পটুয়াখালীঃ কলাপাড়া-কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে গত ২১ মে থেকে চলছে মাছধরার উপর সারাদেশের ন্যায় ৬৫ দিনের সরকারী নিষেধাজ্ঞা। এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জেলেদের মাছ শিকারের মহাউৎসব চলছে। নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড, থানা পুলিশ ও মৎস্য কর্মকর্তাদের সামনেই প্রকাশ্যেই মাছধরা, বিক্রি এবং বাজারজাত করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। যেন চলছে আইন অমান্য করে মাছ ধরার মহাউৎসব। ৬৫ দিনের এ দীর্ঘ সময়ে সমুদ্রে মাছ শিকারে না যাবার জন্য জেলেরা সরকারি সহয়তার আওতায় রয়েছে। বাস্তবে কিছু প্রভাবশালী ফিশিং ট্রলার মালিকরা জেলেদের সমুদ্রে মাছ শিকারে যেতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী সরেজমিনে গিয়ে ঘুরে দেখা যায়, আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ও আড়ৎঘাটে ইলিশ, তপসী, পোয়া, লইট্যা, ডাডিসহ সামুদ্রিক মাছের স্তুপ। যথারীতি হাঁকডাকে হচ্ছে মাছগুলো ক্রয়-বিক্রয়ে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ওইসব মাছ প্রেরণে প্রক্রিয়াজাতকরণসহ পরিবহনে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। দেশের সমুদ্র সীমানায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় সমুদ্রে মাছ শিকার, সংরক্ষণ ও বিপনন সবকিছুই চলছে প্রকাশ্যে দিবালোকে।
একই অবস্থা মহিপুর সরকারি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রসহ কুয়াকাটা পৌর মার্কেট, ধুলাসার, বাবলাতলা, বালিয়াতলী, চরচাপলী, আশাখালীও গঙ্গামতি এলাকার সামুদ্রিক মাছের প্রতিটি আড়ৎঘাটে।
কলাপাড়া উপজেলা ফিশিং ট্রলার মাঝি সমিতির সভাপতি নুরু মাঝি বলেন, আড়তগুলোতে যেসব মাছ বিক্রি হচ্ছে সবই সমুদ্রের মাছ। যা নদীরমাছ বলে চালিয়ে নিচ্ছে আড়তদাররা, নেপথ্যে রয়েছে প্রশাসন এবং মৎস্য কর্মকর্তারা। জনবল ও নৌ যানের স্বল্পতার অজুহাত ছাড়া কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, নিজামপুর কোষ্টগার্ড, কুয়াকাটা নৌ-পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃশ্যমান কোন তৎপরতা না থাকায় সরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ সামুদ্রিক মাছের আড়তঘাটে দেদারাছে ক্রয়-বিক্রয়-রপ্তানী হচ্ছে জাটকা ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ।
মহিপুর-আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক শাকিল আহম্মেদ বলেন, বিশ্ব-ভৌগলিক আবস্থানের কারণে জেলেদের আহরিত মাছ চিহিৃত করা যাচ্ছে না। কোনটি সমুদ্রের এবং কোনটি নদীর। জেলেসহ দাদন ব্যবসায়ীরা নদীর মাছ বলেই বিএফডিসি পাইকারি বাজারে বিক্রি করছেন।
ওয়ার্ল্ড ফিস এর সহযোগি প্রতিষ্ঠান ইকোফিস-২, পটুয়াখালী প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি জানান, প্রশাসনের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে সমুদ্রে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন ঠিকমতো হচ্ছে না। বরফকলগুলো সচল রাখায় সামুদ্রিক মাছ সংরক্ষণ ও বিপননে সহয়তা করা হচ্ছে।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, সরকারী নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধকালীন সময়ে সমুদ্রে মাছ ধরায় পৃথক অভিযানে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন অসাধু জেলেদের কারাদন্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজাহারুল ইসলাম বলেন, নতুন যোগাদান করেছি। দেশে ৬৫ দিনের নিষোধাজ্ঞা কার্যকর করতে কলাপাড়া-কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মাঠ পর্যায় ব্যাপক কাজ করার কথা উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা।
রাসেল কবির মুরাদ/এমবুইউ