কুড়িগ্রামঃ জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে বড়ভিটা ইউনিয়ন এর খেজুরের তল স্থানে রাস্তার বা‘পাশে দেখা যাবে একটা খোলা বই। কাগজের বই ঠিক নয়, বরং একটা বইয়ের ম্যুরাল। এ বইয়ের ম্যুরালটি একটা পাঠাগারের ঠিকানাকে নির্দেশ করে। এর পাশেই অবহেলিত পল্লির ধুলোমাটিতে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপিত হয়েছে গীতিকার তৌহিদ-উল ইসলাম পাঠাগারটি। নিজের ২ শতাংশ দানকৃত জমিতে, নিজের অর্থে, নিজের শ্রমে নিজের নামে গড়ে তুলতেছেন পাঠাগার। সবকিছু নিজের হয়ে তা অন্যদেরকে দেখাচ্ছে আলোর পথ। সমৃদ্ধির দিকে ঠেলে দিচ্ছে এলাকার নতুন প্রজন্মকে। আজকের দিনে সৃজনশীল জাতি গঠনে পাঠাগারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে শিক্ষাবিদরা মনে করেন। নিভৃত পাড়া গাঁয়ে নতুনদের মুক্তচিন্তায় উৎসাহী করে তুলতে এ পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন তৌহিদ-উল ইসলাম। যে পাঠাগারে রয়েছে বিভিন্ন বিভিন্ন লেখকের দুই হাজারেরও বেশী বই। পাঠাগারে রয়েছে, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধা কর্নার, নজরুল কর্নার, অভিধান ও ধর্ম কনার, ছোটদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন গল্প উপন্যাস ও ছড়ার বই, পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে প্রতিনিয়ত পাঠাগারে আসেন ভিন্ন এলাকার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও পাঠাগার থেকে রেজিস্টার খাতায় এন্ট্রির মাধ্যমে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বই পড়ার সুবিধা রয়েছে এ পাঠাগারে। পাঠাগার এর প্রতিষ্ঠাতা তৌহিদ-উল ইসলাম নিজেও একজন সৃষ্টিশীল মানুষ। ছোটদের জন্য লিখেছেন বেশ কয়েকটা বই। পেশায় তিনি সরকারি হাইস্কুলের বাংলা শিক্ষক। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিশিষ্ট গীতিকার। রংপুর অঞ্চলের পালাগানসহ লিখেছেন কুড়িগ্রাম জেলার ব্র্যন্ডিং গান নদ নদীতে ভরা হামার জেলা কুড়িগ্রাম।
এরপর তিনি সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের নামে জাতীয় ভাবে প্রবর্তন করেছেন শিশুসাহিত্য পুরস্কার। এ পুরস্কারের অর্থমূল্যসহ যাবতীয় ব্যয়ভার তিনি একক ভাবে বহন করেন। শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য প্রতি বছর এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হকের উপস্থিতিতে ও সদ্য একুশে পদকে ঘোষিত কুড়িগ্রাম জেলার সমাজসেবক এসএম আব্রাহাম লিংকন সহ গত বছর ২৭ ডিসেম্বর সব্যসাচীর জন্মদিনে এ পুরস্কার প্রদান করা হয় শিশুসাহিত্যিক ফারুক নওয়াজকে। এ ছাড়াও পাঠাগারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর স্থানীয় গুণিজনদের মহৎ কাজের স্বীকৃতির জন্য দেয়া হয় সম্মাননা।
পাঠাগারে বই পড়তে আসা আশিক, মনি ও রিনা জানান, আমাদের স্কুল যখন বন্ধ হয় তখন আমরা এখানে এসে বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করি,এছাড়া এখানে রেজিস্টার খাতায় এন্ট্রি করে বিভিন্ন ধরনের বই নিয়ে গিয়ে বাড়িতে পড়ি।
পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদ মিয়া জানান, পাঠাগার আমাদের আলোর পথের নীরব পথপ্রদর্শক। এ পাঠাগারটিও তাই। এ পাঠাগারে পাশ্ববর্তী স্কুল কলেজের অনেক শিক্ষার্থী এসে প্রতিনিয়ত পড়ার জন্য বই বাড়িতে নিয়ে যায়। বই বাড়িতে নেয়ার জন্য তাদের নিকট থেকে কোন প্রকার ফি গ্রহন করা হয়না। কেননা এতে ওরা নিরুৎসাহী হতে পারে। বরং ওদেরকে উৎসাহ প্রদানের জন্য প্রতিবছর শ্রেষ্ঠ পাঠকের পুরস্কার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করা হয়ে থাকে।
পাঠাগারের সভাপতি ও পূর্বচন্দ্রখানা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, প্রতিটি উপজেলায় মডেল মসজিদ স্থাপিত হচ্ছে, অথচ সেখানে মডেল পাঠাগার স্থাপনের পরিকল্পনার কথা আজ অবধি শোনা যায়নি। দেশকে সমৃদ্ধির আসনে পেঁৗছাতে হলে শুধু উপজেলায় নয় বরং গ্রামে গ্রামে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এটা আমার মত নয়, দেশের শিক্ষাবিদদের মত। তবে এ কাজে গীতিকার তৌহিদ-উল ইসলামের মতো অন্যদেরও এগিয়ে আসা উচিত।
পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা গীতিকার তৌহিদ-উল ইসলাম জানান, আমরা জানি সৃজনশীল জাতি গঠনে পাঠাগারের গুরুত্ব অপরিসীম, সে কারণেই এলাকার ছেলে মেয়েদের প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে প্রথমে আমি শাহবাজার রংধনু পাঠাগার স্থাপন করি, তার কিছুদিন পর আমি বাড়ির পাশেই পাঠাগারটি স্থাপন করি বেশ সাড়া পাচ্ছি, প্রায় পঞ্চাশোর্ধ ছেলেমেয়েরা এখান থেকে বই নিয়ে গিয়ে বাড়িতে ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করছে এটা আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার।
আগামীনিউজ/এমবুইউ