কুড়িগ্রামঃ পবিত্র ঈদুল আজহাকে ঘিরে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন হাটবাজার গুলোতে জমে উঠতে শুরু করেছে কুরবানির পশুর হাট।
কুরবানি যতই ঘনিয়ে আসছে পশুর হাটে বিক্রেতার ভিড় ততই বাড়ছে। কিন্ত সেই তুলনায় হাটগুলোতে ক্রেতা অনেক কম। এ অবস্থায় গরু ছাগল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক বিক্রেতাসহ খামারিরা।
এদিকে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে উজানের পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় ডুবে গেছে চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল। নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে কুড়িগ্রামের সবগুলো নদ-নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলের মানুষজনের গবাদি পশু লালন পালন ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় এসব এলাকার মানুষজন পশু বিক্রির চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে শুধুমাত্র ঈদের কুরবানিতে বিক্রির জন্য গৃহস্থ পর্যায় থেকে শুরু করে খামারি-ব্যবসায়ীরা পশু লালন পালন করে থাকেন। এসব পশুও যাচ্ছে আশেপাশের হাটবাজারে এমনকি অন্য জেলায়। তাই পশুর হাটে আমদানি বেশি থাকায় তুলনামূলকভাবে ক্রেতা সংকটে দুশ্চিন্তায় আছে বিক্রেতারা।
গত মঙ্গলবার বিকেলে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার একমাত্র ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপুরহাটের পশুরহাট ঘুরে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পশু নিয়ে হাটে এসেছেন পাইকারি বিক্রেতা, খামারি ও গবাদিপশু পালনকারী প্রান্তিক কৃষকগণ। হাটে দেশি গরু বেশি। প্রতি বছর ঈদুল আজহার সময় খামারিরা ও পালিত গবাদিপশু বিক্রি করে তাদের সংসারের উন্নয়ন করে। বিক্রেতারা বড় গরুর দাম হাঁকছেন দুই লাখ থেকে তিন লাখ টাকা। এ ছাড়াও ৮০ থেকে ১০০ কেজি ওজনের গরুর দাম ৯০ থেকে এক লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে। প্রতি কুরবানির ঈদে জেলার বাইরে থেকে বেশ কিছু পাইকার আসেন পশু ক্রয়ের জন্য। এবার সাধারণ ক্রেতা ও পাইকারদের সংখ্যাও হাতে গোনা। তাই ক্রেতা-সংকট থাকায় জমে উঠছে না জেলার কোরবানির হাটগুলো।
একাধিক খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গো-খাদ্যের দাম তুলনামূলক বৃদ্ধি পাওয়ার পরেও কোরবানির পশুর দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আছে। এবার মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি। বিজিবির কড়া নজরদারিতে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হয়েছে। সে কারণে গরু বিক্রোতা ও খামারিরা লাভবান হবেন বলে আশা করছিলেন তারা। কিন্তু অতি বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে হাটে পশু আমদানির তুলনায় ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে।
জেলার সবচেয়ে বড় হাট যাত্রাপুর হাট ইজারাদার মনিরুজ্জামান জনি শেখ বলেন, আমাদের হাটে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক গরু আসছে। কিন্ত এবার খামারিরা ও গৃহপালিত পশু বিক্রেতারা আশানুরুপ দাম পাচ্ছে না। ক্রেতা একেবারেই কম। এদিকে উজানের ঢলে ও অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে নদী নালায় পানিতে ভরে গেছে। চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল গুলো প্লাবিত হয়েছে। এবার হাট জমবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। তবে আরও দুটি হাট আছে দেখা যাক কি হয়।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, আজ হাটে বিভিন্ন গবাদিপশুর আমদানি মোটামুটি ভালো। তবে আমদানি হিসেবে তুলনামূলক ক্রেতা কম। আর দাম গতবারের চেয়ে একটু বেশি বোঝা যাচ্ছে। এই হাটে বেশিরভাগ গরু বিভিন্ন চর থেকে আসে। এখন চরের নিম্নাঞ্চলে পানি ওঠায় আগামী হাটে গরু আমদানি বেশি হবে।
কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইউনুছ আলী বলেন, জেলায় কুরবানির পশুর কোনো অভাব নেই। বরং জেলা থেকে অন্য জেলায় উদ্বৃত্ত পশু পাঠানো হবে। দাম গতবারের চেয়ে সামান্য বৃদ্ধি পেলেও ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই থাকবে।
জেলায় ৯টি উপজেলার তিনটি পৌরসভাসহ ৭৩টি ইউনিয়নের গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে ২-৪টি গরু, ছাগল পালন করে। এছাড়া ছোট বড় খামারি তো আছেই। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় বিক্রয় করতে পারবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ থেকে জানা যায়, জেলায় মোট খামারের সংখ্যা ৩২ হাজার ৫৬৪টি। এবার জেলায় কুরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ২ লক্ষ ৭০ হাজার ১৬৭টি।
শাহীন আহমেদ/বুইউ