ঢাকাঃ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে টানা ১৪তম দিনে আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা।
সোমবার (২৪ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) শিক্ষকরা এই আন্দোলন করছে। বিটিএর সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ আন্দোলন কর্মসূচি সঞ্চালনা করেন।
কর্মসূচিতে জেলা এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষকনেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন। বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকেই চলছে নানান স্লোগান। ‘চলছে লড়াই চলবে’, সারা বাংলার শিক্ষকের এক দাবি, মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করতে হবে, করে দাও’ এমন স্লোগান দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। কর্মসূচির কারণে প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তার একটি অংশ বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষকরা বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে সরকারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি, স্কুলে তালা দিয়ে এখন অবস্থান ধর্মঘট করছি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের দাবি মানার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার আমাদের জাতীয়করণ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
বক্তারা বলেন, দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী দ্বারা। পরিতাপের বিষয় এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য।
তারা বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে দেওয়া হয়। তাছাড়া সহকারী প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল প্রদান না করার ফলে উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে।
এদিকে, আন্দোলনে থাকা শিক্ষকদের প্রতি ফের হুঁশিয়ারি দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এরই অংশ হিসেবে গতকাল রবিবার অননুমোদিত অনুপস্থিত শিক্ষকদের তালিকা প্রতিদিন জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এ হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে জাতীয়করণের দাবিতে অনড় এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।
জানা যায়, মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে রাজধানীতে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। গত বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আন্দোলনরত শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করায় গতকাল রবিবার থেকে স্কুলে স্কুলে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে আন্দোলনরত শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরেননি। দাবি আদায় করে স্কুলে ফিরবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এ অবস্থায় সারাদেশের স্কুলে স্কুলে ক্লাসে অননুমোদিত অনুপস্থিত থাকা সব শিক্ষকের তালিকা প্রতিদিন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কার্যালয় থেকে রবিবার আলাদা আলাদা নির্দেশ জারি করা হয়।
এদিকে মাউশির ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এ. এস. এম. আব্দুল খালেক স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, অননুমোদিতভাবে শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে তার তালিকা প্রতিদিন প্রেরণ করতে হবে। এতে আরও বলা হয়, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রধান শিক্ষক/সহকারী প্রধান শিক্ষক/সহকারী শিক্ষক উদ্বোধন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে রবিবার অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত রয়েছে তাদের নামের তালিকা সোমবার সকাল ১১টার মধ্যে প্রেরণ করার জন্য নির্দেশ করা হলো। আদেশের অনুলিপি ঢাকা অঞ্চলের সকল জেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট পাঠানো হয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ৫ মিনিট না হলেও অন্তত ২ মিনিট সময় আশা করছেন। উনি আমাদের নির্দেশ দিবেন, আর আমরা শুনে ক্লাসরুমে ফিরে যাবো। অন্যথায় আমরা ক্লাসরুমে ফিরে যাবো না।
উল্লেখ্য, গত ১১ জুলাই থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে টানা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে আসছে শিক্ষকরা।
বুইউ