Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ঈদুল আজহার ৬ষ্ঠ দিনেও পর্যটকের ভীড়ে কুয়াকাটা লোকে লোকারন্য


আগামী নিউজ | উপজেলা প্রতিনিধি, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২২, ০৪:৩৮ পিএম
ঈদুল আজহার ৬ষ্ঠ দিনেও পর্যটকের ভীড়ে কুয়াকাটা লোকে লোকারন্য

পটুয়াখালীঃ এবছর পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে পর্যটকদের ভীড়ে লোকে লোকারন্য হয়ে উঠেছে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের লীলাভূমি পর্যটন কেন্দ্র সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। ঈদ পরবর্তী ৬ষ্ঠ দিন শুক্রবার বেলা বাড়ার সাথে সাথেই আগত পর্যটকদের যেন ঢল নামে, তীল ধরনের ঠাই নেই কোথাও, একেবারে কানায় কানায় পরিপূর্ন। তীর ঘেষা সৈকতের বালিয়ারীতে গাঁ ভাসিয়ে নেচে-গেয়ে আনন্দ উম্মাদনায় মেতে, বেঞ্চিতে বসে সমুদ্র ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছেন পর্যটকরা। কেউ আবার সৈকতের দোকানগুলোতে কাঁকড়া, চিংড়িসহ নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছের ফ্রাই ও
বারবিকিউ খাচ্ছেন। লেম্বুর বন থেকে গঙ্গামতি। ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের পর্যটন স্পটগুলোতে এখন পর্যটকদের গুঞ্জনে সরগরম পুরো এলাকা। কোথাও যেন তিল ধরনের ঠাঁই নেই। এবার পর্যটকের রেকর্ড সংখ্যক এমন ভীড়ে হাসি ফুটেছে পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীদের মুখে।

স্থানীয় সূত্র ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাগরের নীল জলরাশি আর ঢেউয়ের গর্জন ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য যেনো পর্যটকদের মন-প্রাণ কেড়ে নিয়েছে শতভাগ। শামুক-ঝিনুকের দোকানসহ বিপনি-বিতানগুলোতে রয়েছে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। এদিকে কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থান কুয়াকাটার কুয়া, নারিকেল কুঞ্জ, ইকোপার্ক, জাতীয় উদ্যান, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার, সীমা বৌদ্ধবিহার, সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল খ্যাত ফাতরার বনাঞ্চল, গঙ্গামতি, কাউয়ারচর, লেম্বুরচর, শুঁটকি পল্লীসহ সৈকতের জিরোপয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে মনোমুগ্ধকর বেলাভূমি, একাধিক নয়নাভিরাম লেক, সংরক্ষিত বনায়নসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখছেন আগত পর্যটকরা। থেমে নেই সৈকতে ফটোগ্রাফার ও ঘোঁড়ার দৌড়। ঈদের লম্বা ছুটি উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছে পর্যটকরা। পর্যটকদের কুয়াকাটা ভ্রমনের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে এবার ছাড়িয়ে গেছে যা পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে। প্রায় দুই যুগ ধরে কুয়াকাটায় আগমন ঘটছে দেশী-বিদেশি বহু পর্যটকের। একসময় ঢাকা থেকে সড়কপথে কুয়াকাটায় যেতে সময় লাগতো ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। তবে এবার পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে ৬ ঘণ্টায় কুয়াকাটা আসা যায়।

পরিবার-পরিজন নিয়ে সমুদ্রে বেড়াতে আসা পর্যটক হামিদুর রহমান বলেন, কুয়াকাটা আমাদের একটি প্রিয় জায়গা। সুযোগ এবং সময় পেলেই সবসময় এখানে বেড়াতে আসি। তবে এবছর খুব কম সময়ের  মধ্যে কুয়াকাটায় এসে পৌঁছাই।

আরেক পর্যটক জেসমিন সুলতানা বলেন, কুয়াকাটা এসেছি অনেকবার। এর আগে অনেকগুলো ফেরি পার হতে হতো। পথে পথে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো। এবার পদ্মা সেতু পার হয়ে মাত্র ৬ ঘণ্টার কম সময়ে কুয়াকাটায় আসলাম। হোটেলে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে সৈকতে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়েছি। ঘুরে ঘুরে দেখলাম বিভিন্ন দর্শনীয় স্পট। শেষ বিকেলে সৈকতের তীরে  দাড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখেছেন।

হোটেল সমুদ্র বাড়ির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: জহিরুল ইসলাম মিরন বলেন, প্রতিবছর ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা ও সরকরি ছুটিগুলোতে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে কুয়াকাটা সমুদ্র-সৈকতে। তবে এবছর পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কারণে ঈদুল আজহায় অগনিত পর্যটকের আগমন ঘটেছে। তাই আমাদের হোটেলের সব রুম ঈদের আগেই অগ্রীম বুকিং হয়ে গেছে। চাহিদা থাকা স্বত্ত্বেও পর্যটকদের রুম দিতে পারছেননা বলে তিনি জানান।

কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশন কুটুমের সাধারন সম্পাদক মো: হোসাইন আমির বলেন, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার কারণে দেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক ছুটে আসছেন। আমরা সর্বক্ষণই পর্যটকদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। ছোট-বড় সব মিলিয়ে এখানে ১৬০টি আবাসিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। কেউ কেউ হোটেলের রুম না পেয়ে সৈকত সংলগ্ন বাসা বাড়িতে স্থান নিয়েছেন।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো: শাহআলম হাওলাদার জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদুল আযহার ছুটিতে অগনিত পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। ইতিমধ্যেই হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোর সব রুম বুকিং হয়ে গেছে। কোন পর্যটক যাতে কোনো হয়রানি না হয় সেজন্য হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, কুয়াকাটায় যে পরিমান হোটেল মোটেল রয়েছে তাতে ১৫/২০ হাজার লোকের ধারন ক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে সব হোটেল-মোটেলগুলো বুকিং রয়েছে।

মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার মো: আবুল খায়ের বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। প্রতিদিনই পুলিশের একাধিক টিম পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।

কুয়াকাটা ট্যুরিষ্ট পুলিশ জোনের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার লক্ষ্যে সব স্পটগুলোতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ফায়ার
সার্ভিসের একটি বিশেষ টিমসহ সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নজরদারিতে রয়েছে।

রাসেল কবির মুরাদ/এমবুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে