যশোর: জেলার শার্শা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে ২২ জন শিক্ষকের সার্ভিস বই চুরি গেছে। ৪৩টি সার্ভিস বই চুরি হয়ে গেলেও এক মাস পর শিক্ষা অফিসের পিছনে কিছু বই দেখতে পেয়ে খবর দিলে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ২১টি সার্ভিস বই।
শিক্ষকরা বলছেন, অর্থ আদায়ের কৌশল হিসেবে এ কাজ করেছে শিক্ষা অফিসার নিজেই। হারিয়ে যাওয়া সার্ভিস বইয়ের দায় কেউ নিচ্ছে না। সার্ভিস বই সংরক্ষণকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নির্বিকার। তিনি থানায় জিডি করে দায় সেরেছেন। সার্ভিস বই হারিয়ে যাওয়ায় ২২ জন শিক্ষকের বেতন ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক প্রাপ্তি, চাকুরীর নিশ্চয়তা এবং স্থায়ীকরণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
সার্ভিস বই হারিয়ে যাওয়া শিক্ষকরা হতাশার মধ্যে আছেন। বিষয়টির দ্রুত সুরাহা না হলে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হতে পারে।
যশোরের শার্শা উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৩ জন শিক্ষকের সার্ভিস বই হারিয়ে যায় কবে তা কেউ জানেন না। গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে কয়েকজন শিক্ষক তাদের সার্ভিস বই খুঁজতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়ে। পরে ৪ নভেম্বর এ ব্যাপারে শার্শা থানায় একটি জিডি করেন শিক্ষা অফিসার। এর কয়েকদিন পর ২১টি সার্ভিস বই পাওয়া যায় তারই অফিসের পিছনে। এখনো পাওয়া যায়নি ২২টি সার্ভিস বই। অফিসে নেই কোন সিসি ক্যামেরা।
শার্শার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম পূর্বে এই উপজেলায় সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পদোন্নতি পেয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার হয়ে তিনি পুনরায় এই উপজেলায় ফিরে আসেন ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর। আর এসেই শুরু করেন ‘টু পাইস কামানোর কাজ’। তার অযোগ্যতা, অদক্ষতা আর আকণ্ঠ নিমর্জিত দূর্ণীতির কারণে দেশের ইতিহাসে কোন সরকারি অফিসের ৪৩ জন সরকারি কর্মচারির সার্ভিস বই নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া রহস্যজনক। পরে নাকি ২১ টি বই পাওয়া গেছে শিক্ষা অফিসের পিছনে।
শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষকদের নবম ও দশম গ্রেড, শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা, দশ বছর পূর্তিতে স্কেল পরিবর্তনসহ অন্যান্য কাজে এই সকল শিক্ষকের কাছে থেকে ধার্য্যকৃত উৎকোচ আদায় করতেই শিক্ষা অফিসার সার্ভিস বই হারিয়ে যাওয়া বা চুরির নাটক সাজিয়ে থাকতে পারেন।
সরকারি চাকুরীজীবিদের সার্ভিস বই তার স্ব স্ব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আলমারি বা লকারে সংরক্ষণ করে থাকেন। সরকারি চাকুরীজীবিদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চাকুরীর দলিল এই সার্ভিস বই কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য করো ব্যবহার বা সংরক্ষণ করার কোন সুযোগ নেই। একজন সরকারি চাকুরীজীবীর ব্যক্তিগত তথ্য, পেশাগত তথ্য, আর্থিক সুবিধাদির সকল বিবরণ সার্ভিস বইতে ধারাবাহিক ভাবে চাকুরীর শুরু হতে শেষ দিন পর্যন্ত লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। অথচ শার্শা উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে ২২ জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকের সার্ভিস বই উধাও হয়ে যাবার পর ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার যশোর বিষয়টি জেনেও এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তিনি বিষয়টি গোপন রেখেছেন। উপরান্ত সার্ভিস বই হারিয়ে যাবার বিষয়টি যেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো না হয় সে জন্য ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকদের নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, শার্শা উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১২৫টি। শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয় উন্নয়ন পরিকল্পনা যাকে ‘স্লিপ’ বলে এই খাত থেকে স্কুল প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে চলতি বছরে আদায় করেছেন।
বিদ্যলয়ের ওয়াশব্লক, রুটিন মেইন্টেনেন্স, ক্ষুদ্র মেরামত, নতুন ভবন নির্মান, রেস্ট এন্ড রিক্রেয়েশন, ভ্রমন ভাতা, স্কুল কন্টিনজেন্সি, বিজয় ও শোক দিবসের বরাদ্দসহ সকল খাতে নির্ধারিত পরিমান অর্থ নিয়েই তবে তিনি বিল ভাইচারে স্বাক্ষর করেন। উপজেলায় কর্মরত সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের সাথে এই অন্যায় কাজ নিয়ে তার সম্পর্ক একেবারেই শীতল পর্যায়ে পৌঁছেছে। মাঝে মাঝে সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের সাথে তার বাক বিতন্ডার খবর সবার মুখে মুখে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাকে ফাঁসাতে অফিসের ও শিক্ষকদের মধ্যে কেউ এ সার্ভিস বই গুলো চুরি করেছে। সার্ভিস বই চুরি বা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে গত ৪ নভেম্বর শার্শা থানায় একটি জিডি করেছেন। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হচ্ছে। আইন শৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে সার্ভিস বই উদ্ধারের কার্যক্রম চলমান। ফান্ড পেলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।
আগামীনিউজ/ হাসান