ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ ইউটিউবে কৃষি উন্নয়ন প্রতিবেদন দেখে বরই চাষে সফল হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার কৃষক জহিরুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম।
জানা গেছে, চারা রোপণের ১০ মাসেই তার বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা দুইজনই প্রায় ৯০ হাজার টাকার বরই বিক্রিও করেছেন।
জহিরুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়নের চতুরপুর গ্রামের মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে ও অন্যজন নাতি। কৃষক দুইজন সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা।
জানা যায়, গত ফাল্গুনে বিষ্ণপুরের চতুরপুর মধ্যপাড়া এলাকা ৩৩ শতাংশ জমিতে বরই গাছের চারা রোপণ করেন জহিরুল ইসলাম। অন্যদিকে তার ভাতিজা নজরুল ইসলাম ৪৮ শতাংশ জমিতে বরই গাছের চারা রোপণ করেন। সাতক্ষীরা থেকে তারা কুরিয়ার যোগে চারাগাছগুলো ক্রয় করে আনেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাকে চাষাবাদে সহযোগিতা করেছেন।
বাগান দুটিতে কাশ্মিরী ও বল সুন্দরী বরই উৎপাদন করা হয়েছে। গাছ থেকেই পাকা বরই সংগ্রহ করে বিক্রি করা হয়। এতে বরইগুলোর স্বাদও বেশি হচ্ছে।
নজরুল ইসলাম বলেন, মুদিমালের ব্যবসার পাশাপাশি এক বছর ধরে আমি কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। মৌসুম ভেদে এ-প্রথম বরই চাষ করেছি। আশাকরি লাভবান হবো। পাশের গ্রামের এক লোক আমাকে বরই চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। ইউটিউব দেখে বরই চাষের ব্যাপারে দিক নির্দেশনামূলক তথ্য জেনে ও দেখে আমি জমি তৈরি করি। গেলো ফাল্গুনের ৪৫ শতাংশ জমিতে বরই চারা রোপণ করি। ৯ মাসের মাথায় বরইগাছগুলোতে ভালো ফলন হয়েছে। গাছ থেকে পাকা বরই সংগ্রহ করেই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। অনেকেই বাগানে এসে বরই কিনে নিয়ে যান। এখন আমার এক একটি বরই গাছ ৮-১০ ফুট লম্বা হয়েছে।
বরই উৎপাদনের ব্যাপারে জহিরুল ইসলাম জানান, তার ভাতিজা নজরুল ইসলামের মত সেও বরই উৎপাদনে এবার প্রথম। প্রবাস থেকে এসেই বাড়িতে কৃষি ও গরুর খামার করেন। এবারই কাশ্মিরী ও বল সুন্দরী বরই চাষ শুরু করলেন৷ জহিরুল ইসলাম বরই উৎপাদনে ভাল সফলতা পাবার আশাবাদী।
স্থানীয় বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন বলেন, আমাদের বিষ্ণপুর, পাহাড়পুর ও সিঙ্গারবীলে সবজি চাষে পুরো জেলাতেই সুনাম রয়েছে। এখানে যে বরই চাষ হবে তা কেউই কখনো কল্পনা করেনি। জহিরুল ও নজরুল ইসলাম দু'জনের জমিতে ভাল বরই উৎপাদন হয়েছে। আশা করি, এ বছরই তারা চাচা-ভাতিজা তাদের খরচ উঠাতে পারবেন।
বরই কিনতে যাওয়া ওষুধ ব্যবসায়ীক সাইফুল ইসলাম জানান, এ ধরনের একক বরই বাগান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আর কোথাও নজরে পড়েনি। বরইগুলোও দারুণ মিষ্টি। ঝুঁকি নিয়েই জহিরুল ক নজরুল ইসলাম বরই বাগানে সফলতা দেখছেন। তার মতো অন্যরাও যদি ঝুঁকি নেয় তাহলে এ অঞ্চল কৃষিক্ষেত্রে আরো এগিয়ে যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার বিজয়নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে বরই চাষ হয়। এসব এলাকায় ৪৫টি বরই বাগান আছে। অল্প সময়ে পর্যাপ্ত বরই উৎপাদন হয় বাগানগুলোতে।
বিজয়নগর উপজেলা কৃষি অফিসার শাব্বির আহমেদ বলেন, উপজেলার বিষ্ণপুর, পাহাড়পুর ও সিঙ্গারবীলে বরই উৎপাদনের অনেক গুলো বাগান রয়েছে। বিষ্ণপুরের চতরপুরে জহিরুল ও নজরুল প্রায় ১০ মাস আগে বরই চাষ শুরু করেন। তাদের বাগানে পর্যাপ্ত বরই উৎপাদন হয়েছে। তারা ভাল টাকা আয় করতে পারবেন বলে আমরা আশবাদী। আরো বেশ কয়েকটি বরই বাগান রয়েছে। যেগুলো বরই খুব সুস্বাদু। কৃষকরা এখন ফল চাষে এগিয়ে আসছেন।
তিনি আরো বলেন, এ জেলায় কাশ্মিরী, বাউল ও বল সুন্দরী বরই উৎপাদন হয়। কীভাবে চারা উৎপাদন করে তা সম্প্রসারণ করতে হয় সে ব্যাপারে আমরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়ার জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজ করছেন। বরই চাষে প্রচুর খরচ রয়েছে। যাদের অর্থের সমস্যা আছে, তাদেরকে ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো বলেছি।
আগামী নিউজ/এসএসআই