Dr. Neem on Daraz
Victory Day

‘মসজিদ বাড়িয়া’ মসজিদ দেশের অনন্য প্রাচীন কীর্তি


আগামী নিউজ | সাইদুল ইসলাম মন্টু, বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২১, ০১:৫৮ পিএম
‘মসজিদ বাড়িয়া’ মসজিদ দেশের অনন্য প্রাচীন কীর্তি

ছবি: প্রাচীন কীর্তি মসজিদ বাড়িয়া মসজিদ

বেতাগী (বরগুনা): মজিদবাড়িয়া মসজিদ। পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত এটি দেশের একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন কীর্তি, সুলতানী আমলের স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। 

এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি দেখতে দ্বিতল মনে হলেও মজার ব্যাপার হলো প্রকৃতপক্ষে এটি মাত্র একতলা বিশিষ্ট। বারান্দায় ছাদ, অনেকটা চৌচালা ঘরের আকারে নির্মিত। পূব- পশ্চিমে দীর্ঘ আয়াতাকারে নির্মিত এই মসজিদের দৈর্ঘ ৪৯ ফুট ২ ইঞ্চি, প্রস্থ ৩৪ ফুট ৯ ইঞ্চি। এর সাড়ে ২১ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৮ ফুট প্রস্থ পূর্বদিকে বারান্দা অবস্থিত। প্রধান কক্ষ  ও বারান্দা এই দুই অংশে মসজিদটি বিভক্ত। প্রধান কক্ষের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব দেয়ালে তিনটি করে, বারান্দার উত্তর-দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে এবং পূর্ব দেয়ালে তিনটি প্রবেশ পথ রয়েছে।  ভিতরে প্রধান কক্ষের উপর রয়েছে তিনটি মেহরাব ও একটি গম্বুজ। আধা গোলাকার এ গম্বুজ দেখতে খুবই সুন্দর। মসজিদের দেয়ালগুলো প্রায় সাড়ে ৬ ফুট চওড়া। 

পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ১০ কি.মি দক্ষিনে সবুজের সমারোহে ঘেরা একটি প্রসিদ্ধ জনপদ মসজিদ বাড়িয়া। বিঘাই নদীর শাখা আইল নদীর তীরে অবস্থিত মজিদবাড়িয়া মসজিদ। মসজিদটি আছে বলেই এ গ্রামের নাম মসজিদ বাড়িয়া। 

 ঠিক কখন এই ঐতিহাসিক মসজিদটি  নির্মান করা হয়েছে তা সঠিকভাবে বলা না গেলেও মসজিদের দেয়ালে যে শিলালিপি রয়েছে তা থেকে জানাযায়, বাংলার স্বাধীন ইলিয়াস শাহ্ এর শাসনামলের শেষ দিকে নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহের পুত্র সুলতান রোকন উদ্দিন বারবক শাহর (১৪৫৯-১৪৭৪) খ্রিস্টাব্দে রাজত্বকালে খান-ই-মোয়াজ্জম উজিয়াল খান ১৪৬৫ সালে এই মসজিদটি নির্মান করে ইসলাম প্রচারের কেন্দ্রভূমি হিসেবে গড়ে তোলে। মোয়াজ্জম খান ছিলেন একজন ন্যায় পরায়ন মানব। 

পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত সুন্দরবন এলাকাবর্তী উপকুলীয় জনপদে এই মসজিদটি যুগ যুগ ধরে জঙ্গলাবৃত্ত হয়ে পরিত্যক্ত  অবস্থায় পড়ে ছিল। দীর্ঘ সময় এটি এমনভাবে লুকিয়ে ছিল যে পতিত অবস্থায় থাকার ফলে চারপাশে গজিয়ে  ওঠা জঙ্গলে মসজিদটি ঢাকা পড়ে। এ  ধরনের একটি প্রাচীন কীর্তি এলাকায় যে রয়েছে তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ছিল দুস্কর। যতদূর যানা যায় ১৮৬০ সনে সুন্দরবন এলাকায় জরিপ করার সময়  মিঃ গোমেজ নামে তৎকালীন সময়ের জনৈক এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা যার চোখের নাগালে আসে এবং তিনিই সে সময়ে এটি আবিষ্কার করেন। ১৯১৩ সালে এ মসজিদটিকে একটি প্রাচীন কীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত করা হয়। 

