Dr. Neem on Daraz
Victory Day

বিশেষ তহবিল গঠনে ধীরগতি ব্যাংকের


আগামী নিউজ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২০, ০৮:৫১ এএম
বিশেষ তহবিল গঠনে ধীরগতি ব্যাংকের

দেশের পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের নীতিমালা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও প্রজ্ঞাপন জারির এক মাস পেরিয়ে গেলেও তহবিল গঠনে এগিয়ে আসছে না ব্যাংকগুলো। ৬০টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে এখন পর্যন্ত নিজস্ব অর্থে তহবিল গঠন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি ব্যাংক। এর বাইরে একটি বেসরকারি ব্যাংক বিনিয়োগের জন্য ৫০ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে।

এছাড়া এখন ১২টি ব্যাংক তহবিল গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছে বলে গতকাল বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) নেতাদের জানিয়েছেন গভর্নর ফজলে কবির।

পুঁজিবাজারের জন্য ব্যাংকগুলোর বিশেষ তহবিল গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারীকৃত এ-সংক্রান্ত নীতিমালার শর্তকে বাধা মনে করছেন ব্যাংকাররা। তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া নীতিমালায় বিশেষ কোনো প্রণোদনা নেই। নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল বা বন্ড জমা রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোতে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে। যদিও ব্যাংকগুলো যেকোনো সময়ই ট্রেজারি বিল বা বন্ড জমা রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোতে টাকা ধার করতে পারে। এক্ষেত্রে বিশেষ কোনো ছাড় দেখছেন না ব্যাংকাররা।

জারীকৃত নীতিমালায় বিশেষ তহবিলের অর্থ দিয়ে কোন ধরনের শেয়ার কেনা যাবে, সে ক্ষেত্রও নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি নিয়েও আপত্তি আছে ব্যাংকারদের। তারা বলছেন, তহবিলের ১০ শতাংশ অর্থ বাধ্যতামূলকভাবে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। যদিও দেশের মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর পরিস্থিতি ভালো নয়। এ অবস্থায় মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগে আপত্তি তুলেছেন ব্যাংকাররা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫ শতাংশ সুদে রেপোতে ঋণ পাবে ব্যাংকগুলো। ঘোষিত নীতিমালা অনুযায়ী, বিশেষ তহবিলের ৩০ শতাংশ অর্থ বাধ্যতামূলকভাবে অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজকে ঋণ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৭ শতাংশ। নীতিমালার এ শর্ত নিয়েও আপত্তি ব্যাংকারদের। তারা বলছেন, ৫ শতাংশ সুদে নেয়া ঋণ ৭ শতাংশে বিনিয়োগ করলে ব্যাংকের মুনাফা থাকে ২ শতাংশ। যদিও ঋণ পরিশোধের পুরো দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। এত কম মুনাফার জন্য বড় ঝুঁকি নেয়ার পক্ষপাতী নন তারা।

দেশের অন্তত এক ডজন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে বিশেষ তহবিল বিষয়ে এমন অভিব্যক্তিই উঠে এসেছে। তবে তাদের বেশির ভাগই নাম উদ্ধৃত না করতে অনুরোধ করেছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরুদ্ধে বক্তব্য গেলে রোষের শিকার হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারীকৃত নীতিমালার সীমাবদ্ধতাগুলো এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। তবে পুঁজিবাজারে টাকা ঢালার আগে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) সংস্কার ও পরিবর্তন করতে হবে। বাজারে গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠা না করে টাকা ঢেলে কোনো কাজ হবে না।

