Dr. Neem on Daraz
Victory Day

১৭ বছর ধরে মেডিকেলের প্রশ্নফাঁসে ৭ চিকিৎসক, আয় শত কোটি টাকা


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৩, ০২:১৮ পিএম
১৭ বছর ধরে মেডিকেলের প্রশ্নফাঁসে ৭ চিকিৎসক, আয় শত কোটি টাকা

ঢাকাঃ মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকায় সাত চিকিৎসকসহ একটি চক্রের ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। চক্রটির অন্তত ৮০ সক্রিয় সদস্য প্রায় ১৭ বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে সিআইডি।

সিআইডি জানিয়েছে, ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১০ বার প্রশ্নফাঁস করেছে চক্রটি। আর এতে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। গত ৩০ জুলাই থেকে ১০ দিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ৯টি মোবাইল, ৪টি ল্যাপটপ, নগদ ২ লাখ ১১ হাজার টাকা, ১৫ হাজার এক শত বিদেশি মুদ্রা থাই বাথ, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৫ টি চেক বই, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ও ভর্তির এডমিট কার্ড জব্দ করা হয়েছে।

রোববার (১৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১২ টায় রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।

তিনি বলেন, পাবলিক পরীক্ষা সামনে আসলেই একশ্রেণির চক্র বেশ সক্রিয় হয়ে উঠে প্রশ্নফাঁস করার জন্য। এই চক্রটি নানা কায়দায় প্রশ্নফাঁস যেমন করে, তেমনি গুজব ছড়িয়ে পরিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভ্রান্তও করে। শিক্ষাখাতের ক্যানসার হিসেবে বিবেচিত এসব প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রকে নির্মূল করতে কাজ করছে পুলিশ।

সিআইডির প্রধান বলেন, দেশের মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে নিয়মিত প্রশ্নফাঁসকারী বিশাল এক সিন্ডিকেটের খোঁজ পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ। ২০২০ সালে মিরপুর মডেল থানায় করা এক মামলায় সম্প্রতি চক্রের অন্তত ৮০ জন সক্রিয় সদস্য বিগত প্রায় ১৬ বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছে। প্রশ্নফাঁস করে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন এমন শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম পেয়েছে সিআইডি। এর মধ্যে অনেকে পাশ করে ডাক্তারও হয়েছেন।

গ্রেফতারের বিষয়ে অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, গত ৩০ জুলাই থেকে ১০ দিন ঢাকাসহ টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল জেলায় অভিযান পরিচালনা করে এ চক্রটির ১২ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ৭ জনই ডাক্তার। তাদের সবাই বিভিন্ন মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার, নয়তো প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে প্রশ্নফাঁস করতেন।

২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে অন্তত ১০ বার এই চক্র মেডিকেলের প্রশ্নফাঁস করেছে। গ্রেফতার আসামিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেওয়া বিপুল সংখ্যক ব্যাংকের চেক এবং এডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। এদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়ার কথাও জানান তিনি।

প্রশ্নফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা তার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম রয়েছে। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলেও জানান সিআইডি প্রধান।

সিআইডি প্রধান বলেন, ২০২০ সালের প্রশ্নফাঁসের একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই চক্রের মূলহোতা জসীম উদ্দীন ও তার খালাতো ভাই মোহাম্মদ সালামকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া জবানবন্দিতে এই ১২ জনের নাম উঠে আসে। গ্রেফতারদের মধ্যে ময়েজ উদ্দিন আহমেদ ও সোহেলী জামান দুজনই চিকিৎসক এবং স্বামী স্ত্রী। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ছাত্র শিবিরে জড়ান ময়েজ উদ্দিন। সে চিহ্নিত শিবির নেতা। তার স্ত্রী এবং সে ফেইম নামক কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যায়।

তিনি জানান, গ্রেফতার আরেক চিকিৎসক মো.আবু রায়হান কিশোরগঞ্জের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী দেখেন। তিনি ঢাকা ডেন্টাল কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছেন। প্রাইমেট কোচিংয়ের মাধ্যমে ২০০৫ সাল থেকে এই চক্রের সঙ্গে জড়ান তিনি।
 
সিআইডির এ কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতার চিকিৎসক জেড এম সালেহীন শোভন (৪৮) এই চক্রের মূলহোতা। তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করে থ্রি-ডক্টরস নামক কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত হন।

গ্রেফতার আরেক চিকিৎসক মো.জোবাইদুর রহমান জনি (৩৮) মেডিকো ভর্তি কোচিং সেন্টারের মালিক। ২০০৫ সাল থেকে এই চক্রে তিনি জড়িত। 

সিআইডির দাবি, ডা. সালেহীন নামকরা বিভিন্ন ডাক্তারের সন্তানদের প্রশ্নফাঁস করে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ করে দিয়েছেন। এছাড়া জনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। গ্রেফতার অপর চিকিৎসক জিলুর হাসান রনি (৩৭) জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালে (নিটোর) কর্মরত। ২০০৫ সাল থেকে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত তিনি।

গ্রেফতার হওয়া বাকি ব্যক্তিদের বিষয়ে এ কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মুক্তার (৬৮) মেডিকেল প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের হোতা জসীমের বড় ভাই। তিনি নিজে আলাদা একটি চক্র চালাতেন। প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শত শত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। গ্রেফতার রওশন আলী হিমু (৪৫) চক্রের হোতা জসীমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং পুরোনো সহযোগী। রওশন আলী হিমু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ২০০৬ সাল থেকে মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত। গ্রেফতার আক্তারুজ্জামান তুষার (৪৩) মেডিকেল প্রশ্নফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীমের ঘনিষ্ঠ সহচর। ই-হক নামে কোচিং সেন্টার চালাতেন তিনি। 

সিআইডি কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতার জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী (৪৫) মেডিকেল প্রশ্নফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসিমের পুরোনো সহচর। ২০০৫ সাল থেকে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত তিনি। প্রাইমেট, থ্রি ডক্টরসসহ বিভিন্ন মেডিকেল কোচিং সেন্টারে ফাঁস করা প্রশ্ন সরবরাহ করতেন তিনি। গ্রেফতার আব্দুল কুদ্দুস সরকার (৬৩) টাঙ্গাইলের মিন্টু মেমোরিয়াল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসরে গেছেন। মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের হোতা জসীমের ঘনিষ্ঠ সহচর। ২০০৬ সালে মেয়ে কামরুন নাহার কলিকে ভর্তির মাধ্যমে এই চক্রে জড়ান।

বুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে