কুমিল্লা: কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখেছিলেন যে ব্যক্তি, তাকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়।
বুধবার রাতে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শনাক্ত ওই ব্যক্তির নাম ইকবাল হোসেন। তার বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছর হবে। তার বাবার নাম নুর আহমেদ আলম। বাড়ি কুমিল্লার সুজানগরে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা এ ঘটনার মূল সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করেছি। তাকে গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে। পুলিশের একাধিক সংস্থার তদন্তে এই নাটকীয় অগ্রগতি হয়েছে।
শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীর দিন গত বুধবার ভোরে কুমিল্লা শহরের নানুয়াদিঘির উত্তরপাড়ে দর্পণ সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত অস্থায়ী পূজা মণ্ডপে পবিত্র কোরআন দেখা যায়। এরপর কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে ওই মণ্ডপে হামলা চালায় একদল লোক। সেখানে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়।
এ ঘটনার জের ধরে ওই দিন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হিন্দুদের ওপর হামলা করতে যাওয়া একদল ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেখানে নিহত হন চারজন। পরদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হিন্দুদের মন্দির, মণ্ডপ ও দোকানপাটে হামলা–ভাংচুর চালানো হয়। সেখানে হামলায় নিহত হয়েছিলেন দুইজন। এরপর হিন্দুদের মন্দির–মণ্ডপসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হয়েছে দেশের আরও অনেক এলাকায়।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘটনার আগের রাত আড়াইটা পর্যন্ত মন্দিরে পূজাসংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি ছিল। এরপর বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দুজন নারী ভক্ত মণ্ডপে এসে হনুমানের মূর্তিতে প্রথম কোরআন শরিফটি দেখতে পান।
রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে কোনো এক সময়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি কোরআন শরিফটি রেখে যান মণ্ডপে। এ সময় হনুমানের হাতের গদাটি সরিয়ে নেন তিনি। গদা হাতে তার চলে যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে ওই এলাকারই কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায়।
এ ধরনেরই একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এরইমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। এতে দেখা যায়, কোরআন শরিফটি রাখার পর হনুমানের মূতির গদা কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন প্রধান অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে সময়টি রাত তখন প্রায় ৩টা।
গদা কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাওয়া ইকবাল হোসেন কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে। নূর আলম পেশায় মাছ ব্যবসায়ী।
ইকবালের মা আমেনা বেগম জানান, তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ইকবাল সবার বড়। তিনি জানান, ইকবাল ১৫ বছর বয়স থেকেই নেশা করা শুরু করে। ১০ বছর আগে সে জেলার বরুড়া উপজেলায় বিয়ে করে। ওই ঘরে তার এক ছেলে রয়েছে, পাঁচ বছর আগে ইকবালের বিয়েবিচ্ছেদ হয়।
তারপর ইকবাল চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়া বাজার এলাকার কাদৈর গ্রামে আরেকটি বিয়ে করেন। এ সংসারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
আমেনা বেগম বলেন, ‘ইকবাল নেশা করে পরিবারের সদস্যদের উপর অত্যাচার করতো। বিভিন্ন সময় রাস্তাঘাটেও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ঘুরে বেড়াত।’
ইকবাল মাজারে মাজারে থাকতে ভালোবাসত জানিয়ে তার মা বলেন, ‘সে বিভিন্ন সময় আখাউড়া মাজারে যেত। কুমিল্লার বিভিন্ন মাজারেও তার যাতায়াত ছিল।’
কুমিল্লা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গত বুধবারের ওই ঘটনার পর গত এক সপ্তাহে ঢাকা ও কুমিল্লা পুলিশের কয়েকটি দল তদন্তে নামে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর ইকবাল হোসেনের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পুলিশ বলছে, ইকবাল হোসেন ভবঘুরে। তাঁর কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে কি না সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেছেন, আগামীকাল এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
আগামীনিউজ/শরিফ