বিনিয়োগের চেয়ে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থায় সংস্কার ও পুনর্গঠন বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, দেশের পুঁজিবাজারের প্রধান সমস্যা হলো গভর্ন্যান্সের অভাব। কার্যকর জবাবদিহিতা না থাকায় বাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। আস্থাই হলো পৃথিবীর যে কোনো পুঁজিবাজারের প্রধান ও প্রথম পুঁজি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে অস্থিরতা চললেও কার্যকর কোনো সংস্কার করা হয়নি। বাজার ঠিক করতে হলে প্রথমে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় সংস্কার ও পুনর্গঠন করতে হবে। অন্যথায় হাজার কোটি টাকা ঢেলেও পুঁজিবাজার ঠিক হবে না।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকাররা যেসব বিষয় নিয়ে আপত্তি তুলছেন, সেগুলো ভিত্তিহীন। বাজারের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার স্বার্থেই বিনিয়োগের জন্য শ্রেণীবিভাজন করা হয়েছে। বিনিয়োগের শর্ত উন্মুক্ত থাকলে সবাই একই ধরনের শেয়ার কিনবে। এতে নির্দিষ্ট শ্রেণীর শেয়ারের দাম বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হবে। আবার ২০২৫ সালে বিশেষ তহবিলের মেয়াদ শেষ হলে তখন বাজারের দরপতন হতে পারে। সব বিষয় চিন্তা করেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালা তৈরি করেছে।

দেশের পুঁজিবাজারে অস্থিরতা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ধারাবাহিক দরপতনে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারী। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৬৩৩৬ পয়েন্ট। গত বৃহস্পতিবার তা ৪১২৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। সর্বশেষ কার্যদিবসেও প্রধান সূচক ১৬০ পয়েন্ট কমেছে। পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল চেয়েছিল বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। কিন্তু সরকার টাকা না দিয়ে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংককে। পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিশেষ তহবিল গঠন ও বিনিয়োগের নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি তফসিলি ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারবে। দেশে বর্তমানে ৫৯টি তফসিলি ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সে হিসেবে সব তফসিলি ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিদ্যমান বিনিয়োগের বাইরেও আরো সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা নতুন করে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

নীতিমালা জারির পর এখন পর্যন্ত কেবল রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও রূপালী ব্যাংক নিজস্ব অর্থায়নে বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের তহবিল গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস-উল-ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে আমরা সীমার মধ্যে থেকে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করছি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, এখনো বিশেষ তহবিল গঠন করা সম্ভব হয়নি। তবে সহসাই এ তহবিল গঠন করা হবে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোতে অর্থ নেয়ার পরিকল্পনাও আছে।

তবে বিশেষ তহবিলের নীতিমালাকে ‘হাত-পা বেঁধে দৌড়াতে বলার মতো’ বলে আখ্যায়িত করেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার। এক্সিম ব্যাংকের এ চেয়ারম্যান বলেন, দেশের অর্থনীতি ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পুঁজিবাজার ভালো হওয়া দরকার। যেসব কোম্পানি বছরে ১০-১৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দেয়, সেগুলোর দামও ১০ টাকার নিচে নেমে এসেছে। এটি কখনই প্রত্যাশিত হতে পারে না। পুঁজিবাজারের বিশেষ তহবিল গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব শর্ত দিয়েছে, তার ভিত্তিতে টাকা দেয়া না-দেয়া সমান কথা। এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এ-সংক্রান্ত অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। আশা করছি, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালার শর্তগুলো পুনর্বিবেচনা করবে।

পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নীতিমালাটি দিয়েছে, সেটি সর্বজনীন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, জারীকৃত নীতিমালা অনুসরণ করে ব্যাংকগুলো যদি বিশেষ তহবিল গঠন ও বাস্তবায়ন করে, তাহলে দেশের পুঁজিবাজারে অবশ্যই ইতিবাচক ফল দেখা যাবে। এরই মধ্যে নীতিমালার আলোকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তহবিল গঠন করেছে। অনেক বেসরকারি ব্যাংকও তহবিল গঠনের বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। আশা করছি, দেশের সব ব্যাংকই দ্রুততম সময়ের মধ্যে এগিয়ে আসবে।

তিনি আরো বলেন, যেসব ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত তারল্য আছে, তারা নিজেরা তহবিল গঠন করে বিনিয়োগ করবে। যাদের কাছে বিনিয়োগ করার মতো টাকা নেই, তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নেবে। দুই বছর পর বাজারে বিশেষ তহবিলের প্রয়োজনীয়তা না-ও থাকতে পারে। বাজার নিজ গুণেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। (খবর : দৈনিক বণিক বার্তা, ১৬ মার্চ, ২০২০) 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে