নেত্রকোণাঃ উজান থেকে নেমে আসা অব্যাহত পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোণার বড় নদ-নদীগুলোর পানি বেড়ে যাওয়ায় হুমকির মধ্যে রয়েছে হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ গুলো। ফসল নিয়ে শংঙ্কিত কৃষকরা। এরই মধ্যে কীর্তণখোলা বেড়িবাঁধে দেখা দিয়েছে ফাটল। বাঁধ রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন ঐএলাকার স্থানীয় কৃষকরা। কৃষকদের অভিযোগ বেড়িবাঁধ নির্মাণের সংশ্লিষ্টরা অনিয়ম এবং গাফলতির কারণের বেড়িবাঁধের এমন পরিস্থিতি। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবী কৃষকদের।
জানা যায়, নেত্রকোণার খালিয়াজুরি মদন, মোহনগঞ্জ সহ ৬টি উপজেলা হাওরাঞ্চলের মধ্যে ছোট-বড় ১৩৪টি হাওর রয়েছে। হাওরের পুরোপুরি ধান পাঁকতে কমপক্ষে দেড়-দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু গত কয়েকদিনে ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে অব্যাহত নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নেত্রকোণা বড় বড় নদ-নদী গুলোর পানি বেড়ে যায়। খালিয়াজুরির ধনু নদের পানি হঠাৎ বেড়ে গিয়ে হাওরের শত শত হেক্টরের আধা কাঁচা-পাকা বোরো ধান তলিয়ে যায়। খালিয়াজুরি হাওরের চুনাই হাওর, বাইদ্যার চর কাটাকালের কান্দা বাইরের অংশ তলিয়ে গেছে। এরই মধ্যে কীর্তণখোলা বেড়িবাঁধে অনেক জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল। হাওরের একমাত্র বোরো ফসল রক্ষায় বেড়িবাঁধের ফাটল ঠেকাতে দিনরাত স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন এখানকার স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষকদের অভিযোগ, বেড়িবাঁধ নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম এবং গাফলতির কারণে বেড়িবাঁধের এমন পরিস্থিতি। তারা বলছেন বেড়িবাঁধ রক্ষা করতে না পারলে ২০১৭সালের মতো আগাম পানিতে হাওরের সমস্ত ফসল তলিয়ে যাবে। তাই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবী কৃষকদের। হাওরের একমাত্র ফসল বোরোর উপরই নির্ভর করে কৃষকদের সারা বছরের সংসার খরচ, চিকিৎসা, সন্তানদের পড়ালেখা ও আচার অনুষ্ঠান। আরো জানা যায়-জেলায় ছোট-বড় মোট ১৩৪ টি হাওরের মধ্যে খালিয়াজুরিতে ৮৯টি হাওর রয়েছে,হাওরাঞ্চলে ৩০০কিলোমিটার ডুবন্ত (অস্থায়ী) বাঁধের মধ্যে খালিয়াজুরিতে ১৮১ কিলোমিটার, মোহনগঞ্জে ৬১ কিলোমিটার ও মদনে ৪৬ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধ রয়েছে। হাওরের একমাত্র এ বোরো ফসল দিয়ে যেমনি চলে হাওরের মানুষ জীবন, তেমনি দেশে একমাত্র খাদ্য চাহিদাও পূরণ হয়ে থাকে। এবারের ফসল কৃষকরা ঘরে তুলতে না পারলে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দেখা দেবে বড় ধরনের ঘাটতি, এমনটাই মনে করছেন হাওরবাসী।
এ বছর স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনের তত্ত¡াবধানে প্রায় ৩৩ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ভারতের চেরাপুঞ্জি এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এতে করে পাহাড়ি ঢলের কারণে নেত্রকোণার নদ-নদীর পানি বাড়ছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৫শ হেক্টরে বোরো জমির পাকা ধান তলিয়ে গেছে,হাওরের ৪১হাজার হেক্টর জমির উঠতি বোরো ফসল নিয়ে কৃষকরা রয়েছেন আতংকে।
নেত্রকোণা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, অনিয়ম ও গাফলতির কথা কিছু না বলতে চাইলেও, বেড়িবাঁধ রক্ষা করে ফসল রক্ষা করতে কৃষকদের পাশে থেকে সকল ধরনের চেষ্টা করছে নেত্রকোণা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আবদুর রহমান জানান- অনিয়ম, গাফলতি ও দুর্নীতি বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখছে, সঠিক ডিজাইন অনুযায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হয়ে থাকলে সংশিষ্টদের জবাব দিতে হবে। তিনি আরো জানান, ফসল রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাশাপাশি আমরা বাঁধের পিআইসি কমিটির সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষকদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সালাহ উদ্দিন খান/এমএম