গাইবান্ধাঃ আসন্ন ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপ ইউপি নির্বাচনে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ১৩ ইউপিতে নির্বাচন হবে। নির্বাচনে অংশ নিতে যাচাই-বাছাই শেষে ১০৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তাগণ। এদের মধ্যে একমাত্র নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন মোছা. জোৎসনা বেগম জনতা। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে উপজেলার ছাপড়হাটী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়বেন। জনতা ওই ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটী গ্রামের মৃত আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী।
এই খবর ছড়িয়ে পড়লে ইউনিয়নে ভোটার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিলেও সন্তোষ নন ওই নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী। তার দাবী, এর আগেও তিনি ভোট করেছেন। পরিকল্পিভাবে তাকে ঠকানো হয়েছে। এ নির্বাচনেও তার ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
ভোটার আবুল বাশার বলেন, ‘নারী চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিষয়টা তার নিকট ব্যতিক্রমধর্মী। তাছাড়া নারীরা অনেকাংশে স্বচ্ছ পুরুষদের তুলনায়। সে কারণেই তিনি জনতা আপাকেই ভোট দিবেন।’
ইউনিয়নের নারী ভোটার মোছা. কবিতা বেগম বলেন, ‘আমি মেয়ে মানুষ। সে কারণে আমি তাঁকে ভোট দিবো এবং চাইবো তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোক। পরিষদে একজন মহিলা চেয়ারম্যান থাকলে নারীদের নিয়ে কথা বলতে পারবেন তিনি।’
প্রার্থীর দেবর আসাদুজ্জামান ভুট্টু বলেন, ‘মাঠে ওয়ার্ক করছি। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি ভাই। নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে বিজয় সুনিশ্চিত আমাদের।’
চেয়ারম্যান প্রার্থী জোৎসা বেগম জনতা বলেন, এই নির্বাচন আমাদের প্রথম নির্বাচন নয়। বংশ পরম্পরায় নির্বাচন করে আসছি আমরা। ১৯৬৭ সালে আমার শ্বশুর মৃত আসরত উল্লাহ সরকার ইউপি নির্বাচনে সাধারণ সদস্যপদে নির্বাচন করে জয় লাভ করেন। পরে তিনি সেখানে সিলেকশনে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এর পর তিন-তিনবার তিনি ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে ২০০১ সালে মারা যান আমার শ্বশুর। তার অবর্তমানে আমার স্বামী নির্বাচন করেছিলেন। তাকে কৌশলে হেরে দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে আমি নির্বাচনে অংশ নেই। গত নির্বাচনে আমার ৫ হাজারের বেশি ভোট দেখানো হয়েছে। আমাকেও হেরে দেয়া হয়েছে। গত বছরের তুলনায় জনপ্রিয়তা এ বছরে আমার আরও বেশি। নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ-আল-মারুফ বলেন, ‘ভোট হবে নিরপেক্ষ। সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে কোনো বাঁধার সম্মুখীন হলে তা যেন আমাদের জানায়। সেই সাথে ওনার ইউনিয়নে যদি কোনো ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় সে বিষয়টিও যেন আমাদের নজরে দেয়। আমরা সর্বাত্তক সহযোগিতা করবো ইনশাআল্লাহ।’
উল্লেখ্য, উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোট ১০৩ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য ২১৮ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৫৬৫ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে স্ব-স্ব রিটার্নিং কর্মকর্তা। আগামী ১১ নভেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৮ নভেম্বর। ছাপড়হাটী ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১০, স্থায়ী ভোটকক্ষ ৮২ ও অস্থায়ী ভোটকক্ষ ২২ টি। মোট ভোটার ২৯ হাজার ২৫জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১৪ হাজার ২’শ ৩৮ ও পুরুষ ভোটার ১৪ হাজার ৭’শ ৮৭ জন।