স্থানীয়দের ধারণা অনুসারে মাটির নিচ থেকে অলৌকিক ভাবে গজিয়ে ওঠা এ মসজিদের পাশে রয়েছে অতি পুরনো এক বিশাল আকারের দীঘি। দীঘিটি এক সময় সুপেয় পানি ও মসজিদটি এলাকাবাসীর জন্য বয়ে আনে শান্তির প্রবর্তনের ধারা। এ মসজিদ ও দীঘি  সম্পর্কে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানতে চাইলে প্রবীণরা জানান, প্রায় এক শতাব্দী আগেও মসজিদকে কেন্দ্র করে বার্ষিক  ওয়াজ মাহফিলে সমাগম ঘটত হাজার হাজার মানুষের। যত মানুষ মাহফিলে আসত তাদের সকলের মাঝে এ তবারক বিতরন করা হতো। সংখ্যায় যতই হোক না কেন মাহফিলে যারা অংশগ্রহন করত তাদের সকলের জন্য দীঘি থেকে অলৌকিকভাবে মাটির বাসন উঠে আসত। 

মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বে  চির নিদ্রায় শুয়ে আছেন মসজিদের চার সনামধন্য খাদেম। তারা ছিলেন সত্যিই ধার্মিক ও মানুষ হিসেবে বিরল। মসজিদটি পরিদর্শনকালে দেখা মেলে কবরস্থানের দেয়ালে খোদাই করে লেখা রয়েছে ইয়াকিন শাহ, কালা শাহ, মোরেদ আলী ফকির ও আব্দুল ওয়ারেচ ফকির এ চার খাদেমের নাম। এসব খাদেম সম্পর্কে এলাকায় এমনি ধারণা পাওয়া যায় তারা নিস্বার্থবাদী ও ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন। 

এই মসজিদের জীবন বৃত্তান্ত ঘেটে যা জানাযায়, সুলতান রোকন উদ্দিন বারবক শাহের রাজত্বকালীন ইসলামের প্রচার ও প্রসার কল্পে খান-ই-মোয়াজ্জম উজিয়াল খান তার শিষ্য ও ভক্তদের নিয়ে এ অঞ্চলে গমন করে। এই ঐতিহাসিক কিংবদšীÍর  সাথে ইসলামের দাওয়াত বা আহবানের ঘটনায়ই নয় জড়িত রয়েছে স্থাপত্যেরও ইতিহাস। 

কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটিতে এই ঐতিহাসিক মসজিদবাড়িয়া মসজিদের নিদর্শন পাওয়া যায়। জানাগেছে, সেখানে  মসজিদের নকশার ছাপা রয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিঃ গোমেজ এই মসজিদের একটি নকশা তৈরী করেণ। তাছাড়াও মসজিদের শিলালিপি সহ তা বিভাগীয় কমিশনার মিঃ বেলীর কাছে পাঠানোর পাশাপাশি একইভাবে মসজিদের নকশা শিলালিপির সাথে একটি পত্র কলকাতা  এশিয়াটিক সোসাইটির নিকট এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্টের নিকট পাঠানো হয়। 

কালের বিবর্তনের ধারায় সু-নজড়ের অভাবে ক্রমশ এটি ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রত্বতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটির স্মৃতি রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব নিয়ে ১৯৮২ সনের শেষ দিকে কিছূ সংস্কার কাজ করে। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও এর পর আর তেমন কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। ফলে দিন দিন এর অস্তিত্বের সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঐতিহাসিক মসজিদ বাড়িয়া মসজিদ ও দীঘির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ সংরক্ষনে জরুরী হয়ে পড়েছে। 

আগামীনিউজ/ হাসান

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে