Dr. Neem on Daraz
Victory Day

কোনো অপূর্ণতা নেই আমার জীবনে : শাবানা


আগামী নিউজ | বিনোদন প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২০, ১২:৪৯ পিএম
কোনো অপূর্ণতা নেই আমার জীবনে : শাবানা

কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা

বিউটি কুইনখ্যাত নায়িকা শাবানা। ফুলহাতা কামিজ আর হিজাব সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে চিরচেনা এই অভিনেত্রীকে। চলচ্চিত্র ছেড়ে পরিপূর্ণ ধার্মিক হয়ে উঠেছেন বাংলা সিনেমার জীবন্ত এ কিংবদন্তি। স্বামী এক সময়কার জাঁদরেল প্রযোজক ওয়াহিদ সাদিক, দুই মেয়ে এবং একমাত্র পুত্রকে নিয়ে শাবানা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন গত ২৩ বছর ধরে। এবার গত ডিসেম্বরে ঢাকায় এসেছেন শাবানা। ফিরবেন চলতি সপ্তাহেই। এখনো যেন আগের মতো রঙিন শাবানা। শাবানার ব্যক্তি ও কর্মময়  জীবনের নানা বিষয় নিয়ে এই প্রতিবেদন-

শাবানার চলচ্চিত্রে আসার গল্প

চলচ্চিত্রে আমার প্রথম অভিনয় প্রয়াত এহতেশাম সাহেবের মাধ্যমে। উনি ছিলেন আমার বাবার ফুফাতো ভাই। ‘নতুন সুর’ আমার প্রথম মুভি। তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। উনি আমার বাবাকে বলেছিলেন, ‘তোর মেয়েটাকে আমি একটি ছবিতে নিতে চাই।’ বাবা তখন এভাবে বলেছিলেন, ‘আমার মেয়ে কীভাবে অভিনয় করবে! সে এত লাজুক কারো সামনেই আসতে চায় না।’ কিন্তু এহতেশাম সাহেব ছিলেন নাছোড়বান্দা! উনি বলেছিলেন, ‘তোর মেয়েটার মতো একটা মেয়েই আমি খুঁজছি। এরপর বাবা রাজি হন।’ ওই ছবির নায়ক-নায়িকা ছিলেন রহমান-রওশানারা। একটা বাড়িতে শুটিং হয়েছিল। প্রথম শট ছিল এমন, খুশিতে আমি দৌড়ে এসে বলব, ‘ভাইয়া ভাইয়া আপুর বিয়ে। আমাকে জড়িয়ে ভাইয়া বলবে তাই নাকি রে!’ প্রথম শটই ওকে ছিল। তারপর থেকে মায়ের চেয়ে বাবাই সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করেছেন। আমার বাবাও কিন্তু দুটো ছবি পরিচালনা করেছিলেন। ‘মুক্তি’ ও ‘মালকাবানু’। এর মধ্যে ‘মালকাবানু’ বাম্পার হিট ছবি। গানগুলো এখনো মানুষ গায়।

শাবানা প্রথম ওয়াহিদ সাদিকের প্রযোজনায় নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন ‘চকোরী’ মুভিতে। প্রথম মুভিতে পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ৫ হাজার টাকা। সেই ১৯৬৭ সালের ৫ হাজারের মূল্য অনেক ছিল। 

সিনেমা নিয়ে শাবানা বলেন, আগে বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম ছিল সিনেমা হল। হলে গিয়ে ছবি দেখত মানুষ। এখন এতগুলো মাধ্যম এসেছে যে মানুষ হলে যেতে চায় না। তাদের হলে ফেরাতে দরকার নিত্য নতুনত্ব। আর এটার জন্য প্রথম স্টেপ হতে হবে একজন ভালো পরিচালক। এর সঙ্গে গল্প। পরিচালক ভালো হলে ছবি এমনিতেই ভালো হয়। শিক্ষিত মেধাবী পরিচালক গল্প নির্বাচনেও সচেতন থাকেন। শিল্পীরা কাদার মতো। পরিচালক যেভাবে গড়বেন শিল্পী সেভাবেই স্ক্রিনে নিজেকে মেলে ধরতে পারে। ভালো ভালো জিনিস বাজার থেকে আনা হলো, কিন্তু রান্নার মানুষ যদি রান্নাটা ভালো করতে না পারে তাহলে সেটা তো খেতেও মজা লাগবে না। ঠিক একজন পরিচালকও তেমনি। এজন্যই বলা হয় ‘ফিল্ম ইজ অলয়েজ ডিরেক্টোরিয়াল মিডিয়া’।

