ঢাকাঃ কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য একটি নীতিমালা এবং মাঝারি শিল্পের জন্য আলাদা আরেকটি নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
রোববার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘শিল্পনীতির সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এই দাবি জানান সংগঠনটির সভাপতি শামস মাহমুদ।
তিনি বলেন, গত তিনদশকে বাংলাদেশের শিল্পখাত প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও তা ছিল মূলত রপ্তানিমুখী তৈরি পোষাক খাত নির্ভর। তবে বর্তমানে শিল্পখাতের বহুমুখীকরণে চামড়া, পাট, কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, জাহাজ নির্মাণ, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যাল প্রভৃতি শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা আবশ্যক।
গবেষণা ও বিনিয়োগের অভাবে উদ্যোক্তারা প্রতিযোগীতার বাজারে নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিল্পনীতিতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে আরো বেশি প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের লক্ষ্যে শুল্ক ও নীতি সহায়তা দেয়া উচিত।
এছাড়া কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য একটি নীতিমালা এবং মাঝারি শিল্পের জন্য পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, অর্থনীতির শিল্পখাতের অধিক সংখ্যক উদ্যোক্তাই কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার মধ্যে অর্ন্তভুক্ত। এদের উন্নয়ন করা গেলে দেশে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাড়বে।
মন্ত্রী জানান, সিএমএসই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত মঞ্জুরকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৭০ কোটি টাকা। যা এখাতে ঘোষিত মোট প্রণোদনার ৩৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। তৈরি পোশাক ছাড়া প্রায় সব শিল্প খাতে প্রণোদনা বণ্টনে ব্যাংকগুলো পিছিয়ে রয়েছে। সরকারের ঘোষিত নীতিগত ও আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে যেন কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাগণ বঞ্চিত না হন, সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
শিল্পমন্ত্রী জানান, সিএমএসএমইতে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, বৃহত্তর শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজকে বলিষ্ঠকরণ, কর্মসংস্থান সহায়ক প্রবৃদ্ধি এবং গ্রামীণ ও শহুরে বসবাসকরীদের মাঝে বৈষম্য কমাতে শিল্পনীতি প্রণয়ন করা হবে।
শিল্প-কারখানায় দেশীয় দক্ষ লোকবল যেন কমর্সংস্থানের সুযোগ পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, করোনোর কারণে দেশের অর্থনৈতিক গতিধারায় মন্থরভাব দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থা উত্তরণে একটি টেকসই ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা আবশ্যক।
তিনি বলেন, রপ্তানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণ ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিষয়টি এখন বেশ প্রকট হয়েছে। এ অবস্থা উত্তরণে কৃষি খাত ও এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা অঞ্চল স্থাপন করা দরকার।
প্রণোদনার টাকা ফেরত দেয়ার সময়সীমা অন্তত ২ বছর বাড়ানো দরকার মন্তব্য করে আতিউর রহমান বলেন, এসএমই খাতে প্রণোদনার পরিমাণ আরো বাড়ানো দরকার। প্রণোদনার অর্থ যথাযথভাবে বিতরণ হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ।
এতে তিনি বলেন, গত একদশকে দেশের অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়ন হলেও কাঙ্খিত বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়েনি। করোনাকালে প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়ায় অর্থনীতি ঘুঁড়ে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য প্যাকেজের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস্ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হোসনে আরা শিখা জানান, চলতি মূলধন ক্যাটাগরীতে গত জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রদান করেছে। করোনা মেকাবেলায় বেশকিছু নীতি সহায়তাও দিয়েছে। আগামী একবছরের মধ্যে প্রণোদনার প্যাকেজের প্রায় ৭৫ শতাংশ উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করা সম্ভব হবে।
তবে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স খাতের উদ্যোক্তাদের অনেকেরই ট্রেড লাইসেন্স নেই। ফলে তাদের ঋণ দেয়া যাচ্ছে না। এখাতের উদ্যোক্তাদের ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ঋণ সহায়তা দেয়া যায় কিনা সেই বিষয়ে ভাবা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
আগামীনিউজ/প্রভাত