উত্তরাঞ্চলঃ বাপাউবোর (বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড) ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পে রংপুর প ও র সার্কেল-১’র সাশ্রয় হয়েছে ৫৭৪০.৮৪ লাখ টাকা। এসব প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৫০৮৬২.৯৯ লাখ টাকা। কিন্তু বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের নেক নজরদারিতে প্রকৃত পক্ষে ব্যয় হয়েছে ৪৫১২২.১৫ লাখ টাকা। এর ফলে সরকারের সাশ্রয় হয়েছে ৫৭৪০.৮৪ লাখ টাকা। সাশ্রয়ী এই অর্থ দিয়ে মোট প্রকল্পের আরও এক চতুর্থাংশ কাজ করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পাঠক সাধারণের সুবিধার্থে জেলা ওয়ারি প্রকল্পগুলো উল্লেখ করা হলো।
লালমনিরহাটঃ এ জেলার পাঠগ্রাম উপজেলার হাঁসমারাদার খাল ১০ কিলোমিটার, হাতিবান্ধা উপজেলার পানকৌড়ি বিল খাল ১০.৮০ কিলোমিটার, কালিগঞ্জ উপজেলার ভাতেশ্বর নদী ২৫ কিলোমিটার, আদিতমারী উপজেলার সোমামতি নদী ২২ কিলোমিটার, লালমনিরহাট সদরের সতি নদী ২৭ কিলোমিটার ও সাকোয়া খাল ৩.৩০ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলাঃ এই জেলার ফুলছড়ি উপজেলার কাঠুরের বিল হতে রতনপুর রেগুলেটর পর্যন্ত কাঠুরের খাল ৪ কিলোমিটার, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মহিষকান্দি খাল ৫ কিলোমিটার, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সারদাগাড়ি খাল ৩ কিলোমিটার, পলাশবাড়ি উপজেলার আখিরা নদী ১৮.৪৬ কিলোমিটার, সাদুল্যাপুর উপজেলার জুনিদপুর হতে জানপাড়া পর্যন্ত ভাটিরচুরা খাল ৬ কিলোমিটার, সাঘাটা উপজেলার তেনাছাড়া খাল ১২ কিলোমিটার ও গাইবান্ধা সদরে সারদাগাড়ি খাল ৫ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলাঃ এই জেলায় ভূরুঙ্গামারি উপজেলার ফুলকুমার নদী ৩৬ কিলোমিটার, নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশি ও সুখ্যাতি খাল ৫.২৫০ কিলোমিটার, চিলমারী উপজেলার বুড়িতিস্তা খাল ৩১.৫০০ কিলোমিটার, ফুলবাড়ি উপজেলার নীলকমল খাল ১৫.৫০০ কিলোমিটার এবং উলিপুর উপজেলার বুড়িতিস্তা ১৯ কিলোমিটার ও চিলমারী উপজেলার মাগুড়া খাল ১২ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়েছে। এমনকি এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে গিয়েও সরকারের অর্থ ব্যয় করা হয়।
নীলফামারী জেলাঃ উত্তরের এ জেলা সদরের দেওনাই, চারালকাঠা ও যমুনেশ্বরী নদী ৫৫ কিলোমিটার, নীলফামারী সদরের চওড়া নদী ৩৫ কিলোমিটার, কলমদা নদী ৭ কিলোমিটার, নীলফামারী সদরের খড়খড়িয়া নদী ১৮ কিলোমিটার, সুঁই নদী ১২ কিলোমিটার, বামডাঙ্গা নদী ৬.৯০ কিলোমিটার ও বুড়িখোরা নদী ৩২ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলাঃ এ জেলার পীরগাছা উপজেলার লাচ্ছি নদী ১২ কিলোমিটার, হরিপুর উপজেলার যমুনা খাল ১০ কিলোমিটার ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার টাঙ্গন নদী ৩৫ কিলোমিটার, সুখ নদী ২৪ কিলোমিটার ও পাথরাজ নদী ১৭ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়েছে। এ জেলায় কর্মসূচি বাস্তবায়নে অবৈধ অবকাঠামোও কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ করেছেন।