শাবানার ব্যস্ত থাকার দিনগুলো

আগে কত সুন্দর সময় গেছে আমার। কত ব্যস্ততা মাথায় নিয়ে বাসায় ফিরেছি। মাসের ত্রিশ দিনই ক্যামেরার সামনে শুটিং করেছি। শুটিং শেষে পরের দিনের শুটিংয়ের আবার প্রস্তুতি। প্রথম প্রথম ওখানে গিয়ে খুব মিস করতাম। রাজ্জাক, আলমগীর, সোহেল রানা, বুলবুল আহমেদ, ফারুক, জাফর ইকবাল, জসিমদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করেছি। আমার সাথে কে থাকছে এটা আমি কখনই দেখতাম না। আমি দেখতাম আমার চরিত্র ও পর্দায় উপস্থিতি কেমন হবে সেটা। ববিতা, কবরী, আমি একই সময়কার। আমাদের মধ্যে কোনো জেলাসি ছিল না। শবনম, সুচন্দা আপা আমাদের সিনিয়র। সবার সঙ্গেই আমার সুসম্পর্ক ছিল। তবে আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ কম হতো। সে সময় সবাই কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত ছিল, পাশাপাশি ফ্লোরে শুটিং হলেও দেখা করা বা আড্ডা দেয়ার সময় হতো না। সকাল-দুপুর দুই শিফটে আমরা কাজ করতাম। রাতে ডাবিং থাকত। ব্যস্ততা থাকলেও কারো মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ছিল না। সবার মাঝে ভালো কাজের চেষ্টা ছিল। কাজের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল।

বিভিন্ন সমিতি নিয়ে শাবানার মন্তব্য

আমাদের সময়ে কাজের বাইরে অন্য কিছু করার সুযোগই পাওয়া যেত না। এমনকি তিনি ‘সমিতি’ বিষয়টির সঙ্গে পরিচিতও নন বলে জানান। শাবানা বলেন, শুনেছি এফডিসিতে এখন আর আগের মতো শুটিং থাকে না। বিভিন্ন সমিতির চর্চা হচ্ছে। আমাদের সময় এসব ছিল না। কাজ করে কূল পেতাম না। এফডিসিতে সমিতিচর্চার সঙ্গে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমাদের সময়ে সমিতিচর্চার সময় কোথায়? তখন সবাই কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কত ভালো কাজ উপহার দেয়া যায়, সেটা নিয়েই চলত প্রতিযোগিতা।

এ প্রজন্মের শিল্পীদের নিয়ে শাবানা

মিশা সওদাগরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। প্রথম যেবার মিশা আমাদের প্রোডাকশনে কাজ করেছিল সেই আমলে তাকে তিন লাখ টাকা দিয়েছিলাম। সে যে কি খুশি ছিল বলে বোঝাতে পারব না। এখনকার নায়কদের মধ্যে শাকিব খানের কাজের কথা একটু একটু শুনি। শুনেছি সে ভালো কাজের চেষ্টা করে যাচ্ছে। কলকাতাও নাকি কাজ করে পরিচিতি পেয়েছে। রিয়াজ, ফেরদৌস মনে হয় আগের মতো কাজ করছে না। এর বাইরে শাকিব ছাড়া অন্য নায়কদের বিষয়ে জানি না। নায়িকাদের মধ্যে মৌসুমী, শাবনূর, পপি, পূর্ণিমা প্রত্যেকেই ভালো শিল্পী। তাদের পরে আর কারো সম্পর্কে আমার ধারণা নেই।

বর্তমানে যেভাবে সময় কাটে

আমি যেগুলো কাজের চাপে করতে পারিনি এখন সেই কাজগুলো করছি। ঘর-সংসার করছি। জীবনের বেশিরভাগ সময় অভিনয় করতে করতে কেটে গেছে। বাচ্চাগুলো মিস করেছি। এখন ওদের দেখাশোনা করি, ওদের বাচ্চারা যখন নানুমনি বলে ডাকে, কাছে এসে খেলে তখন মনে হয় জীবনে এর চেয়ে সুন্দর কিছু হতে পারে না! এর বাইরে যেটুকু সময় পাই ইবাদত, রোজা পালন করি। ছবিটবি এখন খুব কম দেখা হয়। তবে আমার নাতি-নাতনিরা মাঝেমধ্যে ইউটিউবে দেখে। ওরা আমাকে বলে নানুমনি সত্যিই, রিয়েলি ইউ আর অ্যা বিগ অ্যাক্ট্রেস! মাঝেমধ্যে এও বলে, আমরা যদি তোমার মতো অভিনয় করতে চাই, হতে পারব? খুব মায়া লাগে ওদের মুখ থেকে এ কথা যখনই শুনি- বলছিলেন শাবানা।

শাবানার প্রাপ্তি

জীবনে প্রায় সবই পেয়েছি। ২৩ বছর অভিনয় থেকে দূরে থাকলেও আজো রাস্তায় কেউ দেখলে সমাদর করেন। পরিবার পরিজন নিয়ে সুখেই আছি। আমি চলে গেলে মানুষ আমাকে হয়তো মনে রাখবে, এমন কিছু কাজ করেছি। কোনো অপূর্ণতা নেই আমার জীবনে।

আগামীনিউজ/বিআর/এনএনআর

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে