যশোরঃ ১৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে ৭২ ঘণ্টা কর্মবিরতির আজ বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দিনে বেনাপোল থেকে সকল ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় বেনাপোল বন্দর এলাকায় সৃস্টি হয়েছে পণ্যজটের। যা পরবর্তীতে রুপ নিয়েছে যানজটের। তবে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে।
মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত এ কর্মবিরতির ডাক দেন বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান, প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশন। তারই সাথে একাত্নতা ঘোষনা করেন যশোর জেলা ট্রাক মালিক সমিতি, বেনাপোল ট্রাক মালিক সমিতি ও ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতি।
কয়েকটি ট্রাক বন্দর থেকে পণ্য লোড করে গন্তব্যে যেতে না পেরে বন্দর এলাকায় আটকা পড়েছে ট্রাক চালকেরা। কাজ করতে না পেরে অসহায় হয়ে পড়েছে দিন আনা দিন খাওয়া বন্দর শ্রমিকেরা। দ্রুত ধর্মঘট প্রত্যাহার চান তারা। এদিকে, দাবি না মানা পর্যন্ত এ কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন নেতারা। মাইকিং চলছে সংগঠনের পক্ষে।
বন্দর শ্রমিকরা বলেন, তারা বন্দরে কাজ করে সংসার চালায়। কিন্তু কর্মবিরতিতে বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাস না হওয়ায় কাজ হারিয়ে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। দ্রুত কর্মবিরতি প্রত্যাহার চেয়েছেন সাধারণ শ্রমিকেরা।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি এ কে এম আতিকুজ্জামান সনি ও সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দীন গাজী জানান, এ কর্মবিরতিকে সমর্থন জানিয়ে বেনাপোল বন্দর এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। কর্মবিরতির প্রথমদিনে মঙ্গলবার কোন পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য লোড করেনি বা বেনাপোল ছেড়ে যায়নি। আজ বুধবারও কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে।
কর্মবিরতি পালন করায় বন্দর থেকে কোন ট্রাক পণ্য লোড করবে না বা বেনাপোল থেকে কোন ট্রাক ছেড়ে যাবেনা বলে জানান বেনাপোল ট্রান্সপোট মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী। তিনি আরও জানান, মালিক সমিতির দেয়া ১৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে এ আন্দোলন চলবে।
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, শিল্প কলকারখানার কাঁচামাল, গার্মেন্টস ও খাদ্য দ্রব্য জাতীয় পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়ে থাকে। কিন্তু পরিবহন কর্মবিরতির কারণে ট্রাক চালকেরা এসব পণ্য নিয়ে গন্তব্যে যেতে পারছে না। এতে বন্দর এলাকায় প্রায় ৫ শতাধিক ট্রাক পণ্য নিয়ে আটকা পড়েছে। দ্রুত কর্মবিরতি প্রত্যাহার না হলে শিল্প কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হবে। এছাড়া আটকা পড়া পণ্যে বড় ধরনের লোকসানের কবলে পড়বেন ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, ট্রাক মালিক সমিতির ডাকা ৩ দিনের কমবিরতিতে বেনাপোল বন্দর থেকে কোন পণ্য লোড হচ্ছেনা। পণ্য লোড না হওয়ার কারনে বন্দর এলাকায় সৃস্টি হয়েছে পণ্যজটের। পণ্যজটের কারনে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। একদিকে রফতানি পণ্যবাহী ট্রাক জায়গা না থাকায় রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে, অন্যদিকে আমদানি পণ্য ঢুকছে। সব মিলে বেনাপোলে ব্যাপক যানজটের সৃস্টি হচ্ছে। সাধারন মানুষের চলাচলে ভাগান্তি বাড়ছে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল বলেন, কর্মবিরতিতে বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকলেও বন্দরের কার্যক্রম সচল রয়েছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সচল ও পাসপোর্টধারী যাত্রীরা দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করছে। তবে কর্মবিরতিতে ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহন করতে না পারাই বাণিজ্য কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
উল্লেখ্য অ্যাসোসিয়েশনের ১৫ দাবির মধ্যে রয়েছে, মোটরযান মালিকদের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এর ওপর চাপিয়ে দেওয়া বর্ধিত আয়কর অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। যেসব চালক ভারী মোটরযান চালাচ্ছে তাদের সবাইকে সহজ শর্তে এবং সরকারি ফি’র বিনিময়ে অবিলম্বে ভারী ড্রাইভার লাইসেন্স প্রদান করতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের নবায়ন ক্ষেত্রে পুনরায় হয়রানিমূলক ফিটনেস ও পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে।
এ ছাড়াও পণ্য পরিবহন খাতের ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান প্রাইমমুভার ট্রেলার পরিস্থিতি সরকার নিবন্ধিত শ্রমিক ইউনিয়নগুলো গঠনতন্ত্রসম্মত কল্যাণ তহবিল সংগ্রহের ওপর কোনো অজুহাতে বিধিনিষেধ আরোপ করা চলবে না। চট্রগ্রাম প্রাইমমুভার ট্রেইলার শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিস্ট্রার নম্বর ২০৮৮ চট্রগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সমীপে পেশ করা প্রস্তাব বা সুপারিশগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে বলে দাবি তাদের।