গাইবান্ধাঃ জেলার সুন্দরগঞ্জে দিগন্ত জোড়া মাঠের দিকে তাকালেই চোখে পড়বে শীতের বিভিন্ন সবজির ক্ষেত। ক্ষেতের উপরে দেওয়া আছে জালের আবরণ। সবজি ক্ষেত রক্ষায় চারপাশ এই জাল দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। সচরাচর নানাবিধ রোগ বালাই এবং কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য বালাইনাশক ক্ষেতে প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু পাখির উপদ্রব থেকে সবজি ক্ষেত রক্ষায় ক্ষেতের উপড়ে জালের আবরণ দেয়া হয় এটি একটি নিত্য নতুন পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি। অনেকেই আবার মনে করছেন এটি আধুনিক প্রযুক্তির একটি মাইলফলক।
উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহায়তায় বিষমুক্ত বেগুন চাষের জন্য কৃষকেরা ক্ষেতের উপরে জালের আবরণ দিয়ে আবাদ করছে এবং কীটনাশকের বদলে জৈব বালাইনাশক ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার, উপকারী পোকা-মাকড় সংরক্ষণ এবং পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ পদ্ধতিতে আবাদ করছেন তারা।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা তাদের বেগুনসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেতের চারপাশ ও উপরে আবরণ দেয়া হয়েছে জাল দিয়ে। বুলবুলি পাখি খেয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের বেগুনের ফুল আর তাই বুলবুলি পাখির হাত থেকে বেগুনের ক্ষেত বাঁচাতে মশারির মতো করে ক্ষেতের উপরে ও চারপাশে টানানো হয়েছে জাল। ঢেকে দেয়া হয়েছে পুরো জমির ফসল।
বেলকা ইউনিয়নের তালুক বেলকা গ্রামের কৃষক নাজির হোসেন বলেন, ‘আমার বেগুন ক্ষেতের বেগুন গাছে ফল আসার সাথে সাথে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-ছোট পাখি দিন রাত বেগুন ক্ষেতে প্রবেশ করে বেগুন নষ্ট করে ফেলছে। পাশাপাশি বেগুনের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। বালাই নাশক প্রয়োগ করে ওই সব পাখি নিধন করা যায় না। যার কারণে অনেক টাকা ব্যয় করে পাখির হাত থেকে বেগুনের ক্ষেত রক্ষার জন্য পাঁচ কাঠা মাটির বেগুন ক্ষেতের উপরে জালের আবরণ দেয়া হয়েছে। বুলবুলি পাখির হাত থেকে ক্ষেতের ফসল বাঁচাতে পর্যায়ক্রমে বাকি জমি গুলোতেও জালের আবরণ দিবো।’
নতুন এই উদ্যোগ সম্পর্কে একই গ্রামের কৃষক মো. আবুল কালাম জানান, আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগে আমরা যখন বিভিন্ন তরি-তরকারি ও বিভিন্ন শাক-সবজির আবাদ করতাম তখন বালাই নাশকের কোন ব্যবহার ছিলো না। কিন্তু এখন ক্ষেতের ফসল বাঁচাতে বালাই নাশকের পাশাপাশি ক্ষেতে জালের আবরণসহ বিভিন্ন প্রকার পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি আধুনিক প্রযুক্তির একটি মাইলফলক।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জামিউল ইসলাম সরকার বলেন, ‘বুলবুলি ও শ্যমা পাখির আক্রমণ থেকে বেগুনসহ অন্যান্য ফসল রক্ষার জন্য আমরা শীতকালীন সময়ে কৃষকদেরকে জাল দিয়ে আবরণ দেয়ার পরামর্শ প্রদাণ করে থাকি। এতে বেগুনসহ অন্যান্য ফসলের গুণগতমান ঠিক থাকে ও বাজারে এর চাহিদাও থাকে। ফলে কৃষকরা লাভবান হয়।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রাশিদুল কবির বলেন, ‘বালাই নাশক প্রয়োগ করে পাখির উপদ্রব বন্ধ করা যায় না। বেগুন ক্ষেতে পোকামাকরের পাশাপাশি পাখিও বেশি ক্ষতি সাধন করে। তাই কৃষকরা অনেক সময় সবজি জমিতে জালের আবরণ ব্যবহার করছে। তবে এটি ব্যয়বহুল।’
আগামীনিউজ/নাসির