Dr. Neem on Daraz
Victory Day

পাহাড়ে মিষ্টি কুমড়া চাষে চাষীদের মুখে হাসি


আগামী নিউজ | উথোয়াইচিং মারমা; বান্দরবান প্রতিনিধিঃ প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১, ০২:২৫ পিএম
পাহাড়ে মিষ্টি কুমড়া চাষে চাষীদের  মুখে হাসি

ছবিঃ আগামী নিউজ

বান্দরবান: পার্বত্য জেলা বান্দরবানে পাহাড়ের ঢালুতে বিভিন্ন ফলজ বাগানের মাঝে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে সফলতা পেয়েছে পাহাড়ের চাষীরা। জুম পাহাড়ে জুমের পরিবর্তে বিভিন্ন ফলজ বাগানের পাশাপাশি একই স্থানে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে আর্থিকভাবে লাভের মুখ দেখছে পাহাড়ের জুম চাষিরা। চলতি বছর মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন হওয়ায় খুবই খুশি তারা।

উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া নানাবিধ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ আর খেতে সুস্বাদু, তাই এই সবজির চাহিদাও বাড়ছে বহুগুণে। দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় বলে স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে বছর জুড়ে জুমের মিষ্টি কুমড়া পাওয়া যায়। 

পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ম্রো সম্প্রদায়ের জনগণের জীবনধারণের প্রধান উৎস জুম চাষ হলেও বর্তমানে পাহাড়ের ঢালুতে মিশ্র ফলজ বাগানের পাশাপাশি একই জায়গায় মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছে। এতে আর্থিকভাবেও স্বচ্ছল হচ্ছেন।

এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বান্দরবানে ব্যাপকহারে মিষ্টি কুমড়ার ফলন ভালো হয়েছে। বান্দরবান সদরের টংকাবতী ইউনিয়ন এলাকার রামড়ী পাড়া, বাগান পাড়া, বসন্ত পাড়া, চিম্বুক, ওয়াইজংশন, এলাকা ছাড়াও রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলাগুলোতে ব্যাপক ফলন হয়েছে মিষ্টি কুমড়ার, আর বিক্রিত দামেও চাষিরা অনেক খুশি।

বান্দবান জেলা শহর হতে ১৬ মাইল বা রামরী পাড়া নামক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের ঢালুতে বিভিন্ন জুম পাহাড়ের ফলজ বাগানের সাথে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করছে। কৃষকরা ক্ষেত থেকে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করে  বিক্রির জন্য রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে জমিয়ে রাখছে। পরে পাইকারে ব্যবসায়ী এসে চাষীদের কাছ থেকে মিষ্টি কুমড়াগুলো ক্রয় করে গাড়ি যোগে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে।

বান্দরবান থানচি সড়কে ১৬ মাইল এলাকার টংকাবতি ইউনিয়ন ১নং ওর্য়াডের ইউপি সদস্য রেংরাও ম্রো বলেন, নিজের ৩ একর জায়গার পাহাড়ের ঢালুতে আম বাগানের পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। গত বছরের করোনায় লক ডাউনের সময়ে প্রতি মন ৩০০ -৪০০ টাকার মধ্যে ছিলো। যা ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হতে হয়েছে । কিন্তু এই বছর প্রতি মণে ৮০০ -৯০০ টাকায় বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পেরেছি।

তিনি আরো বলেন, গত বছর লকডাউনে বিক্রিও কম ছিল, অনেক লোকসান হয়েছিল এজন্য। তবে এবার যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকায় গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন দুর্গম পাড়ায় এসে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। ফলে বিক্রিও বেড়েছে মিষ্টি কুমড়ার।

একই এলাকার চাষী মেনয়ং ম্রো বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মিষ্টি কুমড়ার ফলন ভালো হয়েছে। এবারে বাগানের আম বিক্রি করে ক্ষতির দিকটা মিষ্টি কুমড়ার বিক্রি করে মোটামুটি পুষিয়ে নিতে পেরেছি। গত বছরে প্রতি মণ ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। তবে এই বছর প্রতি মণ ৮০০-৯০০ টাকা করে বিক্রি করতে পারছি। এতে আমি আর্থিক ভাবে কিছুটা হলেও স্বচ্ছল হতে পেরেছি।

এম্পু পাড়ার মেনসিং ম্রো বলেন, আমরা পাহাড়ে জুমের পরিবর্তে প্রতিবছর বেশিরভাগ এখন ফলজ বাগানের পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া চাষ করি। মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলনে বিক্রি করে অনেক লাভ হয়। আমরা আর্থিকভাবেও স্বচ্ছল হচ্ছি। গত বছর লকডাউনে বান্দরবানে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে ন্যায্য দাম না পেলেও এবার মনপ্রতি ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে চাষিরা। 

টংকাবতি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্লুকান ম্রো বলেন, এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও বাজারজাতকরণ সম্পর্কে চাষীরা কৃষি সর্ম্পকিত বিষয়ে অবগত হওয়ায় মাঝপথ থেকে সুযোগ করে নিতে পারছে না আর মধ্যস্থ ভোগীরা। ফলে উৎপাদিত ফসলের নায্যমূল্য পাচ্ছে চাষীরা। পাইকারি বিক্রেতারাও বান্দরবানের এ সুস্বাদু মিষ্টি কুমড়া পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে সরবরাহ করছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পাইকারি ব্যবসায়ী মোঃ হাফেজ বলেন,পাহাড়ে উৎপাদিত বেশিরভাগ ফল আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে ট্রাকে নিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করি। বান্দরবানের পাহাড়ের ঢালুতে চাষ করা মিষ্টি কুমড়ার স্বাদ ও সাইজ খুব ভালো, তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর চাহিদাও ব্যাপক। আমরা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বান্দরবানের বিভিন্ন পাড়া থেকে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করি। প্রতিবছর এ সময়টা আমরা এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ ও বিক্রি করার মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দিই।

বান্দরবান কৃষি বিভাগ সূত্র মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বান্দরবানে ২৪২ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হয়েছে ৪১৫৪ মেট্রিকটন। যার মধ্যে পাহাড়ের ঢালুতে জুম পাহাড়ে মিষ্টি কুমড়া চাষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে বান্দরবানে ২৪৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১২ মেট্রিকটন। গতবছরের  তুলনায় এ বছর চাষ বেড়েছে ৬ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের পরিমাণ ৩৫৮ মেট্টিকটন বৃদ্ধি পেয়েছে।
 
বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, বান্দরবানের মিষ্টি কুমড়া দিন দিন বিভিন্নস্থানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের নানা প্রান্তে সরবরাহ হচ্ছে এতে কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ী উভয়পক্ষই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। পাহাড়ের মাটি আর আবহাওয়া মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য উপযোগী, তাই দিন দিন পার্বত্য জেলা বান্দরবানে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ বাড়ছে এবং কৃষি বিভাগ এ আবাদে কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে।
 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে