Dr. Neem on Daraz
Victory Day
সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে 

বামনডাঙ্গা জমিদার বাড়ি হয়ে উঠেনি দর্শনীয় স্থান!


আগামী নিউজ | জাহিদ হাসান জীবন, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২১, ০৪:১৯ পিএম
বামনডাঙ্গা জমিদার বাড়ি হয়ে উঠেনি দর্শনীয় স্থান!

ফাইল ছবি

গাইবান্ধাঃ নেই জমিদার। নেই তাদের স্থাপনার ও কোন চিহ্ন। সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গার জমিদারবাড়ির নানা স্থাপনার কোনো চিহ্নই আর অবশিষ্ট নেই। তাই নতুন প্রজন্মের জন্য প্রবীণদের করা গল্পের খোরাকে পরিণত হয়েছে এর ইতিহাস-ঐতিহ্য। 

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নে ঐতিহাসিক এ জমিদারবাড়ির অবস্থান। বাড়িটিতে জমিদারের বসবাসের জন্য ছিল বাসগৃহ, অতিথিদের জন্য অতিথিশালা, রাজকার্য পরিচালনার জন্য রাজদরবার, ধর্মচর্চার জন্য ছিল দুর্গামন্দির, তিনটি পিরামিডসদৃশ মঠ, খাজনা আদায়ে ট্রেজারি, গো-শালা ও হাতি রাখার জন্য হাতিশালা। আর এসব স্থাপনা তৈরি হয়েছিল ইট, সুরকি ও লোহা দিয়ে। এ জমিদারবাড়িতে রয়েছে তিনটি দীঘি। একটি দীঘিতে সারারাত সোনার চালুনি ও আরেকটি দীঘিতে কালো পাথর ভেসে থাকত।

সরেজমিন দেখা যায়, বর্তমানে ঐতিহাসিক এ জমিদারবাড়িটির কোনো স্মৃতিচিহ্নই আর অবশিষ্ট নেই। অনেক আগেই বাসগৃহ, অতিথিশালা, রাজদরবার, দুর্গামন্দির, মঠ, ট্রেজারিসহ অন্য নিদর্শনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। সর্বশেষ ২০১০ সালে হাতিশালাটিও ভেঙে ফেলা হয়। আর এ হাতিশালা ভেঙে ফেলার মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক বামনডাঙ্গা জমিদারবাড়ির শেষ চিহ্নটুকুও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

বর্তমানে জমিদারবাড়ির জমিতে সর্বানন্দ ইউনিয়ন ভূমি অফিস, মসজিদ, প্রাথমিক স্কুল, দুটি আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও একটি বাজার রয়েছে। জমিদারদের সঙ্গে মিশতেন এমন শতবর্ষী প্রবীণ ব্যক্তি আবু বকর সিদ্দিক স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘জমিদার শরৎ রায় চৌধুরী, তার মেয়ে জমিদার সুমতি বালা চৌধুরী (সুনীতি), জমিদার বিপিন রায় চৌধুরী, তার দুই ছেলে জমিদার মনীন্দ্র রায় চৌধুরী ও জমিদার জগৎ রায় চৌধুরী সবারই জমিদারি আমি দেখছি। তারা হিন্দু হলেও আমাকে খুব স্নেহ করতেন, প্রজাদেরকেও ভালোবাসতেন।

এ জমিদারিবাড়ির গোড়াপত্তনের ইতিহাস সঠিক জানা না গেলেও জমিদার কৃষ্ণকান্ত রায় চৌধুরীই যে বামনডাঙ্গার প্রথম জমিদার ছিলেন এবং তিনিই এ জমিদারবাড়ির পত্তন করেছিলেন তা জানা যায় বিভিন্ন সূত্রে। জনশ্রুতি রয়েছে, গৌড় বংশীয় ব্রাহ্মণ কৃষ্ণকান্ত রায় চৌধুরী সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গায় বসতি স্থাপনের পাশাপাশি জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময়ে বামনডাঙ্গা জমিদারের সুনাম ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি প্রজাদের মনে সুখ ও শান্তি বিরাজমান থাকায় এলাকাটির নামকরণ হয়ে যায় সর্বানন্দ। 

