মানিকগঞ্জঃ জেলার হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ৪১নং সুতালড়ী রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার (৬ আগস্ট) দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিদ্যালয়টির এক-তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বিদ্যালয়টির সম্পূর্ণ অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৭ সালে বিদ্যালয়টি উপজেলার ধুলশুড়াতে স্থাপিত হয়। পরে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয়টি ২০০৭ সালে উপজেলার সুতালড়ী ইউনিয়নে স্থানান্তরিত হয়। পরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনর্বাসন/পুনঃনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৪৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট দুইতলা পাকা ভবন নির্মিত হয়। তখন নদীর সীমানা ছিলো বিদ্যালয় থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৬ জন।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রতিবছরের মতো এবছরও পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে প্রায় দুই মাস পূর্বে ভাঙন শুরু হয়। প্রথমে ভাঙনের তীব্রতা কম থাকলেও গত ১৫ দিন যাবত তা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙনের ফলে গত বুধবার (৪ আগস্ট) দিবাগত রাতে বিদ্যালয় ভবনের এক-তৃতীয়াংশ ভেঙে যায়। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বিদ্যালয় ভবনের সম্পূর্ণ অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত এক মাসে ওই এলাকার শতাধিক পরিবার নদীভাঙনে তাদের বসতভিটা হারিয়েছেন। ভাঙনের ভয়ে ঘরবাড়ি অন্যত্র স্থানান্তর করেছেন অনেকে। এছাড়াও, কৃষি জমি, বিভিন্ন ফলের বাগান ও স্থাপনাও নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
বালিয়াগোপা গ্রামের রব মোল্লা বলেন, দিন পনের আগেও বিদ্যালয় থেকে নদীর সীমানা ৫০-৬০ ফুট দূরে ছিলো। গত ১ তারিখ থেকে বিদ্যালয় ভাঙন রোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাতেও বিদ্যালয়টির শেষ রক্ষা হলোনা। তবে জিও ব্যাগ আরও কিছুদিন আগে ফেললে হয়তো বিদ্যালয়টি রক্ষা করা যেতো।
সুতালড়ী রামচন্দ্রপুর গ্রামের রুস্তম খাঁ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি কিছুদিন আগে বিদ্যালয়টি রক্ষার উদ্যোগ নিতো, তাহলে হয়তো বিদ্যালয়টি রক্ষা করা যেতো।
এদিকে বিদ্যালয়টির ভাঙনের খবর শুনে আজ শুক্রবার (৬ আগস্ট) সকালে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার অধিকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিনসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গতবছরেও সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে এসেছিলো। তখন প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে ছিলো পদ্মা। এবছর বিদ্যালয়টির কাছাকাছি যখন ভাঙন শুরু হয়েছে তখন উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে যে ব্যবস্থা (বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং) নেওয়া হয়েছে তা স্রোতের তুলনায় খুবই অপ্রতুল ছিলো। খুব দ্রুতই একটা জায়গা নির্ধারণ করে বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করবো।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, গতমাসের ২৫ বা ২৬ তারিখে আমি ভাঙনের বিষয়ে ইউএনও’র নিকট থেকে চিঠি পেয়েছি। চরাঞ্চল আমাদের কর্মপরিধির বাইরে। তারপরেও মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কথা বলে ১ তারিখ থেকে বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ২০০ মিটার অংশে প্রায় ৯ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে যেদিন চিঠি পেয়েছি, ওইদিনই আমি জেলা প্রশাসকসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি।