গাইবান্ধাঃ ক’দিন পরেই শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সে কারণে দম ফেলার ফুসরত নেই কারিগরদের। প্রতিমা তৈরির কাজে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। প্রতিমায় কাঁদা মাটির শেষ প্রলেপ দিয়েছে। এখন অপেক্ষায় প্রতিমার গায়ে রঙ তুলির আঁচড়ের।
গত কয়েকদিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা তৈরির এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। বাঁশ-কাঠ আর কাঁদা মাটি দিয়ে সেগুলো তৈরি করা হয়েছে। চলছে কাঁদা মাটির শেষ প্রলেপ। প্রতিমাগুলো দেখতে ভিড় জমিয়েছেন সনাতন ধর্মের লোকজন।
উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ভাটার পাড় নামক স্থানে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত প্রধান মৃৎশিল্পী (কারিগর) প্রদীপ কুমার বলেন, ‘দুই মাস আগে থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছি। দিন-রাত আরও পাঁচজন কারিগর সঙ্গে থেকে সহযোগিতা করছেন। এ পর্যন্ত ১১টি সেট প্রতিমা তৈরি করেছি। প্রতি সেটে দুর্গার সঙ্গে গনেশ, কার্তিক, অসুর, সিংহ, মহিষ, সরস্বতী ও লক্ষ্মী প্রতিমা আছে। বাহন হিসেবে আছে সর্প, হাঁস, ময়ুর, পেঁচা ও ইঁদুর। এখন বাঁশ, কাঠ, কাঁদা মাটিসহ প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অনেক বেশি। তাই খরচ বেড়েছে অনেক। বেশি লাভের আশা করি না। সেট প্রতি পাঁচ-দশ হাজার টাকা লাভে কাজগুলো করছি। এটি আমার দীর্ঘদিনের পেশা। অর্থ নয়, ভগবানের সন্তষ্টি লাভই প্রধান উদ্দেশ্য।’
ছাপড়হাটী ইউনিয়নের আরেক কারিগর বাবুল ভট্টাচার্য বলেন, ‘নদী থেকে কাদা মাটি কিনে এনে প্রতিমা তৈরি করতে হয়। এ ছাড়া কাঁঠ, সুতা, খড়, রং, কাপড় ও মুকুট লাগে এতে। একটি সেট তৈরি করতে সময় লাগে সপ্তাহ খানেক। সে হিসেবে তেমন একটা লাভ হচ্ছে না।’
জানা যায়, গত বছর উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় ১৩০ টি মন্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছে। এবার ১৫ টি বেড়ে ১৪৫ টি মন্ডপে এই পূজা হবে। এর মধ্যে পৌরসভায় ১১, বামনডাঙ্গায় ২৬, সোনারায়ে ১২, তারাপুরে ২২, বেলকায় ২, দহবন্দে ৮, সর্বানন্দে ৮, রামজীবনে ৯, ধোপাডাঙ্গায় ৩, ছাপড়হাটিতে ১১, শান্তিরামে ৯, কঞ্চিবাড়ীতে ১২, শ্রীপুরে ৫ ও চন্ডিপুর ইউনিয়নে ৭টি মন্ডপ। বাকী দুই ইউনিয়ন হরিপুর ও কাপাসিয়ায় কোনো পূজা মন্ডপ নেই।
রামধন সার্বজনীন কালি মন্দির পুজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি পরেশ চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘করোনার কারণে এবারের আয়োজন ছোট আকারে করা হয়েছে। তারপরেও প্রতিমা ক্রয়, আলোকসজ্জা, ডেকোরেটর, ঠাকুর ও পূজার অন্যান্য জিনিসপত্রসহ সবমিলে লক্ষাধিক টাকা খরচ হবে। সরকার যে বরাদ্দ তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।’
উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি প্রভাষক নিমাই ভট্রাচার্য সুন্দরগঞ্জবাসীকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘এ বছর দেবী দুর্গা আসবেন ঘোটকে করে। আর গমন করবেন দোলায় চড়ে। মায়ের আশীর্বাদে তুষ্ট হোক সারাদেশ। সেই সাথে বিশ্ববাসী হোক করোনা মুক্ত এ প্রত্যাশা মায়ের কাছে। তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে প্রতিটি মন্ডপে যেন স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত থাকে সেজন্য পূজা মন্ডপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনাও করা হয়েছে।’
থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. বুলবুল ইসলাম বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব উদ্যাপনে পুলিশ ব্যাপক তৎপর থাকবে। সেই সাথে পূজা মন্ডপগুলোর নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী নিয়োজিত থাকবে।’