বামনডাঙ্গা জমিদার পরিবারের অতীত বংশধরদের সঠিক নাম-পরিচয় না জানা গেলেও নবম কিংবা দশম বংশধরের নাম ব্রজেশ্বর রায় চৌধুরী। তিনি একসময় জমিদারি লাভ করেন। তার মৃত্যুর পর একমাত্র পুত্র নবীন চন্দ্র রায় চৌধুরী জমিদারি গ্রহণ করেন। মূলত তার জমিদারি আমলেই বামনডাঙ্গা জমিদারের খ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

নবীন চন্দ্র রায়ের দুই পুত্র শরৎ চন্দ্র রায় চৌধুরী ও বিপিন চন্দ্র রায় চৌধুরী। বাবা নবীন রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর শরৎ রায় চৌধুরী ও বিপিন রায় চৌধুরী বামনডাঙ্গার জমিদারি লাভ করেন।

দুই ভাই বামনডাঙ্গার জমিদারিকে দুভাগ করে পৃথকভাবে জমিদারি পরিচালনা করেন। জমিদার শরৎ চন্দ্র রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার একমাত্র মেয়ে সুনীতি বালা দেবী জমিদারি লাভ করেন। জমিদারি লাভের আগেই সুনীতি বালা দেবীর বিয়ে হয়েছিল দিনাজপুর জেলার ভাতুরিয়ার প্রিয়নাথ পাকড়াশীর সঙ্গে। হাতিতে চড়ে সুনীতি বালা দেবী শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে আসার সময় ১শটি হাতির বহর থাকত সঙ্গে।

অন্যদিকে জমিদার বিপিন চন্দ্র রায়ের মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র মনীন্দ্র চন্দ্র রায় চৌধুরী ও জগৎ চন্দ্র রায় চৌধুরী বাবা বিপিন চৌধুরীর জমিদারিকে দুভাগে ভাগ করে পৃথকভাবে জমিদারি পরিচালনা করেন। এর মধ্য দিয়ে বামনডাঙ্গার জমিদার বংশের জমিদারি মূলত তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তবে জমিদার মনীন্দ্র চন্দ্র রায় চৌধুরী ও জগৎ রায় চৌধুরী তাদের জমিদারি সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারলেও সুনীতি বালা দেবী তার জমিদারি সফলভাবে পরিচালনা করতে পারেননি। ফলে জমিদার সুনীতি বালা দেবী ব্রিটিশ সরকারকে খাজনা প্রদানে ব্যর্থ হন। ফলে ১৯৪৬ সালে সুনীতি বালা দেবীর জমিদারি নিলামে ওঠে এবং পূর্ণিয়ার মহারাজা কৃষাণ লাল সিংহ তা ক্রয় করেন। 

এদিকে দুই ভাই মনীন্দ্র চন্দ্র রায় চৌধুরী ও জগৎ রায় চৌধুরী সাফল্যের সঙ্গে জমিদারি চালাতে থাকেন। কিন্তু ভারতবর্ষ ভাগের পর ১৯৫০ সালে পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ) জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে ঐতিহ্যবাহী এ জমিদার বংশের জমিদারির যবনিকাপাত ঘটে। জমিদারি চলে যাওয়ার পর বড় ভাই জমিদার মনীন্দ্র রায় চৌধুরী ভারতের আসামে চলে যান ও ছোট ভাই জমিদার জগৎ চন্দ্র রায় চৌধুরী এ জমিদার বাড়িতেই থেকে যান।

তবে এ বাড়িতেই ১৯৬৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার মৃত্যু হয়। জমিদার জগৎ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুর পর জমিদারের বংশধররা পালাক্রমে ভারতে চলে যান। আর বাজেয়াপ্ত হয়ে যায় তাদের এইসব সম্পদ।


 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে