ঢাকাঃ চলতি আমন মৌসুমে মোরেলগঞ্জ উপজেলায় সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত গত সেপ্টেম্বর মাসের ৪৯ টন (৯৮০ বস্তা) বিসিআইসির টিএসপি সারের হদিস মিলছে না।
উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন নিশানবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বাচ্চু।
বিষয়টি জানতে চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন সচিবদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।
তবে সার লাপাত্তার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সর্বত্র চলছে নানা গুঞ্জন। বিষয়টি টক অব দ্য টাউনে পরিণত হলেও পর্দার আড়ালে থেকে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে উন্মোচিত হতে পারে ঘটনার প্রকৃত রহস্য এবং কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসতে পারে সাপ।
বিভিন্ন পর্যায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নসহ পৌরসভায় সরকারিভাবে ১৭ জন বিসিআইসি সার ডিলার নিযুক্ত রয়েছেন।
নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক ডিলার প্রতিমাসে সরকারের দেয়া ভর্তুকিকৃত সার চাহিদানুযায়ী উত্তোলন করে ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে নির্ধারিত নিয়মে বিক্রির কথা থাকলেও বাস্তবে রয়েছে চিত্র ভিন্ন।
সাধারণ কৃষকরা নির্দিষ্ট সময়ে নিজ নিজ এলাকার নিযুক্ত ডিলারের কাছ থেকে তাদের কাঙ্ক্ষিত সার না পেয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
বরাদ্দকৃত সারের মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি ও বিসিআইসি চট্টগ্রাম পতেঙ্গা ইউরিয়া সার কাগজে-কলমে বরাদ্দ থাকলেও গেল সেপ্টেম্বর মাসে পতেঙ্গার টিএসপি সার কোনো ডিলারই যথাসময়ে উত্তোলন করেননি।
অথচ সার সরবরাহকারী স্থান থেকে নির্দিষ্ট সময়ে বরাদ্দকৃত এ সার খালাস করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে সাধারণ কৃষকদের অভিযোগ, ইউনিয়ন পর্যায়ে নিযুক্ত অধিকাংশ ডিলারের নির্দিষ্ট কোনো গুদাম নেই। কেউ কেউ তড়িঘড়ি করে সম্প্রতি গুদাম ঘরের ব্যবস্থা করেছেন।
কোনো কোনো ইউনিয়নে ভাড়া করা অনুপযোগী ঘর থাকলেও নিয়মিত খোলা না থাকায় কৃষকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ইতোপূর্বে এসব বিষয় নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন তেলিগাতি ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদা আক্তার।
সরকার নিযুক্ত ডিলাররা যথাসময়ে সার বিতরণ না করায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। অপরদিকে এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে সার কিনতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কৃষকদের।
ডিলারদের মাধ্যমে যথাযথ নিয়মে সার সরবরাহ ও বিতরণ কার্যক্রম দেখভালের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নের দায়িত্বে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের একজন করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা।
বরাদ্দকৃত সার বিতরণকালে মেনটেইন করা হচ্ছে রেজিস্টার খাতা, আর এসব রেজিস্টারে স্বাক্ষর করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ওইসব উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। কিন্তু বিসিআইসি (পতেঙ্গা) টিএসপি সার বিষয়ে মেনটেইন করা হচ্ছে না রেজিস্টার এবং থাকছে না দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কোনো স্বাক্ষর।
এ সম্পর্কে বিভিন্ন ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে টিএসপি সার বরাদ্দ এবং বিতরণের বিষয়টি তারা অবগত নন।
মাঠপর্যায়ে মোরেলগঞ্জ পৌর শহরের বিসিআইসি সার ডিলার জয়গুরু ভাণ্ডারের মালিক বিমল রায়ের ভাই নকুল রায়, বলইবুনিয়া ইউনিয়নের মেসার্স সিকদার এন্টারপ্রাইজের ডিলার মো. নাসির শিকদার, পঞ্চকরন ইউনিয়নের ডিলার রিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক সামছুল আলম শেখ, তেলিগাতি ইউনিয়নের ডিলার আবুল বাশার, দৈবজ্ঞহাটী ইউনিয়নের শাহাদৎ এন্টারপ্রাইজের ডিলার মাও. শাহাদাত হোসেন অসুস্থ থাকায় দায়িত্বরত তার ছোট ভাই আবদুল গফফারসহ একাধিক ডিলারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সেপ্টেম্বর মাসের সরকারি বরাদ্দকৃত বিভিন্ন ধরনের সার উত্তোলন করে তারা ইতোমধ্যে বিতরণ করেছেন।
তবে তারা বিসিআইসি পতেঙ্গার সার উত্তোলন করেননি। সার উত্তোলন না করার কারণ জানতে চাইলে তারা কোনো সদুত্তর না দিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতর ভালো জানে বলে ইঙ্গিত করেন।
আবার এদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন, তারা টাকা জমা দিয়েছেন, শিগগিরই সার পাবেন। ইউনিয়ন পর্যায়ের সাধারণ কৃষকের অভিযোগ, আদৌ তারা ডিলারদের কাছ থেকে কখনও এ সারটি পাননি।
তাদের বিকল্প ব্যবস্থায় এ সারের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা সিফাত আল মারুফ বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের টিএসপি বরাদ্দকৃত ৪৯ টন সার ডিলাররা উত্তোলন করেননি।
তবে অনেক ডিলার টাকা জমা দিয়েছেন এবং শিগগিরই তারা সার পাবেন। এ বিষয়ে উপজেলা সার বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিসিআইসি সার নিয়ে মাসিক সমন্বয় সভায় অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় বিষয়টি আমলে নিয়ে কৃষি কর্মকর্তাকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এছাড়া মৌখিকভাবে জেলা প্রশাসক ও মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আগামীনিউজ/জেহিন