নেত্রকোণা: বিজয় দিবসে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, ইট-পাটকেলের হামলায় এক সাংবাদিকসহ উভয় দলের অন্তত ১০জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে গুরুতর আহত সাংবাদিককে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার সময় কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নের সিধলী বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত সাংবাদিকের নাম রানা আকন্দ (২৮)। তিনি ঢাকা হতে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক “আজকের পত্রিকা”র কলমাকান্দা উপজেলা প্রতিনিধি ও কান্দাপাড়া এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান আকন্দের ছেলে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা, পুলিশ ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার সময় সিধলী বাজারের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কথা কাটা-কাটি হয়। এসময় ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে কৈলাটি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রুবেল ভূঁইয়া আহত হন। রুবেল ভূঁইয়া গত ২৮নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জয়নাল আবেদিনের কাছে পরাজিত হন। রুবেল ভূঁইয়া আহত হওয়ার খবর শুনে তাঁর লোকজন সংগঠিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, আওয়ামী লীগকর্মী বাচ্চু মিয়া, সাইকুল ইসলাম, সোহেল খান, বাহার মিয়া, তুহিন মিয়া, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য সাহাব উদ্দিন ও বিএনপির সমর্থক আরিফ মিয়া আহত হন।
এদিকে আজকের পত্রিকার কলমাকান্দা প্রতিনিধি রানা আকন্দ সংবাদ সংগ্রহ ও ফুল দিতে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে সিধলী বাজারের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। বাজারসংলগ্ন সেতু পাড় হতে না হতেই বিএনপির লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা মোটরসাইকেলটিও ভাংচুর করে সঙ্গে থাকা ম্যানি ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইসরাত জাহান জানান, রানা আকন্দের পিঠে আঘাতসহ মাথায় গভীর জখমের চিহ্ন রয়েছে। এরমধ্যে মাথায় দুটি স্থানে ১০টি সেলাই করা হয়েছে। তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
রানা আকন্দের অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলাকালীন সময়ে তিনি সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে চেয়ারম্যান রুবেল ভূঁইয়া, তাঁর ভাইয়েরাসহ কর্মী-সমর্থকদের রোষানলে পড়েন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে মোটরসাইকেলে করে সিধলী সেতু পাড় হতে না হতেই সাংবাদিককে ধর ধর বলে রুবেল ভূঁইয়ার ছোট ভাই সোহেল ভুঁইয়া, কামরুল ভূঁইয়া, শাকিল ভূঁইয়া, ভাতিজা জুয়েল আকন্দসহ কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র রামদা ও লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। পরে স্থানীয় লোকজন এসে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
তবে এ ব্যাপারে রুবেল ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার কোনো ভাই-ভাতিজা বা লোকজন সাংবাদিকের ওপর হামলা চালায়নি। কে বা কারা হামলা করেছে তা আমার জানা নেই। এছাড়া আমরা বিএনপির নেতা-কর্মীরা ফুল দিতে গেলে আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের ওপর ইট-পাটকেল ছুড়েছে। এতে আমি ও আমার সমর্থক আরিফ মিয়া আহত হয়েছি। আরিফকে নেত্রকোণা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্কতা মোহাম্মদ আবদুল আহাদ খান বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সিধলী তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ঘটনাস্থলে রয়েছেন।’
আগামীনিউজ/ হাসান