Dr. Neem on Daraz
Victory Day

বাস্তবায়ন হয়নি ‘জাতীয় সমন্বয় কমিটির’ সিদ্ধান্ত


আগামী নিউজ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২০, ১২:৩২ পিএম
বাস্তবায়ন হয়নি ‘জাতীয় সমন্বয় কমিটির’ সিদ্ধান্ত

ঢাকাঃ বিদেশে অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য নেয়া সরকারের গঠিত ‘জাতীয় সমন্বয় কমিটির’ সিদ্ধান্তগুলো তিন বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে নির্দেশ দেয়ার পরও তা কার্যকর হচ্ছে না। মূলত দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় এবং সংস্থার অনীহার কারণেই গুরুত্বপূর্ণ এসব সিদ্ধান্ত কার্যকরে বিলম্ব হচ্ছে। এতে দেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধ ও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অপরদিকে একই সিদ্ধান্ত প্রতিবারই সমন্বয় কমিটির বৈঠকের এজেন্ডায় ওঠে আসছে আলোচনার জন্য। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিলম্বের বিষয়টিও ওঠে আসছে জাতীয় সমন্বয় কমিটির কার্যপত্রে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, অর্থ পাচার প্রতিরোধের পদক্ষেপগুলো যে গতিতে এগুচ্ছে সেগুলো খুব কার্যকর হবে বলে আমি আশাবাদী না। কারণ পুঁজি পাচারের বড় একটি অংশে জড়িত আমলারা। আবার তাদের দিয়েই প্রতিরোধে কার্যকরের পদক্ষেপ খুব বেশি কাজে আসবে না। পাশাপাশি সরকারকে সত্যিকার অর্থে বিদেশে অর্থ পাচার প্রতিরোধ করার বিষয়টি চাইতে হবে। তাহলে সেটি সম্ভব হবে। কারণ অনেক রাজনীতিবিদও অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত।

জানা গেছে, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে। অর্থমন্ত্রী এ কমিটির সভাপতি। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা হিসেবে ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এ কমিটির ২০তম সভায় চারটি এবং ২১তম সভায় একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে একটি হচ্ছে অর্থ পাচারের মামলা পরিচালনার জন্য ‘পৃথক কর্তৃপক্ষ (অথরিটি সার্ভিস)’ বা ‘মামলা চালানোর স্বাধীন সেবা (ইন্ডিপেন্ডেট প্রসিকিউশন সার্ভিস)’ চালু করা। এই কর্তৃপক্ষের কাজ হবে সরকারের পক্ষে মামলাগুলো পরিচালনা করা। তবে এটি গঠনের আগে একটি সমীক্ষার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, লেজিসলেটিভ এবং সংসদবিষয়ক বিভাগের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই কমিটি প্রতি তিন মাস অন্তর প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় আইন ও বিচার বিভাগকে। কিন্তু অদ্যাবধি এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি।

আরও জানা গেছে, উল্লিখিত সিদ্ধান্তটি ২০১৯ সালের ১৬ মে জাতীয় সমন্বয় কমিটির ২১তম এবং একই বছরের ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ২৩তম সভায় আলোচনায় স্থান পায়। সর্বশেষ এটি চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সমন্বয় কমিটির ২৬তম বৈঠকেও আলোচনার এজেন্ডায় স্থান পাচ্ছে। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখন সিদ্ধান্তটি আলোচনাতেই ঝুলে আছে।

সূত্র আরও জানায়, একই সময়ে পৃথক আরও একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সমন্বয় কমিটির বৈঠকে। সেটি হচ্ছে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন অপরাধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যেসব মামলা করছে সেগুলোর আসামিরা নিু আদালত থেকে জামিন বা খালাস পায়। আর এ ব্যাপারে আপিলের বিষয়ে দ্রুত অ্যাটর্নি অফিসকে অবহিত করা। পাশাপাশি মামলার নথি চলাচল ডিজিটালাইজড করা- যাতে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দায়িত্ব দেয়া হয় অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস, আইন ও বিচার বিভাগ, লেজিসলেটিভ এবং সংসদবিষয়ক বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে। ২০১৭ সালের ১৮ জুন সমন্বয় কমিটির ২০তম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও অদ্যাবধি কার্যকর হয়নি। চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সমন্বয় কমিটির ২৬তম বৈঠকেও এটি আলোচনার এজেন্ডায় স্থান পাচ্ছে। এর আগে জাতীয় সমন্বয় কমিটির ২১তম, ২৩তম ও ২৫তম বৈঠকেও আলোচনার পরও সিন্ধান্তটি আলোর মুখ দেখেনি।

কার্যপত্রের সূত্রে জানা গেছে, অর্থ পাচার সংক্রান্ত মামলায় অবরুদ্ধ ও বাজেয়াফত সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ‘সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা কমিটি’ গঠনের সিদ্বান্ত নেয়া হয় সমন্বয় কমিটির ২০তম সভায়। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান পদ্ধতি পর্যালোচনা করে আধুনিক পদ্ধতিতে ‘সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা কমিটি’ গঠনে দায়িত্ব দেয়া হয় লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগকে। তিন বছরেও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। এটিও শেষ পর্যন্ত আলোচনায় স্থান পাচ্ছে জাতীয় সমন্বয় কমিটির আসন্ন ২৬তম বৈঠকে।

এদিকে অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা দেয়া ও গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি পৃথক উইং প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল জাতীয় সমন্বয় কমিটির ২০তম বৈঠকে। এটি করা হবে অপরাধ সম্পর্কিত সহযোগিতা আইন-২০১২ এর আওতায়। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ উইংয়ের কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। এই উইংয়ের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য লোকবল পদায়ন, প্রশিক্ষণ প্রদান, কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন ও বিদেশি অনুরূপ পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করতে একটি ওয়েবসাইট নির্মাণ করে সেখানে তথ্য প্রদান কেন্দ্রীয় সংস্থা কাজ করবে। গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্ত আজও পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।

সূত্র আরও জানায়, চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সমন্বয় কমিটির বৈঠকে আলোচনার স্থান পায় জমি রেজিস্ট্রেশন ক্ষেত্রে মার্কেট বেজড ট্রানজেকশন। অথচ এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত সমন্বয় কমিটির ২৩তম সভায়। মূলত জমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এটি কার্যকরের দায়িত্ব দেয়া হয় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে। শেষ পর্যন্ত এটিও কার্যকর হয়নি। সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকায় দেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। থামছে না দেশ থেকে অর্থ পাচার।

আগামীনিউজ/প্রভাত

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে