বরগুনাঃ কয়েকদিন পরেই করোনাকলীন ঈদুল আজহা। বরগুনার বেতাগীতে প্রতিবছর ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর মাংস কাটার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তৈরির কাজে কামার পল্লীতে দম ফেলার সময় থাকেনা। সারা বছর অলস সময় কাটাবার পর এ মৌসুমে বেশ ব্যস্ততা বেড়ে যেত কামার পাড়ায়। হাঁট-বাজারের খুচরা দোকানিদের জন্য লোহার অস্ত্রপাতি তৈরির পাশাপাশি কোরবানির উপযোগী দা-ছুরি বানানো এবং শান দিতে দিন-রাত কাজ করতেন কামাররা।
কিন্ত এ বছরে তার উল্টো চিত্র, লকডাউনের মধ্যে দোকান খুলতে না পারায় এত দিন অলস জীবন পার করেছে তারা। এখন এখানে নেই সেই চিরচেনা লোহা পেটানোর টুং টাং শব্দ। তবে ঈদ ঘনিয়ে আসায় দা, বটি ছোরা চাকুর চাহিদা বাড়ায় কিছুটা নড়ে চড়ে বসলেও তৃতীয় ধাপের সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে ঈদের আগে দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য হওয়ায় আনতে পারেনি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। মাঝে মাঝে ভয় ও শঙ্কার মধ্যে কেউ কেউ লুকিয়ে লূকিয়ে দোকান খূললেও, মানুষের চলাচল না থাকায় অর্ডার পায়নি তারা।
এবারে কোরবানিতে বেচাকেনা জমে না ওঠায় দুশ্চিন্তায় দিশেহারা তারা। এমনই একজন উপজেলার চান্দখালী বাজারের কামার সমীর কর্মকার বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে এ পেশার সাথে জড়িত। কিন্ত গত কোরবানির ঈদের মত এবারেও লকডাউনের কারণে তাদের ব্যবসার আসল মৌসুমে কাজ করতে না পারায় দুরাবস্থায় দিনতিপাত করছে। একই এলাকার দিপাঙ্কর কর্মকার, ধীরেন কর্মকার ও দিলীপ কর্মকার জানান, তারা সবাই সারা বছর বছরের এই সময়টায় অপেক্ষায় থাকেন। কিন্ত লকডাউনের কারণে ঈদের আগে দোকান খুলতে না পারায় কোন অর্ডার নিতে পারেননি। মানুষের চলাচল বন্ধ থাকায় সরঞ্জামদিও ক্রয় করে আনতে পারেনি।
তবুও এত দিন দোকান বন্ধ থাকার পর কোরবানির কারনে কিছুটা হলেও হঠাৎ করে কামারদের উপর চাপ বেড়েছে। রবিবার (১৮ জুলাই) পৌরশহরের কয়েকটি কামারশালা ঘুরে দেখা যায়, কেউ আসছেন কোরবানী করার অন্যতম অনুসঙ্গ ধারালো ডাসা, ছুরি, বটি, হাসুয়াসহ বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করতে। আবার কেউবা আসছেন এ সব সরঞ্জাম সান দিতে। এ বছরে উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ এ উপজেলায় ৬ হাজার পশু কোরবানির লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন।
পৌর শহরে কামারশালার কারিগর বিপুল কর্মকার জানান, ছোট ছুরি ২৫০ থেকে ৩শ, বড় ছুরি ৫শ থেকে ১ হাজার, মাংস কাটার ডাসা ২ হাজার টাকা দরে বানানো হচ্ছে। চামড়া ছিলা ও মাংস কাটার জন্য ছোট চাকু ৩০ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত, বটি ১৬০ টাকা থেকে ৫শ টাকা, বড় চাকু রয়েছে ৪ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। এছাড়াও পুরানো বটি, ছোট ছুরি ৬০ টাকা, ডাসা ও ছুরি ১৫০ টাকা করে ধার দেয়ার খরচ নেয়া হচ্ছে।
আরেক কামার ব্যবসায়ী অমল কর্মকার জানান, তাদের তৈরি যন্ত্রপাতি খুচরা ব্যবসায়ীরা এসে পাইকারি দরে কিনে নিয়ে যান। পরে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ও গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেন তারা। এছাড়া কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা শুধু ঈদের সময় এ ব্যবসা করে থাকেন। কয়লার দামও বেশি, লোহা ও ইস্পাতের মূল্য বৃদ্ধিতে অস্ত্র বানাতে খরচ বেশি হচ্ছে।
কামারশালায় মাংস কাটার ডাসা ও ছুরি বানাতে আসা আব্দুস সোবাহান জানান, এ বছর গরু জবাইয়ের সরঞ্জামের মূল্য সহনীয় পর্যায় নেই। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে দা-ছুরি। গত বছর যে ডাসা বানানো খরচ হতো ১ হাজার টাঁকা সেটা বানাতে এখন খরচ হচ্ছে ২ হাজার টাকা।
বেতাগী পৌরসভার মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকার তরুন কামার মাখন কর্মকার বলেন, সারা বছর এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। কিন্ত মহামারী করেনার জন্য এবার বেচা বিক্রি কম। তবুও আশা করছি দিন যত ঘনিয়ে আসবে বেচা বিক্রি ততটা বাড়লে কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।