রংপুর জেলাঃ এ জেলার রংপুর মহানগরের শ্যামাসুন্দরি খাল ১৫ কিলোমিটার, কাউনিয়া উপজেলার হরিশ্বর খাল ৩.৮২০ কিলোমিটার, গঙ্গাচড়া উপজেলার মানসি নদী ১৫ কিলোমিটার, পীরগাছা উপজেলার বুড়াইল নদী ৩০ কিলোমিটার, মিঠাপুকুর উপজেলার কাফরি খাল ১৫ কিলোমিটার, পীরগঞ্জ উপজেলার আখিরা নদী ৩৫ কিলোমিটার ও তারাগঞ্জ উপজেলার চিকলি নদী ২৭.২৫০ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়েছে।
বাপাউবো’র পঞ্চগড় প ও র বিভাগ দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার করতোয়া নদী ড্রেজিং করেছে ২০.৫০০ কিলোমিটার।
পঞ্চগড় জেলাঃ এই জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার করতোয়া নদী ড্রেজিং করা হয়েছে ৪১.৫০০ কিলোমিটার, বোদা উপজেলায় করতোয়া নদী ড্রেজিং করা হয়েছে ১২ কিলোমিটার, তেঁতুলিয়া উপজেলায় ভেরসা নদী ১০ কিলোমিটার, পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাওয়াই নদী ২০ কিলোমিটার, দেবীগঞ্জ উপজেলা বুড়িতিস্তা নদী ২০ কিলোমিটার, বোদা উপজেলার পাথরাজ নদী ১২ কিলোমিটার, আটোয়ারি উপজেলার সিংগিয়া খাল ৬ কিলোমিটার ও রাশেয়া খাল ৬.৯০০ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়েছে। একই সঙ্গে নগদ ব্যয়ে অবৈধ ভবন ও স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
গত দুই ও চলতি অর্থবছরে সরকারের ওইসব প্রকল্প শেষ হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে পুনঃখননকৃত ছোট নদী, খাল ও জলাশয়গুলোতে শুষ্ক মওসুমেও পানি আছে। খননের পূর্বে আশ্বিন কার্তিক মাসেই সেগুলো পানির অভাবে খাঁ খাঁ করতো বলে একাধিক এলাকাবাসির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। বর্তমানে ওইসব প্রকল্পে খননকৃত নদী, খাল ও জলাশয়ের পানি মানুষ চাষাবাদে ব্যবহার করছে। এই পানিতে রয়েছে সার।
ফসলে এ পানি ব্যবহারে বাড়তি সার যেমন লাগছে না, তেমনি ফসলের উৎপাদনও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বর্ষা মওসুমে ছোট নদী, খাল ও বিলে নাব্যতা থাকায় অল্প বৃষ্টির পানিতে টইটুম্বুর হয়ে যেত। খনন করার ফলে বর্ষার পানিতে তা সহজে প্লাবিত না হওয়ায় ফসলও রক্ষা পাচ্ছে। সারা বছর পানি থাকার ফলে খননকৃত ছোট নদী, খাল ও বিলে দেশী মাছের প্রবাহ বেড়েছে। মাছের প্রজননও বেশি হচ্ছে।
বাপাউবোর রংপুর প ও র সার্কেল-১’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুস শহীদের নিপুন হস্তক্ষেপে প্রকল্পগুলো দ্রুত আলোর মুখ দেখছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারি তাদের মন্তব্যে জানিয়েছে।
জানতে চাইলে কথা হয় বাপাউবোর রংপুর সার্কেল-১’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুস শহীদের সঙ্গে। তিনি আগামী নিউজকে জানান, সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্তকে বাস্তবে রুপ দিতে সরকারি কর্মকর্তারা বদ্ধ পরিকর। আমি আমার চিন্তা, স্বচ্ছতা ও নিষ্ঠা কাজে লাগিয়ে সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করেছি। এ জন্য প্রকল্পও বাস্তবায়ন হয়েছে। অর্থও সাশ্রয় করতে পেরেছি।
আগামীনিউজ/এএস