Dr. Neem on Daraz
Victory Day

পীরগঞ্জে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত বেড়ে ৪


আগামী নিউজ | রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২১, ০৮:২২ পিএম
পীরগঞ্জে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত বেড়ে ৪

ছবি: আগামী নিউজ

ঠাকুরাঁও: জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নে ভোটের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় বিজিবি’র গুলিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছে পাঁচজন। আহতদের মধ্যে একজন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

পরে পীরগঞ্জ উপজেলার ঘিডোর গ্রামের আব্দুল বাকির স্ত্রী রহিমা বেগম মারা যান।

রহিমা বেগমের স্বামী আব্দুল বাকী জানান, ‘তার স্ত্রী কৌতুহলবশত ভোট কেন্দ্রের সামনে যায়। এ সময় গুলি চললে আহত হন রহিমা। পরে তাকে রংপুর মেডিক্যালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।’

চার জনের লাশ ময়নাতদন্তের জেলা হাসপাতাল মর্গে জন্যে পাঠানো হয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পাঁচজন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলার ঘিডোব এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

তিনজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে আজ সোমবার বেলা পৌনে একটার দিকে পীরগঞ্জ থানা পরিদর্শক (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম প্রতিবেদককে বলেন, উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করার জন্য বিজিবি গুলি ছোড়ে। সেই গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকজন।

নিহত তিনজন হলেন ঘিডোব গ্রামের অবিনাশ রায়ের ছেলে আদিত্য কুমার রায় (২৩), হাবিবপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মো. সাহাবুলি (৩৬) ও ছিট ঘিডোব গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে মোজাহারুল ইসলাম (৩৭)। নিহত ব্যক্তিদের লাশ নিজ নিজ বাড়িতে রাখা আছে।

গুলিবিদ্ধ পাঁচজন হলেন ঘিডোব গ্রামের আবদুল বারীর স্ত্রী রহিমা বেগম (৬৪), খনগাঁও গ্রামের উজ্জ্বল ইসলামের ছেলে গোলাম রব্বানী (২৮) ও হাবিবপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাইফুর রহমান (১৮) খনগাঁও ইউনিয়নের ঘিডোব গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে সবুজ আলী (২২), খনগাঁও গ্রামের অভিনাথ চন্দ্র রায়ের ছেলে আদিত্ত রায় (২০)। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

স্থানীয় বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম ও তোফায়েল আহমেদ জানান, গতকাল রাতে ভোটের ফলের কাগজ পোলিং এজেন্টদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছিল না। এতে এজেন্টরা ক্ষুব্ধ হন। ভোটারদের মধ্যেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা লাঠিসোঁটা নিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিজিবির সদস্যদের দিকে তেড়ে আসেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজিবি গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন মারা যান। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

গ্রামবাসীর ভাষ্য, খনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পীরগঞ্জ উপজেলার ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনা ও অন্যান্য কার্যক্রম শেষে গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করতে বিজিবি ৪৫ থেকে ৫০টি গুলি ছোড়ে। এতে হতাহত হওয়ার ওই ঘটনা ঘটে। পরে স্কুলের মাঠ ফাঁকা হয়ে গেলে বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ভোটের মালপত্র নিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে এলাকা থেকে চলে যান। হতাহত ব্যক্তিরা মাঠে পড়ে ছিলেন।

ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরত গ্রাম পুলিশের সদস্য সরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট চলে। গণনা শেষে রাত ৮টার দিকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দীন ফলাফল ঘোষণা করেন

ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট  কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী মো. শহীদ হোসেন ৬২৬ ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নুর জামান হক ৯৪৮ ভোট পেয়েছেন।

এ সময় চেয়ারম্যান পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুর জামান হকের (চশমা প্রতীক) সমর্থকরা ভোটের ফলাফলের স্বাক্ষরিত অনুলিপির দাবিতে ভোট কেন্দ্র ঘিরে ফেলে এবং এক পর্যায়ে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় নির্বাচন কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্যরা বাঁধা দিলে সংঘর্ষ বেঁধে যায় বলে জানান সরেন্দ্র।

ঘিডোব প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. জামালউদ্দীন বলেন, ‘আমি ভোট কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কাগজপত্র জমা দিতে ঘটনার আগেই উপজেলায় চলে আসি।’

এ ঘটনায় পীরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু হামিদ মণ্ডল বাদী আজ সোমবার দুপুর ১২টায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গুলিতে নিহত মো. সাহাবুলির বাবা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘মোর বেটা গতকাল দুপুরে ওই সেন্টারত ভোট দিচে। ভোটের ফল জানিবার জন্য সান (গোসল) করে  সন্ধ্যায় ঘিডোব স্কুলত গেছিল। কিন্তু গুলি লাগে মরে গেল। লাশ হয়ে গেল মোর বেটা।’

গুলিতে নিহত আদিত্য কুমারের বাবা অবিনাশ বায় বলেন, ভোট সেন্টার থেকে বাড়িতে চলে আসতে ছেলেকে কয়েকবার ফোন দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আদিত্য বাড়িতে না এসে সেখানেই ছিলেন। শেষ পর্যন্ত গুলিতে ছেলের মৃত্যু হলো।

বিজিবি ঠাকুরগাঁও ৫০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ইউপি নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও ৫০ ব্যাটালিয়নের সদস্যারা দায়িত্বে ছিলেন। ভোট কেন্দ্রে হামলা হলে আত্মরক্ষায় ইউএনওর নির্দেশে গুলি ছুড়তে বাধ্য হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে কোন বাহিনীর গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তা বলা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে থাকা লোকজনের ওপর আক্রমণ করলে এই ঘটনা ঘটে। এটা অস্বাভাবিক ঘটনা।

আগামীনিউজ/ হাসান

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে