ফরিদপুরঃ এবারের কোরবানীর ঈদের পশু হাটে সম্রাট নামে ফরিদপুর জেলার সবচেয়ে বড় আবারের ষাড় গরুটি দিয়ে ঢাকার বাজার কাঁপাতে পদ্মা সেতু পাড়ি দিবে। সাড়ে তিন বছরের এই গরুটি লম্বায় সিনা থেকে পেছন পর্যন্ত ১১ ফুট এবং এর উচ্চতা ফ্লোর থেকে পিঠ পর্যন্ত প্রায় ৬ ফুট। ৩৮ মন ওজনের এই গরু কেনার মতো যুৎসই ক্রেতা মিলছে না। এজন্য এবার সম্রাটকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। মালিকের আশা, পদ্মা সেতুর বদৌলতে এবার হয়তো তিনি কাঙ্ক্ষিত ক্রেতাও পেয়ে যাবেন। এ লক্ষ্যে নেয়া হচ্ছে সবধরনের প্রস্তুতি।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৫৩ হাজার ৮শ’ পশু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ফরিদপুর শহরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বিলমামুদপুরে অবস্থিত মাইশা ডেইরি ফার্মের ৩৮ মন ওজনের ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাড় গরুটিই ফরিদপুর জেলার সবচেয়ে বৃহৎ আকারের ষাড় গরু। ফরিদপুরে কোরবানীর পশুর চাহিদা ৪১ হাজারের কিছু বেশি। সেই হিসাবে ফরিদপুরের প্রায় ১২ হাজারের বেশি গরু উদ্বৃত্ত রয়েছে যেগুলো ফরিদপুরের বাইরে বিক্রি করা যাবে। জেলায় ৩৩টি পশুর হাট ছাড়াও অনলাইনে গরুর হাটেও এসব পশু বেচাকেনা হবে।
ফরিদপুরের মাইশা ডেইরি ফার্মে ১০৭টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় এই সম্রাট। এই খামারের শ্রমিকেরা জানান, বড় গরু পালন অনেক কষ্টের কাজ। ভোর চারটা থেকে উঠে আমরা গরুর খামারের কাজ শুরু করি। প্রতিমুহূর্তেই এদের জন্য খাবার তৈরি করা, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখাসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। রোগাক্রান্ত হলে সেই গরুকে আলাদা সরিয়ে ফেলতে হয়। বড় ষাড় থেকে গাভি ও বাছুর সবই রয়েছে এই ফার্মে। প্রতিদিন প্রায় পাঁচশো লিটার দুধ সংগ্রহ করা হয়। একেকটি গাভী সকাল ও বিকাল দুই বেলা মিলিয়ে ২০ থেকে ২৫ লিটার পর্যন্ত দুধও দিচ্ছে।
মাইশা ফার্মের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম সবুজ জানান, নিজের ফার্মে ৪২ মাস আগে সম্রাটের জন্ম। সবমিলিয়ে এখন এর শরীরে গোস্ত রয়েছে ১২শ’ কেজি। প্রাকৃতিক ঘাস আর বিশেষ যত্ন নিয়েই বড় করে তোলা হয়েছে। সাথে বিশেষ কিছু খাবার হিসেবে তাকে দেয়া হয় আপেল, কমলা ও আঙুর। এছাড়া প্রতিদিনের খাবার হিসেবে তাজা ঘাস, খড়, গম, ভুসি ও খৈল এসবই খাওয়ানো হয়। সবুজ বলেন, বড় গরু পালন করা খুবই কষ্টসাধ্য। কারণ এখানে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা মিলেনা। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার সময়-সুযোগমতো আমরা সম্রাটকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় কোরবানীর পশুর হাটে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। অনলাইনেও বিক্রির জন্য তথ্য দেয়া রয়েছে।
ফরিদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অধিফতরের কর্মকর্তা নুরুল আহসান বলেন, এবছর মাঝখানে গবাদি পশুর খাদ্যের মূল্য একটু বেশি ছিলো তবে এখন আবার সেটি সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। আমরা আশা করছি খামারীরা ভালো দাম পাবে। আমাদের দেশীয় তথা ফরিদপুরের গরু দিয়েই আমাদের চাহিদা পূরণ করে বাইরে পাঠাতে পারবো।
মাইশা ডেইরীর মালিক রফিকুল ইসলাম সবুজের মতো তিনিও একইভাবে ফরিদপুরে বড় গরুর ক্রেতা নেই জানিয়ে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এসব বড় গরু বিক্রির পথ সুগম হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি জানান, কোরবানীর পশুর হাটে ৯টি ভেটিনারী মেডিকেল টিম কাজ করবে।
এমবুইউ