Dr. Neem on Daraz
Victory Day

রাজ-পিয়াসার ‘হানি ট্র্যাপ’, স্কোয়াডে অর্ধশত তরুণী


আগামী নিউজ | অপরাধ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২১, ১০:২১ এএম
রাজ-পিয়াসার ‘হানি ট্র্যাপ’, স্কোয়াডে অর্ধশত তরুণী

ঢাকাঃ ‘হানি ট্র্যাপ’ শিকার ধরার একটি টোপ। ব্ল্যাকমেলিং কারবারে এর মাধ্যমে সুন্দরী তরুণীদের ব্যবহার করছিল বহুল আলোচিত প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ ও মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা সিন্ডিকেট। টার্গেটভিত্তিক শিকার ধরার জন্য এসব তরুণীকে ‘টোপ’ হিসেবে ব্যবহার করে তারা।

অভিজাত এলাকায় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেল করার জন্য প্রায় অর্ধশত তরুণীর সমন্বয়ে বিশেষ ‘হানি ট্র্যাপ স্কোয়াড’ গঠন করেন রাজ, পিয়াসা, মৌ, জিমি, মিশু হাসান, জিসান ও তাদের সহযোগীরা। গ্রেফতার হওয়ার পর রিমান্ডে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদে তারা এসব তথ্য দিয়েছেন। রাজের মোবাইল ফোনে কমপক্ষে ১৭টি পর্নো ভিডিও পেয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, যার সবগুলো রাজ নিজেই তৈরি করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া রাজের মোবাইলে পাওয়া গেছে বহু তরুণীর খোলামেলা ছবি। এসব ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন জনকে পাঠিয়ে রাজ তার আসরে নিয়ে যেতেন। এক পর্যায়ে গোপনে ভিডিও ধারণ করে রেখে চালিয়ে যেতেন ব্ল্যাকমেল কারবার।

৪ আগস্ট বনানীর বাসা থেকে রাজ মাল্টিমিডিয়ার স্বত্বাধিকারী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল রাজকে গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় বনানীর কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক, বিভিন্ন ধরনের সেক্স টয় ও বিশেষ কৌশলে তৈরি একটি ‘খাট’ উদ্ধার করা হয়। ওই খাটে পর্নো ভিডিও তৈরি করা হতো। এসব অ্যাডাল্ট কনটেন্ট বিশ্বের বিভিন্ন অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইটে বিক্রি করতেন রাজ ও তার সহযোগীরা। পরীমণি-রাজ-পিয়াসা চক্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া ১৪ মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

তদন্ত সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘‘রাজ-পিয়াসার ‘হানি ট্র্যাপ স্কোয়াড’-এ প্রায় অর্ধশত তরুণী রয়েছে। নজরুল জেরার মুখে জানিয়েছেন, বেশ কিছু তরুণীকে তিনি মডেল ও নায়িকা বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে তার স্কোয়াডে ভিড়িয়েছেন। আবার কিছু তরুণী নিজ থেকেই তার কাছে ধরা দিয়েছেন। তারা বিভিন্ন সময় তার কাছে কথিত কাজের জন্য আসেন। কাজের জন্য আসা তরুণীদের তিনি খোলামেলা ছবি, এমনকি বিশেষ অঙ্গের ছবি তুলে দিতে বলতেন। তরুণীরা কথিত কাজ পাওয়ার আশায় রাজকে এসব ছবি তুলে দিতেন। রাজ এসব ছবি তার নির্দিষ্ট সার্কেলের ব্যক্তিদের হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিতেন। পরে তার স্কোয়াডের তরুণীদের সেখানে পাঠাতেন তিনি। আর কিছু ক্ষেত্রে টার্গেট ব্যক্তি ধরা না দিতে চাইলে স্কোয়াডের তরুণীদের তার নম্বর দিতেন। ওই তরুণী কথা বলে কৌশলে তাকে বাগে নিয়ে আসতেন।’’

সিআইডির ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘নজরুল রাজ ও পিয়াসা প্রথম দিকে একই সিন্ডিকেটভুক্ত ছিলেন। কিন্তু ব্ল্যাকমেল করার প্রতিযোগিতা ও বিভিন্ন তরুণীকে বাগে পাওয়া নিয়ে এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। পিয়াসা বিভিন্নভাবে নজরুলকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করেন। আবার নজরুলও নানাভাবে পিয়াসাকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করেন। গোপনে তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের কাছেও পরস্পরের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ দেন। তবে দুই পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ রক্ষা করতেন শরিফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান ও মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসান। তারাও পিয়াসা ও রাজের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন জনের কাছে তরুণীদের পাঠাতেন।’ তদন্ত কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, নজরুল রাজের ছত্রচ্ছায়ায় নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিল ১০-১২ জনের একটি বড় সিন্ডিকেট।

চক্রের সদস্যরা লেটনাইট পার্টির নামে মদ-মাদক সেবনের ও ডিজে পার্টির নামে নাচ-গানের আসর বসাতেন। সেখানে বিত্তবান অনেক ব্যবসায়ী ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা আসতেন। তারা তরুণীদের সঙ্গ উপভোগ করার ভিডিও ধারণ ও ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে নজরুর রাজ আরও জানান, তিনি আগে কিছু ভুল করলেও বিয়ের পর ‘ভালো হয়ে’ গেছেন। এখন সেভাবে নারীদের কাছে যান না। আর কাজের প্রয়োজনে অনেক সময় অভিনেত্রী ও মডেলদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি কীভাবে তার চক্রে তরুণীদের যুক্ত করেছেন সে বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য দেন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ ছিল তরুণী এবং খদ্দেরদের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে