ঢাকা : চীনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের বিরূপ প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হলে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে অনেকেই। তবে দেশের অর্থনীতিতে এখনই এই ভাইরাসের কোন ক্ষতিকারক প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে শুরু থেকে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ মুহূর্তে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি আমদানি-রফতানি বাণিজ্য হচ্ছে। এছাড়া গত দশ বছরে একক দেশ হিসেবে চীন সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল ও পায়রা বন্দরসহ বড় বড় অবকাঠামো খাতে কাজ করছেন চীনের নাগরিকরা। সব মিলিয়ে চীনের প্রায় ১১ হাজার নাগরিক বিভিন্ন ব্যবসা ও পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন বাংলাদেশে। এ কারণে চীনের করোনা ভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হলে কিভাবে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যকে সুরক্ষা দেয়া যাবে সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১ টায় করোনাভাইরাস রোধকল্পে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এ সংক্রান্ত বৈঠক করা হবে। বৈঠকে সভাপত্বিত করবেন বাণিজ্য সচিব ডঃ জাফর আহমেদ। এসময় বিজেএমইএ, বিকেএমই ও বিটিএম শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাখায়াত হোসেন বলেন, ‘সব ষ্টেকহোল্ডারের সাথে কথা বলে কোন কোন পণ্য চিনে উৎপাদিত, যার মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে তা চিহ্নিত করা হবে। বাণিজ্যখাতের ষ্টেকহোল্ডারদের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘যদি মানুষের নিশ্বাসে প্রশ্বাসের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায়। আমদানি বা রফতানি ক্ষেত্রে চীনের কোনো নাগরিক যাতে বাংলাদেশে আসতে না পারে সেই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ভাইরাসের ফলে দেশের রফতানি বা আমদানি খাত কি ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে।’
জানা গেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়োজিত চীনের নাগরিকদের আপাতত নিজ দেশে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল ও পায়রা বন্দরসহ বড় বড় প্রকল্পে নিয়োজিত চীনা নাগরিকরা যারা নববর্ষ উদযাপনে দেশে গিয়েছেন তাদের আপাতত না আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আর যারা একান্ত প্রয়োজনে চীন থেকে আসছেন তাদের স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতায় রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ১৪ দিন বিশেষ পর্যবেক্ষণে রেখে তাদের কাজে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, সরকারের এসব উদ্যোগের ফলে চলমান প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের কবল থেকে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য রক্ষা পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘করোনাভাইরাস চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এখন পর্ষন্ত কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। তবে পুরো পরিস্থিতি সরকারের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
জানা গেছে, দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর প্রয়োজনীয় উপকরণসহ সব ধরনের শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি হয় চীন থেকে। এই বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার। অন্যদিকে, পোশাক ও চামড়াসহ বেশকিছু পণ্য রফতানি হয় চীনে। এ কারণে করোনাভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে চীন সব সময় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। দেশের আমদানি-রফতানির সিংহভাগ চীনের সঙ্গে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, গত এক দশকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে চীনের।’
তিনি আরো বলেন, ‘চীনের বহু যৌথ বিনিয়োগ রয়েছে এদেশে। এ কারণে করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীনের অর্থনীতিতে কোন সঙ্কট তৈরি করলে তা এদেশের অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করবে। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর মানুষের কোন হাত নেই এরপরও এই দুর্যোগে যেনো বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য এখনই করণীয় নির্ধারণ করা উচিত।’
আগামীনিউজ/এএইচ/আরআর/এস