মানিকগঞ্জঃ জেলার ঘিওর-শ্যামগঞ্জ সড়কের কুস্তা এলাকায় গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ আর নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পরেছে।
এই সড়কটি দিয়ে মানিকগঞ্জের দুই উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতে প্রতিদিন পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।
দ্রুত সড়কটি মেরামত এবং ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় স্থায়ী সমাধান না করলে বন্ধ হয়ে যাবে এই সড়কটির যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেই সাথে আশেপাশের কমপক্ষে ২০টি পরিবারের ঘড়বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয়রা বলেন, ২০১৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় কুস্তা সড়কটির কয়েকটি স্থানে ধ্বসে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় ৫ শ মিটার পাকা সড়ক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঠিকাদারদের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ফেললেও কোন উপকারে আসেনি এলাকাবাসীর।
এ ছাড়াও জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করে কোনরকম পায়ে হেঁটে চলার উপযোগী করে তোলা হয়েছিল। এখন রাস্তার সে অংশটুকুও নদীগর্ভে।
গত বছর বর্ষা মৌসুমে ফের নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে এই সড়কের ২শ ৫০ মিটার। এরপর থেকেই সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় সব ধরনের যানবাহন দুই পাড়ে থাকতে বাধ্য হয়। ঐ ভাঙা স্থান দিয়ে পায়ে হেটে পাড় হয়ে যানবাহনে চড়তে হয় ৬ ইউনিয়নের মানুষের।
সড়কটি দিয়ে যাতায়াতকারী হাজারো পথযাত্রীর দুর্ভোগের সীমা নেই। কিন্তু এতদিনেও পুন:নির্মান কিংবা ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান না করায় প্রতিদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ পথে যাতায়াতকারীদের।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, জিও ব্যাগ ফেলাসহ লুপ কাটিংয়ের কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলে মানুষের ভোগান্তি নিরসন হবে দ্রুতই।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আল মামুন ট্রেডার্স পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর পুন:খনন প্রকল্পের ঘিওর উপজেলাধীন নদীর ৯.৫ থেকে ১১.২ কিলোমিটারের মধ্যে ০.৫০কিলোমিটার পুণ:খনন কাজ শেষ করে। যার চুক্তি মূল্য ছিল ১কোটি ৭৮ লক্ষ ১৮ হাজার ৫১ টাকা।
কাজটি সমাপ্ত হওয়ার আগেই নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে যেটুকু কাজ করা হয়েছিল, তাও নদীতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, ঘিওর উপজেলার ঘিওর, পয়লা এবং পাশ্ববর্তী দৌলতপুর উপজেলার জিয়নপুর, খলসি, চরকাটারী ও বাঘুটিয়া এই ৬ ইউনিয়নের মানুষজন এই রাস্তা ব্যবহার করে উপজেলা, জেলা এবং রাজধানীতে যায়।
২০১৪ সালের পর থেকে প্রতি বছরই ঘিওর-দৌলতপুর সড়কের কুস্তা গ্রামের কিছু অংশ ধলেশ্বরী নদীতে ধ্বসে যায়।
৭ বছরে পেরিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংস্কার না করায় এই দুই উপজেলার মধ্যকার সংযোগ সড়কটি বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। এ দুটি উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা কোন যান্ত্রিক যানবাহন ব্যবহার করতে না পারায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
মানিকগঞ্জ জেলা সদর ও রাজধানী ঢাকা যেতে একমাত্র সড়ক এটি। এ সড়ক দিয়ে কৃষকের উৎপাদিত কৃষি পণ্য হাট বাজারে নিতে এবং রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানোর কাজে বিঘ্ন হওয়ার পাশাপাশি কৃষকের অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে।
ঘিওর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ অহিদুল ইসলাম টুটুল জানান, এলজিইডির আওতায় ঘিওর- দৌলতপুর উপজেলার এ সড়কের কুস্তা এলাকায় সড়কের কয়েকটি স্থানে নদীতে বিলীন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলজিইডি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। প্রতি বছরই সংষ্কার ও ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও টেকসই ও স্থায়ী সমাধান আজো হয়নি। ৭ বছর ধরে দুই উপজেলার ৬টি গ্রামের গড়ে পনের থেকে বিশ হাজার পথচারি কষ্ট করলেও আমরা কিছুই করতে পারছি না। কোন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে হসপিটালে নেবার জন্য এম্বুলেন্সও আসে না এ সড়কে।
এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী নারচি গ্রামের মোঃ রিপন মিয়া বলেন, মানিকগঞ্জ থেকে ঘিওরে আসি। এরপর সিএনজি করে কুস্তা গ্রামের ভাঙার আগে নামি। পায়ে হেটে ভাঙা অংশ পার হওয়ার পর আবার সিএনজি করে গন্তব্য স্থলে যেতে হয়। কিন্তু চলতি বছরের ভাঙনে পুরো রাস্তাটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
কুস্তা গ্রামের বাসিন্দা শ্রমিকলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম রফিক জানান, ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি কলেজসহ ৬টি ইউনিয়নের অন্তত ৩০ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ মাথায় ভোগান্তি নিয়েই এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। অতিদ্রুত সমাধান না করলে এই রাস্তাটিসহ আশেপাশের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
ঘিওর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, এখানে স্থায়ী সমাধানের জন্য বড় প্রকল্পের মাধ্যমে ১কোটি ৭৮ লক্ষ টাকার কাজ চলাকালীন বর্ষার পানি আসায় কাজের বিঘ্ন ঘটে। বিষয়টি স্থানীয় এমপিসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী সাজ্জাকুর রহমান জানান, সড়কটি আমাদের হলেও ধলেশ্বরী নদীতে তা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীতে বাধ না দিলে কোনভাবেই সড়কটি রাখা সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ভাঙন রোধে তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে নদী পুনঃখনন কাজ করা হয়েছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি আর অবিরাম বর্ষণে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। জিও ব্যাগ ফেলাসহ লুপ কাটিংয়ের কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলে মানুষের ভোগান্তি নিরসন হবে। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে বড় প্রকল্পের বিকল্প নেই।