যশোরঃ জেলার মনিরামপুর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে দু’জন ভূয়া নিবন্ধনে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকের উচ্চতর স্কেল পাইবার সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার সুবোলকাটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (গণিত) কল্যাণ কুমার রায় এবং শরীর চর্চার শিক্ষক সন্ধ্যা মন্ডলকে এ উচ্চতর স্কেল পাইবার সুযোগ করে দেওয়া হয় উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের বেতনের সাথে তাদের এ উচ্চতর স্কেল যোগ হয়েছে বলে এমপিও কাগজপত্র সূত্রে জানা গেছে। যার এমপিও কোড নম্বর ৫৫০৭০৯১৩০২, ঊওওঘ: ১১৬১৪৭।
অভিযোগে জানা যায়,গণিত বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে কল্যাণ কুমার রায় যোগদান করেন ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি। এই তারিখ হতে তিনি সরকারি বেতন-ভাতা ভোগ করে চলেছেন। যার বেতন সূচক সংখ্যা ১০৫২৯৪০। অভিযোগ উঠেছে কল্যাণ কুমার ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের পাশ করা যে নিবন্ধন পত্রের মাধ্যমে নিয়োগ দেন সেটি ভুয়া বলে দাবী করেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। তার ওই নিবন্ধন নম্বর ১২২৮৯৮৫৯/২০০৯। সন্ধ্যা মন্ডল শরীর চর্চা শিক্ষক হিসেবে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ নভেম্বর যোগ দেন ওই প্রতিষ্ঠানে। তিনিও সরকারি বেতন-ভাতা গ্রহণ করছেন ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১ নবেম্বর তারিখ হতে। ২০০৭ সালে পাশ করা যে নিবন্ধন পত্র দাখিল করা হয়েছে তার নিবন্ধন নং- ০৬৮১৪৫/২০০৭। অভিযোগ উঠেছে সন্ধ্যা মন্ডলের নিবন্ধনটিও ভুয়া।
কম্পিউটার শিক্ষক শিমুল রায় যার বেতন সূচক সংখ্যা-১০৬২১৭৮। তার নিবন্ধন নম্বর ১০০১৫১৩১/২০০৯। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের করা এ নিবন্ধনধারীর রোল নং- ৩১৮১২৩৭৭ বলে জানা গেছে। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল থেকে তিনিও সরকারি বেতন-ভাতা গ্রহণ করে চলেছেন। ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন দেবাশীষ রায়। তিনিও ভূয়া নিবন্ধনে দীর্ঘদিন ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরী করছেন বলে জানা গেছে।
তবেএ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার ঘোষ দাবী করেন তাদের নিবন্ধন ভুয়া কিনা সেটা আমার জানা নেই। বিদ্যালয়ের আগের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ তাদের নিয়োগ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২২ অক্টোবর তারিখে স্মারক নং- বেশিনিক/শি.শি/নিয়োগ অভিযোগ/৯০৩ পত্রে বেরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন (এনটিআরসিএ) এর এক পত্রালোকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস উপজেলার স্কুল ও মাদ্রাসায় নিবন্ধন সনদ মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করেন। এ সময় মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নেওয়া শতাধিক ভুয়া নিবন্ধন চিন্হিহ্নত করা সম্ভব হয়।
অভিযোগ রয়েছে এ সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ লক্ষ লক্ষ টাকার অর্থ বাণিজ্য করেন। তবে সে ভুয়া নিবন্ধনধারীদের ব্যাপারে চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত আসেনি বলে জানা গেছে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে ভুয়া নিবন্ধনে চাকরী নেয়া শিক্ষকদের চাকরী নিয়েই বৈধতার প্রশ্ন উঠেছে। তার মাঝেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় থেকে এদের অনেকেই বিধি মোতাবেক দাবী করে উচ্চতর স্কেল গ্রহণ করছেন।
এ ছাড়াও গোপিকান্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম) অর্পণা মন্ডল ভুয়া নিবন্ধনে চাকরী নিয়ে তিনিও উচ্চতর স্কেল গ্রহণের প্রস্তুতি চালাচ্ছেন। ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নিতাই চন্দ্র পাল জানান, অর্পণা মন্ডলের উচ্চতর স্কেল পাবার ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ইং তারিখে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদি প্রস্তুত করে দেয়া হয়েছে। অপর্না মন্ডল গত ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ হতে ভুয়া নিবন্ধনে ওই বিদ্যালয়ে চাকরী করছেন। তার বেতন সূচক সংখ্যা ১০৫৩৬১৯।
এ ব্যাপারে সুবোলকাটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিপক কুমার ঘোষ জানান, সবকিছু নিয়ে অহেতুক না লেখাই ভালো। প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে সবকিছু নিয়ম মেনে করা সম্ভব হয়না। আর যেটা করা হয়েছে তা মাধ্যমিক স্যারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, তারা ভুয়া নিবন্ধনধারী কি-না সেটা যাচাই বাছাই করতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) পাঠানো হয়েছে। আর নিবন্ধন বাছাইয়ের আগেই তাদের উচ্চতর স্কেলের কাগজপত্র ফরোয়ার্ডিং করা হয়েছিল।
জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল খালেক জানান, জেলা শিক্ষা অফিস থেকে সব তথ্য জানা সম্ভব হয় না। এটা মনিরামপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব। ভুয়া নিবন্ধনধারী উচ্চতর স্কেল পাবেন কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্কেল পাওয়ার প্রশ্নটাতো পরে, তার চাকরিটাইতো প্রশ্নবিদ্ধ।
আগামীনিউজ/এএইচ