ঢাকাঃ হাটবাজার, শপিংমল, মন্দির-মসজিদ-গির্জা, অফিস-আদালত সব চালু হয়েছে। এবার কি তবে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় চালু হতে যাচ্ছে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করতে গিয়েই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। একদিকে করোনা সংক্রমণ বিপুল হারে বাড়ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে যেমন দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে, অন্যদিকে আশঙ্কা বাড়ছে তাদের শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে। এই দুই সংকটের মাঝে দোদুল্যমান রয়েছে স্কুল খোলার মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মে মাসে বলেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে সেপ্টেম্বরের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা যাবে না। মূলত প্রধানমন্ত্রীর এই কথাকে আমলে নিয়েই শিক্ষা প্রশাসন কাজ করছে। স্কুল চালু হওয়ার আগে পাঠ্যক্রম পুনর্বিন্যাস হচ্ছে।
দেখা গেছে, বছরের প্রথম আড়াই মাস ষষ্ঠ শ্রেণির গণিত বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের স্বাভাবিক সংখ্যা ও ভগ্নাংশ, তৃতীয় অধ্যায়ের পূর্ণসংখ্যা এবং জ্যামিতির মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের ৪টি শিখন ফল পড়ানো হয়েছে। এরপর থেকে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্কুল বন্ধ রয়েছে। এখন আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল চালু হলে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৩ কার্যদিবস, ১ অক্টোবর থেকে স্কুল চালু হলে ৫০ কর্মদিবস এবং ১ নভেম্বর থেকে চালু হলে ৩০ কর্মদিবস পাওয়া যাবে। ঠিক এই রকম পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা কী কী অধ্যায় পড়বে তার খসড়া পাঠ্যক্রম তৈরি করছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
‘পাঠ্যক্রম পুনর্বিন্যাস’ নাম দিয়ে এনসিটিবি যে ৩টি খসড়া প্রণয়ন করছে তার মধ্যে প্রথমটি, সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল চালু হলে শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে ৪৬-৫০টি ক্লাস করতে হবে। অক্টোবরে চালু হলে ৩৩-৩৭টি ক্লাস করতে হবে। আর নভেম্বরে চালু হলে ২০টি ক্লাস করতে হবে। এই ক্লাসগুলো হওয়ার পর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বার্ষিক পরীক্ষা হবে।
প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এভাবেই পাঠ্যক্রমের পুনর্বিন্যাস হচ্ছে। তবে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি পরিবর্তন হচ্ছে না। কারণ এ দুই শ্রেণির বই একই। ফলে নবম শ্রেণিতে সব পাঠ্যসূচি শেষ না হলেও দশম শ্রেণিতে গিয়ে তা শেষ করার সুযোগ আছে। আর এই স্তরটি শেষ করে একেবারে নতুন আরেকটি স্তরে (উচ্চমাধ্যমিক) যায় শিক্ষার্থীরা। তাই এখানে হঠাৎ করেই পাঠ্যসূচি কমিয়ে দিলে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, পাঠ্যক্রম পুনর্বিন্যাসের জন্য গত ১২, ১৩ ও ১৬ এবং ১৭ আগস্ট ৪টি কর্মশালা হয়েছে। কর্মশালার প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে ৩টি খসড়া প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এগুলো এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেদিন স্কুল চালুর কথা বলবে, সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পড়ানো হবে এবং পরীক্ষাও নেয়া হবে।
এছাড়া এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, এবার শুধু যেটুকু না পড়ালেই নয় সেটুকুই পড়িয়ে বছরের শেষের দিকে পরীক্ষা নেয়া হবে। বাকি পড়াশুনা পরবর্তী শ্রেণিতে গিয়ে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনাকালে টেলিভিশন কিংবা অনলাইনের পাঠদান সারাদেশে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছেছে। করোনায় বন্ধের আগে বছরের প্রথম আড়াই মাসে যতটুকু পাঠ্যসূচি শেষ করা হয়েছিল, সেটি বাদ দিয়ে পরবর্তী পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হচ্ছে। নতুন যে পাঠ্যসূচি হচ্ছে, সেখানে পুনরাবৃত্তি হওয়া বিষয়গুলো বাদ দিয়ে সবচেয়ে জরুরি শিখনফলগুলো থাকবে।
ময়মনসিংহে অবস্থিত নেপের মহাপরিচালক মো. শাহ আলমও বলেছেন, সেপ্টেম্বরে খুললে কমবেশি ৮০ শতাংশের মতো পাঠ্যসূচি শেষ করা সম্ভব। আর ১ অক্টোবর খুললে ৭০ শতাংশের মতো এবং নভেম্বরে খুললে ৬০ শতাংশের মতো পাঠ্যসূচি শেষ করা যেতে পারে।
আগামীনিউজ/এএইচ