ঢাকাঃ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশে কার্যত তফসিলি ব্যাংকসমূহের জন্য সুদ মওকুফ সংক্রান্ত নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী তফসিলি ব্যাংকের আসল ঋণ মওকুফ করার কোনো সুযোগ নেই।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মানি লন্ডারিং আইন অর্থপাচার প্রতিরোধে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৫টি মামলা হয়েছে। এই মামলাগুলোর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ৩৬৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
রোববার (১১ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন আওয়ামী লীগের সদস্য মোরশেদ আলম।
লিখিত জবাবে মুস্তফা কামাল জানান, বিদেশে অর্থ পাচার ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধকল্পে বর্তমানে দেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ কার্যকর রয়েছে। যা প্রয়োজনের নিরিখে ২০১৫ সালে আংশিক সংশোধন করা হয়। ২০১৫ সালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশের সিআইডি বিভাগ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে অর্থ পাচার প্রতিরোধে কাজ করে থাকে। এর মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ পাচার সংশ্লিষ্ট মানি লন্ডারিং মামলাসমূহের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনস্থ দপ্তর কর্তৃক অনুসন্ধানক্রমে মামলা ও তদন্ত পরিচালনা করা হয়।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙার প্রশ্নের লিখিত উত্তরে অর্থমন্ত্রী জানান, দেশের নয়টি ব্যাংক গত বছর ৪ হাজার ৬২১ জন গ্রাহকের অনুকূলে ৮ হাজার ৪০৪ কোটি ৫২ লাখ টাকার সুদ মওকুফ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৬২০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার সুদ মওকুফ সুবিধা কার্যকর হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তফসিলি ব্যাংকের মূল ঋণ (আসল) মওকুফ করার সুযোগ নেই। রাষ্ট্র মালিকানাধীন ৬টি ব্যাংক (অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ ডেডেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড, বেসিক ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড ও সোনালী ব্যাংক) এবং তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংক (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক) রয়েছে।
একই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে কার্যত তফসিলি ব্যাংকসমূহের জন্য সুদ মওকুফ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করা হয়। উক্ত নীতিমালা অনুযায়ী তফসিলি ব্যাংকের আসল ঋণ (মূলধন) মওকুফ করার কোনো সুযোগ নেই। গ্রাহকের অনুকূলে সুদ মওকুফ সুবিধা প্রদান করতে পারে: ঋণ আদায়ের স্বার্থে গ্রাহকের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে সুদ মওকুফ সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে। বন্ধ প্রকল্প হতে ঋণ আদায়, ঋণের জামানত, সহজামানত, প্রকল্প সম্পত্তি এবং প্রকল্প উদ্যোক্তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিক্রির পরেও পাওনা আদায়ের সম্ভাবনা না থাকলে সুদ মওকুফ সুবিধা প্রদান করা হয়।
পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে আইনগত ব্যবস্থাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণের পরেও পাওনা আদায় না হলে সুদ মওকুফ সুবিধা প্রদান করা হয়। ঋণ গ্রহীতার মৃত্যু অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, নদী ভাঙন বা দুর্দশাজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণ গ্রহীতাকে সুদ মওকুফ সুবিধা প্রদান করা হয়। উল্লিখিত ক্ষেত্র সমূহে সুদ মওকুফ সুবিধা প্রদানকালে ব্যাংকের তহবিল ব্যয় আদায় নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকসমূহের সুদ মওকুফ সংক্রান্ত সুবিধার সঙ্গে কোনো ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
এমআইসি