ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ জেলার বিজয়নগর উপজেলায় গৃহবধূ মোছা. রিমা আক্তারকে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৩ আদালতে রিমার পিতা আব্দুল বাছির বাদি হয়ে রিমার স্বামী জুনাইদ মিয়াকে প্রধান আসামী করে ৪ জনের নাম উল্লেখ্য করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার অন্য আসামীরা হলেন, রিমার শ্বাশুড়ি মোছা. গুলচান বেগম, শ্বশুর শাহজাহান মিয়া ও ছোট ঝা মোছা. শারমিন আক্তার। বাদি ও বিবাদি সবাই উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামের বাসিন্দা।
মামলায় নিহত রিমার মরদেহ পুনঃময়নাতদন্তের আবেদন করা হয়েছে। আদালত মামলাটি সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে আদালতে এই মামলা দায়েরের পর মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য বাদীর পরিবারকে বিবাদিরা হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মামলার বাদী মো. আব্দুল বাছির এই মর্মে অভিযোগ করে বলেন, রিমাকে হত্যার পর ফাঁসি ঝুলে আত্মহত্যা করার মিথ্যা কথা রটিয়েছে তার স্বামী জুনাইদ মিয়া। এই হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত জুনাইদ মিয়াকে প্রধান আসামী দিয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ্য তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ্য করা হয়, ২০১৮ সালে ইছাপুরা গ্রামের আব্দুল বাছিরের মেয়ে রিমা আক্তারের সাথে দশ লক্ষ টাকার কাবিননামায় একই গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে জুনাইদ মিয়ার বিবাহ হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে যৌতুকের টাকার জন্য জুনাইদ প্রায়ই রিমাকে মারধর ও নির্যাতন করতো। রিমা সুখের কথা চিন্তা করে বাবার কাছ থেকে ওই সময় তিন লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দেন৷ তারপর রিমা একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন। কয়েকদিন যেতে না যেতে আবার জুনাইদ যৌতুকের টাকার জন্য রিমাকে অন্যায়ভাবে মারধর ও অত্যাচার শুরু করেন। জুনাইদ আরও পাঁচ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করেন। বাবার কাছ থেকে যৌতুকের টাকা দেয়নি বলে রোবরাত রাতে রিমাকে আবার মারধোর করেন। ওইদিন দিবাগত রাতে রিমার মুখে ও গলায় চেপে এবং বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে।
নিহতের বাবা আব্দুল বাছির বলেন, হত্যাকারীরা এলাকার কিছু সালিশকারক নিয়ে বিষয়টি রফাদফা করার চেষ্টা করছেন।
তিনি আরও জানান, হত্যা বিষয়টি স্বীকার করেছেন জুনাইদ মিয়ার বাবা শাহজাহান ও তার চাচা হাজী কাসম আলী। টাকা-পয়সা দিয়ে শেষ করার জন্য চেষ্টা করতেছে। এবিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে নিহতের পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তিনি মেয়ে হারিয়ে এখন জীবন শংকায় আছেন। মেয়ে হত্যার বিচারের জন্য বিজয়নগর থানায় মামলা করতে গিয়ে মামলা করতে পারেননি। এজন্য তিনি মেয়ে হত্যার বিচারের দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৩ আদালতে মামলা করেন।
ইছাপুরা গ্রামের মধ্যপাড়া ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার শাহজাহান মিয়া জানান, এটা পরিকল্পিত হত্যা। এ হত্যাটি আত্মহত্যা হতে পারেনা। তারা রিমাকে মেরে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। তারা নিহত পরিবারের হুমকিধামকি দিচ্ছে। যদি দ্রুত রিমার বিষয়টি সমাধান না করে তাহলে তারা হত্যার হুমকিও দিয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় থমথম পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷ রিমার সাথে যা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অন্যায় ছিল। তিনি হত্যাকারীদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি করেন।
গ্রামের সালিসকারক নজলু মিয়া বলেন, এর আগে তারা দুইজনকে হত্যা করেছে। এখন আবার আব্দুল বাছিরের মেয়েকে হত্যা করলো। এভাবে তারা একেরপর এক অন্যায় করে পাড় হয়ে যাচ্ছে। তারা এলাকায় মাদক ব্যবসা করলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আসামীদের আটকের ক্ষেত্রে পুলিশ নিরম রয়েছে। দ্রুত আসামীদের গ্রেফতার না করলে তারা মানববন্ধন থেকে শুরু করে সংবাদ সম্মেলন করার ইচ্ছে আছে।
এই বিষয়ে মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী তারিকুল ইসলাম খান রুমা জানান, বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্ত করে সিআইডিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দিয়েছেন।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা মুহাম্মদ হাসান জানান, রিমা নামের এক গৃহবধূ ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। এখনও ভিকটিমের পরিবারের কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। আমাদের কাছে আসলে অবশ্যই তাদের আইনী সহযোগিতা দেওয়া হবে। সেজন্য এখনো আমরা আসামীর বিরুদ্ধে কোন ধরনের এ্যাকশনে যায়তে পারিনি। পুলিশ জনগণের বন্ধু, বাদিকে আইনী সহযোগিতা প্রদান করা ও বিবাদীকে আইনী আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দিতে বাধ্য পুলিশ।
আগামীনিউজ/শরিফ