ঢাকাঃ ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় সংলগ্ন গুলশান শাখার ভল্ট থেকে ১৯ কোটি টাকা উধাও হয়েছে। গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল দেশের বেসরকারি এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে এমন তথ্য উদঘাটন করে। এখন ব্যাংকটির সব শাখার ভল্ট পরিদর্শন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনিয়মের তথ্য উদঘাটনের পরও শাখার কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। গুলশান থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিকে এ সংক্রান্তে একটি প্রতিবেদন ফলাও করে প্রকাশ করা হযেছে। সেই প্রতিবেদন বলছে, গত সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং পরিদর্শন বিভাগ-৭ এর এক যুগ্ম পরিচালকের নেতৃত্বে একটি দল ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখা পরিদর্শনে যায়। সকাল ১০টার আগেই তারা শাখায় গিয়ে উপস্থিত হন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী শুরুতেই তারা ভল্ট পরিদর্শন করেন। কাগজে-কলমে শাখার ভল্টে ৩১ কোটি টাকা দেখানো হলেও পরিদর্শক দল সেখানে ১২ কোটি টাকা পায়। তাৎক্ষণিকভাবে এর কোনো জবাব দিতে পারেননি শাখার কর্মকর্তারা। এরপর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নানা তৎপরতা শুরু করে শাখা কর্তৃপক্ষ। শাখা ব্যবস্থাপকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পক্ষও এ ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটির ব্যাখ্যা তলবের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই প্রতিবেদককে সংশ্নিষ্টরা জানান, প্রতিদিন লেনদেনের শেষ ও শুরুতে ভল্টের হিসাব মিলিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব শাখা ব্যবস্থাপক, সেকেন্ড অফিসার এবং ক্যাশ ইনচার্জের। ভল্টে টাকার হিসাবে কোনো গরমিল হলে তা মিলিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব এসব কর্মকর্তার। অনেক সময় হিসাবের ভুলে সামান্য টাকার গরমিল হতে পারে। তবে বিপুল অঙ্কের টাকার গরমিল হলে তা ফৌজদারি অপরাধ। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। তবে এ ঘটনায় থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরিও করেনি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। উল্টো গত মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত পর্যন্ত পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার তৎপরতা চলে। এছাড়া পরিদর্শনে গিয়ে যারা এই তথ্য উদঘাটন করেছেন, তাদের চাপে রাখা হয়। সাধারণভাবে কোনো শাখার পরিদর্শনে গিয়ে ভল্টে এ রকম গরমিল পাওয়া যায় না।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরীকে বারবার টেলিফোন ও এসএমএস করেও কোনো সাড়া পাননি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক। মঙ্গলবার ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হাসান ইকবালকে ফোন করলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা তিনি শোনেননি। ব্যাংকটির আরেক ডিএমডি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এ রকম ঘটনা এই প্রতিবেদকের কাছে তিনি প্রথম শুনলেন।
ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার অপারেশন ম্যানেজার সাইফুল আজম মাহমুদ বলেন, ‘ব্যাংকিং বিধিবিধানের বাইরে কিছু করার সুযোগ তাদের নেই। শাখায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কেউ ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ইউনিয়ন ব্যাংকের ভল্টের টাকায় গরমিল হতে পারে, উধাও বলা যাবে না। আমার অ্যাকাউন্টে দুই লাখ থাকার কথা, সেখানে এক লাখ ৯০ হাজার হতে পারে এটাও একটা হিসাবের গরমিল, সেটা যে পরিমাণ টাকাই হোক না কেনো। কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে ভল্টের টাকায় গরমিলের মতো প্রমাণ যদি বাংলাদেশ ব্যাংক পাই, তবে অবশ্যই যথাযথ নিয়ম মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমি শিউর না, ব্যাপারটা সম্পর্কে আমি এখনও তেমন কিছু জানি না। আসলে ব্যাংকটির কী গরমিল আছে জানি না, ভল্টে কম-বেশি হয়ে গেছে বা হয়ে থাকলে সেটাও ফল্ট। সুতরাং, এ ফল্ট যদি কোনো ব্যাংক করে তাহলে রুলস অ্যান্ড রেগুলেটরি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’