ঢাকাঃ স্ত্রী-সন্তানকে রেখে ডাকাতির মামলায় কারাগারে গিয়েছিল রাসেল হোসেন ওরফে কাটা রাসেল (৩১)। সেখানে মাঝেমধ্যেই দেখতে যেতো তার স্ত্রী লাবণ্য সিদ্দিকা সাথী (২৬)। এতে সহায়তা করে রাসেলের বন্ধু রাকিব হোসেন (৩১)। এর একপর্যায়ে সাথীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভুত সম্পর্ক গড়ে ওঠে বন্ধু রাকিবের। পরে রাসেলকে তালাক দিয়ে রাকিবকে বিয়েও করে সাথী। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত রাসেল কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে কৌশলে রাকিবকে রেললাইনে ডেকে নিয়ে খুন করে। সম্প্রতি নাটোরে ঘটে যাওয়া ঘটনা এটি। অভিযুক্ত সেই রাসেলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংস্থাটি বলছে, তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ মোট ১৩টি মামলা রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) সকালে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয় বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
গত ১ জুন বেলা ১২টার দিকে নাটোর রেলওয়ে স্টেশনের ৩ নং প্লাটফর্মের ওভার ব্রিজের উপরে রাকিবকে ছুরিকাঘাত করে রাসেল। পরে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, ‘নাটোরে রাকিব হত্যার সঙ্গে জড়িত রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত রবিবার (১২ জুন) ডিএমপি’র মিরপুর মডেল থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। নিহত রাকিব ও অভিযুক্ত রাসেল দুজনই বন্ধু ছিল। রাসেলের সাবেক স্ত্রীকে বিয়ে করেছিল রাকিব। পরে কারাগার থেকে বের হয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বন্ধু রাকিবকে খুন করে সে।’
রাসেলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিআইডি জানায়, প্রায় ৭ বছর আগে নিজেদের পছন্দে নাটোর সদরের বৌদ্ধনাথপুর এলাকার লাবণ্য সিদ্দিকা সাথী (২৬) নামে একক তরুণীকে বিয়ে করে রাসেল। তাদের সংসারে পাঁচ বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। চলতি বছরের ২৩ মার্চ একটি ডাকাতি মামলায় সে গ্রেফতার হয়। তাকে কারাগারে যেতে হয়। রাসেলকে কারাগারে দেখতে যেতে রাকিবের সহযোগিতা নিতো সাথী। এতে তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। এক পর্যায়ে রাসেলকে ডিভোর্স দিয়ে রাকিবকে বিয়ে করে সাথী। রাকিবকে বিয়ে করে নতুন দাম্পত্য জীবন শুরু করে। রাসেল কারাগারে বসে বিয়ের খবর পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়। পরম বন্ধু থেকে তারা চরম শত্রুতে পরিণত হয়।
রাকিবের প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ছক কষতে থাকে রাসেল। গত ৩১ মে সে জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় এসে খুঁজতে থাকে রাকিবকে। পরে গত ১ জুন বেলা আনুমানিক ১২টার দিকে কৌশলে রাকিবকে ডেকে নিয়ে আসে নাটোর রেলওয়ে প্লাটফর্মের ৩ নং ওভার ব্রিজের উপর। সেখানে রাকিব তার স্ত্রীর সাবেক স্বামী এবং তার সাবেক বন্ধু রাসেল হোসেন ওরফে কাটা রাসেলকে দেখা মাত্রই দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে তার সঙ্গীয় লোকদের সহায়তায় হত্যার উদ্দেশ্যে তার পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় উপস্থিত লোকজন তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
হত্যার ঘটনায় রাকিব হোসেনের বড় ভাই মো. শাকিল হোসেন (২৭) মো. রাসেল ওরফে কাটা রাসেলকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
রাসেলের বিরুদ্ধে খুন, অস্ত্র আইন, দস্যুতা, চাঁদাবাজি, চুরি, নারী নির্যাতন, ও অন্যান্য ধারার আইনে মোট ১৪টি মামলা রয়েছে। তারমধ্যে দুটি মামলা তদন্তাধীন ও অবশিষ্ট ১২টি মামলা আদালতে বিচারাধীন।
এমবুইউ