষ কার্যকরী। অশোকের ত্বককে স্ত্রীলোকের যাবতীয় ঋতুকালীন সমস্যার মূল্যবান ঔষধ বলে নির্দেশ করেছেন।
কোন অংশ কিভাবে ব্যবহৃত হয়ঃ
● স্ত্রীলোকের ঋতুস্রাবের সমস্যায় অথবা ঋতুজনিত অসুবিধায় অশোক অত্যন্ত উপকারি ভেসজ। আশার ছাল ও বীজের ক্বাথ মিছরি অথবা মধুসহ খেলে স্ত্রীলোকের ঋতুর অসুবিধা ভালো হয়।
● প্রদর হলে দুই তোলা পরিমাণ অশোক ছাল বেটে ৩০০ গ্রাম পানি ও ১৫০ গ্রাম গরুর দুধসহ ছুটির আগুনে সিদ্ধ করতে হবে। পানি ও দুধ শুকিয়ে যখন ১৫০ গ্রামের মত হবে তখন থেকে পান করা রক্তপ্রদর ও শ্বেতপ্রদর এবং অনিয়মিত ঋতুস্রাবে বিশেষ উপকারি।
● জরায়ুঘটিত যেকোন রোগে অশোক ভাল নিরাময়ক।
● প্রস্রাব বন্ধ হলে অশোকের একটি বীজ ঠান্ডা পানিসহ বেটে খেলে উপকার পাওয়া যায়। অত্যন্ত পিপাসা বোধ করলে অশোকের কিছু ছাল বেটে কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপরে ঐ পানি অল্প অল্প করে ৩/৪ বার চুমুক দিয়ে পান করলে পিপাসা বোধ কমে আসে।
● পেটের কৃমিতে দুই তোলা পরিমাণ অশোক ছাল আধা সের পানিতে সিদ্ধ করলে পানি শুকিয়ে যখন আধা পোয়ার মত হবে তখন তা নামিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। ঐ পানি এক ছটাক পরিমাণে পর পর ৩/৪ দিন পান করলে কৃমি মারা যায়।
● কোথাও পুড়ে গেলে অশোকের ক্বাথ এর প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।
● রক্ত দূষণে অশোকের পাচন/গাজন পান করলে সুফল পাওয়া যায়।
● কোন জায়গায় কেটে গেলে অশোক ছালের মিহি গুড়া সেখানে দিয়ে বেঁধে রাখলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। পরিপক্ক হওয়ার
সময়কালঃ সাধারণত ৪-৫ বছরে পরিপক্ক হয় তবে পূর্ণাঙ্গ পরিপক্ক হতে ৮/১০ বছর সময় প্রয়োজন।
অন্যান্য ব্যবহারঃ হিন্দু সম্প্রদায় অশোক গাছকে পবিত্র মনে করে বলে মন্দিরের গ্রাঙ্গণে এ গাছ লাগানোর হয়। অন্য কাঠের তুলনায় নরম বলে অশোক কাঠের ব্যবহার সীমিত। জ্বালানি এবং কাগজের মস্ত হিসেবে এ কাঠ ব্যবহার করা যায়। অশোক গাছের শিম জাতীয় ফল উৎকৃষ্ট পশু খাদ্য।
চাহিদা ও ঔষধ শিল্পে এর বাৎসরিক চাহিদা ১২,০০,০০০ কেজি এবং সাধারণ শিল্পে এর বাৎসরিক চাহিদা। ১০,০০,০০০ কেজি।
আয়ঃ বাণিজ্যিকভাবে অশোক চাষ আমাদের দেশে কোথাও পরিলক্ষিত হয়না। একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছ বছরে ২০০০ টাকার ছাল, বীজ ও ফুল পাওয়া সম্ভব।
এসএস